মারায়াংতাং অভিযান শেষ করেই রাতে কক্সবাজার পৌঁছে ঘুম দিলাম, শরীর খুবই ক্লান্ত ছিল। কারণ আমার পরপর ৩ দিন ৩ জায়গায় ক্যাম্পিংয়ের এক্সট্রিম এডভেঞ্চারের আজ ২য় দিন শেষ করলাম। অন্যদিকে এই দুই দিন প্রায় সারাবেলায় কোথাও না কোথাও ভিজতে হয়েছে শরতের বৃষ্টিতে। যাইহোক সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে, অর্থাৎ বৃষ্টি থেমেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং করবো।
সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং
যেই কথা সেই কাজ কক্সবাজার হতে স্পিড বোটে মহেশখালী ঘাটে পৌঁছে ওখান থেকে অটো নিয়ে ঘটিভাঙ্গা যখন পৌঁছায় তখন সময় দুপুর ১২ টা। আকাশে মেঘ জমেছে আবারো, বৃষ্টি হবে হবে ভাব। সোনাদিয়ার পশ্চিম পাড়ার বোটে উঠলাম দুপুর ১ টায়, বোট চালু হতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।
বৃষ্টি থেকে কোনভাবেই বাঁচার উপায় না পেয়ে ভিজতে শুরু করলাম। এই নদী পথটা অনেকটা সুন্দরবনের মত, সবুজ প্যারাবনের মাঝে বোটের বয়ে চলা। সুন্দরবনে যেমন বাঘ/হরিণ দেখা যায়, এখানে মহিষ দেখতে পারবেন। প্রায় ৪০ মিনিটের বোট ভ্রমণ শেষে যখন পশ্চিম পাড়ায় পৌঁছি তখন বৃষ্টির মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
একটি দোকানে আশ্রয় নিলাম। বৃষ্টি হালকা থামলে সোনাদিয়ার স্থানীয় গাইডের বাসায় গিয়ে কাপড় পরিষ্কার করে নিলাম এবং দুপুরের খাবার খেলাম। সময় এখন বিকেল ৪ টা, বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে আকাশ নীল হয়ে গেল। মনের মধ্যে খুশি খেলে গেলো, আজ চাঁদনী রাতে বহুল প্রতিক্ষীত সোনাদিয়া সৈকতে ক্যাম্পিং করা যাবে।
সোনাদিয়া সমুদ্র সৈকত
আর দেরি না করে সৈকতে গিয়ে আমাদের তাঁবু তৈরি করে ফেললাম। এই সৈকত টা খুবই নির্জন, পরিষ্কার ও লাল কাঁকড়ায় ভরপুর৷ বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যাম্পিংয়ের হট স্পষ্ট এই সোনাদিয়া সৈকত। সন্ধ্যায় তাঁবুতে বসে গোধুলীর সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম প্রাণভরে।
কিছু মুহুর্তের জন্য মনে হবে এই সৈকতের মালিক আপনি, অর্থাৎ আপনি বা আমরা ছাড়া এখানে আর কেউ নেই। কোলাহলমুক্ত, নির্জন ও চমৎকার এক সমুদ্র সৈকত। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো, আড্ডা দিতে লাগলাম আমরা ৪ জন। সবার ভ্রমণ অবিজ্ঞতা শেয়ার করতে লাগলাম।
রাত ৯ টায় গাইডের বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে আসলাম। চাঁদ তার বহুল প্রতিক্ষীত জ্যোৎস্না ছড়াতে লাগলো আর তারারা ঝিলমিল করে জ্বলতে আরম্ভ করলো। রাতের শান্ত-স্নিগ্ধ সৈকতে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম। রাত ১২ টায় যখন তাঁবুতে শুতে আসলাম তখন গুনগুনিয়ে গাইছি
আমি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া,
জোছনা ধরতে যাই।
হাত ভর্তি চাঁদের আলো,
ধরতে গেলে নাই।
বাহ কি চমৎকার তাই না আবার কবিতা আবৃত্তি হলো এভাবেই
হাজার বছর ধ’রে আমি –
পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে –
নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি;
বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি;
আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক,
চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো –
নাটোরের বনলতা সেন।
আর কি লাগে আপনার রাতটি স্বরণীয় করে রাখার জন্য কখন যে আকাশের চাঁদ, তারা, ঢেউয়ের গর্জন শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম টেরই পেলাম না। যখন ঘুম ভাংলো তখন সতেজ – নির্মল বায়ু তাঁবুর ভিতর শু শু করে বইছে। অর্থাৎ সকাল হলো বুঝি।
সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং শেষে
এই দিনটি ও এখানে থাকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় চলে আসতে হলো অসাধারণ কিছু মুহূর্ত নিয়ে, যেগুলো আমার ভ্রমণ ডায়েরিতে অক্ষত হয়ে থাকবে আজীবন।
এই সোনাদিয়া ক্যাম্পিংয়ের মধ্য দিয়েই আমার বহুল আলোচিত ও রোমাঞ্চিত ৩ দিন ৩ জায়গায় (কুতুবদিয়া ক্যাম্পিং, মারায়ংতং ক্যাম্পিং, সোনাদিয়া ক্যাম্পিং) ক্যাম্পিংয়ের এক্সট্রিম এডভেঞ্চার এখানেই শেষ হলো। পরবর্তীতে হয়ত অন্য কোন নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আপনাদের সামনে আবারো হাজির হবো। ভালবাসুন নিজেকে
- ভ্রমণ তারিখঃ ২৬/০৮/২০২০ইং
- আজকের খরচঃ ১০৪০ টাকা