চট্টগ্রাম বিভাগের দর্শনীয় স্থান

সাকা হাফং পর্বত

Loading

সাকা হাফং

সাকা হাফং (Saka Haphong) বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্বত শৃঙ্গ। এই পর্বত দেখতে খুবই সুন্দর। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে বিমোহিত করবে। অফিসিয়াল স্বীকৃতি না পাইলেও, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তত্ত্ব থেকে এটা নিশ্চিৎ করে বলা যায়, সাকা হাফং দেশের সব থেকে উচ্চ পর্বত শৃঙ্গ।

সাকা হাফং কোথায় অবস্থিত

সাকা হাফং পর্বত বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলায় বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। এর উচ্চতা প্রায় ১,০৬৪ মিটার বা ৩,৪৮৮ ফুট। যা বাংলাদেশের স্বীকৃত সর্বোচ্চ চূড়া কেওক্রাডং (৩,১৭২ ফুট) এর উচ্চতার চেয়ে বেশি। এটি সাকা হাফং, মদক তং বা মোদক তুয়াং নামেও পরিচিত।

প্রথম সাকা হাফং পর্বত আরোহী

২০০৬ সালে জিং ফুলেন নামে একজন ইংরেজ আরোহী সর্বপ্রথম সাকা হাফং পর্বতটিতে আরোহন করেন। তখন তিনি এর উচ্চতা পরিমাপ করেছিলেন ১০৬৪ মিটার বা ৩,৪৯০ ফুট। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে “ত্লাংময়” নামের এক দল ২০০৭ সালে এই পর্বত আরোহন করেন। তখন থেকে এই পর্বতটি ত্লাংময় নামে পরিচিত হতে থাকে। পরবর্তীতে সাকা হাফং নামের একটি দল ২০১১ সালে এই পর্বত আরোহন করেন। তখন থেকে এটিকে সাকা হাফং নামে ডাকা হতে থাকে। তখন উনারা এই পর্বতের উচ্চতা পরিমাপ করেন ৩৪৮৮ ফুট।

সাকা হাফং পর্বত কিভাবে যাবেন

সাকা হাফং যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই আসতে হবে বান্দরবান জেলায়। রাজধানী ঢাকার কলাবাগান, আরামবাগ থেকে শ্যামলী, হানিফ, সেন্টমার্টিন, দেশ ইত্যাদি পরিবহন কোম্পনীর এসি, নন-এসি, হুন্দাই বাস প্রতিদিন বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ঢাকায় ফিরে আসে। জনপ্রতি বাস ভাড়া নন-এসি ৫৫০-৭৫০, এসি ১২০০-১৫০০ টাকা। রাতের বাসে রওনা দিলে সকাল ৭ টার মধ্যে চলে আসবেন বান্দরবান।

এছাড়া ট্রেন বা প্লেনে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসে, চট্টগ্রাম থেকে বাস, প্রাইভেট কার নিয়ে বান্দরবান আসতে পারেন। বদ্দারহাট, ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ২২০ টাকা। মাইক্রোবাস ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা।

বান্দরবান থেকে তিন ভাবে সাকা হাফং যাওয়া যায়।

রেমাক্রি হয়ে

  • নাফা খুম -> দুলা পাড়া -> সাজাই পাড়া -> নেফিউ পাড়া সামিট
  • নাফা খুম -> জিন্না পাড়া -> অমিয়াখুম -> সাজাই পাড়া -> সামিট
  • নাফা খুম -> জিন্না পাড়া -> অমিয়াখুম -> সাতভাই খুম -> হান্জরাই পাড়া -> সামিট

থানচি হয়ে

  • থানচি -> বোর্ডিং পাড়া -> শেরকর পাড়া -> তাজিংডং -> সিম্পাম্পি পাড়া -> হান্জরাই পাড়া -> নেফিউ পাড়া -> সামিট
  • থানচি -> বোর্ডিং পাড়া -> জিরি পথে কাইতং পাড়া -> জিরি ধরে আগানো -> সিম্পাম্পি পাড়া উঠা –> হান্জরাই পাড়া -> নেফিউ পাড়া -> সামিট

রুমা হয়ে

  • বগা লেক -> কেওক্রাডং -> থাইক্যাং পাড়া -> ( নতুন বোম পাড়া হয়ে ) দুলাচরণ পাড়া -> হান্জরাই পাড়া -> নিফিউ পাড়া -> সামিট
  • বগা লেক -> কেওক্রাডং -> থাইক্যাং পাড়া না ঢুকে কবরস্হান থেকে ডানে মোড় নিয়ে তাম্ল পাড়ার নীচ দিয়ে রেমাক্রি খাল -> নতুন বোম পাড়া -> খাল ধরে দুলাচরণ পাড়া -> এরপর নেফিউ পাড়া -> সামিট
  • বগা লেক -> কেওক্রাডং -> বাকলাই -> সিম্পাম্পি -> ( তাজিংডং সামিট বাড়তি) তারপর রেমাক্রি খাল নেমে হান্জরাই -> নেফিউ -> সামিট

কোথায় থাকবেন

রুমা, থানচি, রেমাক্রির পর থাকার জন্য আর তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নাই। আদিবাসীদের ঘরই একমাত্র ভরসা। আদিবাসীদের ঘরে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থা আছে। সব ব্যাপারে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে বিভিন্ন পাড়া সামনে পাবেন। সাধারণত এই পাড়া গুলোতেই সবাই রাত্রি যাপন করে। আর এগুলো নিরাপদ। এছাড়া ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে সাথে তাবু নিয়ে যেতে হবে।

কোথায় খাবেন

রুমা, থানচির পর এই লম্বা যাত্রা পথে আদিবাসীদের ঘরেই আপনাকে খাবার খেতে হবে। আদিবাসীদের ঘরে পর্যটকদের জন্য খাবারের ভালো ব্যবস্থা আছে। ভাত, সবজি, ডাল, আলু ভর্তা, মুরগির মাংস ইত্যাদি মেনু তে থাকে। কি খাবেন তা গাইড কে বলে রাখলে উনি সব ব্যবস্থা করে রাখবেন। তবে সাথে হালকা শুকনা খাবার যেমন, খেজুর, বিস্কুট, চকলেট চিড়া, মুড়ি, ফল ইত্যাদি নিয়ে যেতে পারেন।

এছাড়া বিভিন্ন পাড়ায় কিছু মুদি দোকান পাবেন। সেখানে কোক, বিস্কুট, মিনারেল পানি ইত্যাদি পাওয়া যায়। পাহাড়ি ফল পাওয়া যায়। খেতে পারেন। পুরো যাত্রা পথে আপনাকে কঠিক পরিশ্রমের ট্রেকিং করতে হবে। তাই শরীরে এনার্জি দরকার আছে।

সতর্কতা এবং টিপস

  • অতিরিক্ত খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
  • ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
  • কাঁধের ব্যাগ নিবেন। আর ব্যাগের ওজন যাতে কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
  • সাথে অনেক প্যাকেট খাবার সেলাইন, দরকারি ঔষধ, ম্যালেরিয়া প্ররোধক রাখবেন।
  • প্রয়োজনীয় পানি, শুকনা খাবার সাথে রাখুন।
  • সাথে একটা ভাল টর্চ-লাইট, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক রাখুন।
  • ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটা ভাল দড়ি এবং পানি থেকে ব্যাগের সবকিছু বাঁচিয়ে রাখার জন্য পর্যাপ্ত পলিথিন ব্যাগ রাখুন।
  • ছোট একটা ছুড়ি, আগুন জ্বালানোর সরঞ্জাম সাথে রাখুন।
  • সম্ভব হলে এর আগে আরোহন করেছে এমন কাউকে টিমে রাখুন।
  • অবশ্যই সাথে গাইড নিয়ে যাবেন।
4.2 6 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
1 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

1
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx