আমার ৩ রাত ৩ জায়গায় ক্যাম্পিংয়ের আজ ২য় দিন। আজ বলব মারায়ংতং অভিযান নিয়ে। সকালবেলায় কুতুবদিয়া ক্যাম্পিং শেষ করে যখন রওনা দিয় তখন মুষলধারে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে, আমরা কুতুবদিয়া থেকে মগনামা আসার ট্রলারে ৪০ মিনিট ভিজেছি। অন্যদিকে সোনাদিয়া খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ওখানেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমাদের আজকের ক্যাম্পিং কিছুটা পরিবর্তন করে মারায়াংতাং পাহাড়ের চূড়ায় করার স্বীদ্ধান্ত নিলাম।
মারায়ংতং ক্যাম্পিং এ বাধা
যেই কথা সেই কাজ মগনামা থেকে চকরিয়া হয়ে আলীকদম(আবাসিক) যখন পৌঁছি, সময় তখন দুপুর ১.৩০ টা৷ বৃষ্টি কিছুটা কমে ঝির ঝির করে ঝরছে। একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে যখন মারাংতাং চূড়ায় ক্যাম্পিংয়ের জন্য রওনা দিলাম, তখন একজন জানালো স্থানীয় প্রশাসনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞার কারণে আপাতত ক্যাম্পিং করা যাবে না।
তাই মারায়ংতং অভিযান
তাই প্রশাসনের স্বীদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সবকিছু একটি দোকানে রেখে আমরা ৪ জন রওনা দিলাম মারায়াংতাং পাহাড়ের চূড়ার অভিযানে। মারায়াংতং বা মারায়তং জাদি পাহাড় বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ট হতে প্রায় ৪৪০ মিটার বা ১৪৪০ ফিট।
সময় এখন দুপুর ২.৪০। হাঁটা শুরু করে মারাংতাং চূড়ায় রওনা হওয়ার সময় ২০ মিনিট হাঁটার পর ছোট্ট একটি গ্রাম আছে পাহাড়ের পাদদেশে। এই স্থানটি আমার কাছে খুবই সুন্দর লেগেছে। ছবির মতো একটি গ্রাম, শিল্পীর তুলিতে আকাঁ কোন ছবি। দাঁড়িয়ে উপভোগ করলাম কিছুক্ষণ, তারপর আবার হাঁটা শুরু।
হালকা বৃষ্টিতে আবহাওয়া টা কেমন জানি শীতল হয়ে আছে, অন্যদিকে বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ি পথও খুবই পিচ্ছিল হয়ে গেছে। সাবধানে পা ফেলে চলতে হচ্ছে। প্রায় ৪০ মিনিট হাঁটার পর একটি শত পুরনো বিশাল বট গাছের সাথে সাক্ষাৎ হলো, কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলাম।
মারায়ংতং পাহাড়ের চূড়ায়
আবার হাঁটতে লাগলাম স্নিগ্ধময় পথ ধরে এবং ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের মধ্যে আমরা চূড়ায় পৌঁছে গেলাম। এখানে বলে রাখা ভালো আমি ট্রেকিং করি বিদায় সময় কম লেগেছে, যারা নতুন তাদের ২ ঘন্টার কাছাকাছি সময় লাগতে পারে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যা যা মনে হলো তেমন আহামরি পাহাড় নয় এটি, যারা সাফা হাফং বা কেওক্রাডং অভিযানে গিয়েছেন তাদের কাছে কিছুই মনে হবে না।
তবে হ্যা এই পাহাড়ের চূড়া থেকে সাঙ্গু নদীর বাঁক নেওয়াটা খুবই উপভোগ্য, অর্থাৎ মহিষের শিং এর মত দেখায় সাঙ্গু নদী। তাছাড়া পাহাড়িদের জুম চাষ, ২ টি উপজাতিয় মূর্তি ও মেঘের লুকোচুরি খেলা আপনাকে আন্দোলিত করবে। তবে ক্যাম্পিংয়ের জন্য অসাধারণ জায়গা এটি। পাহাড়ের চূড়ায় ঝুম বৃষ্টি উপভোগ করলাম কিছুক্ষণ। তারপর ভাবতে লাগলাম ।
কোন পাহাড়ে দিনের বেলাতেও ভয় হয়,
কোন পাহাড়ে থাকে ভয়ংকর সব প্রাণী,
কোন জায়গাটিতে মধু পূর্নিমায় পরীদের মেলা হয়
কোন পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে তাকালে,
তিন-তিনটি রংধনু দেখা যায়
কোন পাহাড়ের গা ছুয়ে যায় মেঘ.
মাঝে মাঝে মনে হয়,
ঐ পাহাড় থেকেই মেঘেদের প্রকাশ,
হয়ত ভাবচ আমি এত সব জানি কিভাবে?
কারন আমার সাতে পাহাড়ের বন্ধুত্বটা জমে উঠেছে।
তাই তো বলি একটি পাহাড় কিনব।
মারায়ংতং অভিযান শেষে
প্রায় ১.৩০ ঘন্টা এই মারাংতাং চূড়ায় অবস্থান করে নিচে নামতে শুরু করলাম। আপনারা হয়তো সবাই জানেন পাহাড়ে উঠতে যতটা কষ্ট, নিচে নামতে ততটা নয়। অর্থাৎ খুব সহজেই পায়ের ভারসাম্য ধরে রেখে নিচে নামতে পারবেন, এবং আমরা ৪৫ মিনিটে নিচে নেমে আসলাম।
সময় এখন সন্ধ্যা ৬.৩০ টা। আজকের মারাংতাং পাহাড় অভিযান এখানেই শেষ করতে হবে, কিন্তু আমাদের যে আরো ১ রাত ক্যাম্পিং করতে হবে বৃষ্টি কি তা হতে দিবে ৫০%-৫০% সম্ভাবনা নিয়ে রাতেই আলীকদম থেকে কক্সবাজার চলে আসলাম, যদি সকালে আকাশ পরিষ্কার হয় তাহলে সোনাদিয়া যাবোই যাবো। আর সেই অনন্যসাধারণ কাহিনী নিয়ে হাজির হচ্ছি খুব শীগ্রই।
সারাংশ
- ভ্রমণ তারিখঃ ২৫/০৮/২০২০ইং
- আজকের খরচঃ ৯০০ টাকা