উঁচু উঁচু সবুজ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি সহস্রধারা লেক। আর এই লেকের পানির উৎস সহস্রধারা ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটি বেশ উঁচু এবং সুন্দর। দেশের অন্যান্য ঝর্ণা থেকে এখানে আসার রাস্তা বেশ সহজ। তাইতো প্রকৃতি প্রেমীরা এখানে ছুটে আসে বার বার।
সহস্রধারা ২ ঝর্ণা কোথায় অবস্থিত
সহস্রধারা ২ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ছোট দারোগারহাট বাজারের কাছে সহস্রধারা সেচ প্রকল্পের ভিতরে এর অবস্থান। সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের ভিতরে সহস্রধারা-১ নামে আরেকটি ঝর্ণা থাকলেও মূল সহস্রধারা ঝর্ণা বলতে সহস্রধারা-২ ঝর্নাকেই বুঝায়।
সহস্রধারা ২ ঝর্ণা কিভাবে যাবেন
সহস্রধারা ২ ঝর্ণা যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস যায় চট্টগ্রাম। যে কোনো একটায় উঠে সীতাকুন্ড বাজারে নেমে যাবেন। ভাড়া নিবে নন এসি ৪৮০ টাকা, এসি ৮০০/১১০০ টাকা। তবে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনি সীতাকুন্ড বাজারে নামবেন।
এছাড়া বাস বা ট্রেনে ফেনী এসে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে উঠে চলে আসবেন সীতাকুন্ড বাজার। ভাড়া ৫০/৮০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকেও আসতে পারেন সীতাকুন্ড। চট্টগ্রামের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে ফেনী গামী বাসে আসতে পারেন সীতাকুন্ড। ভাড়া ৪০/৮০ টাকা। এছাড়া সিএনজি, প্রাইভেট কার রিজার্ভ করেও আসতে পারেন। সিএনজি ভাড়া ২৫০/৩০০ টাকা।
ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড আসতে বাসে যে ভাড়া নিবে, সীতাকুন্ড থেকে ঢাকা যেতে তার থেকে কম ভাড়া নিবে। যদিও বাস একই কোম্পানির হয়। কিছু কোম্পানির বাস ঢাকার উত্তরা এবং গাবতলী পর্যন্ত আসে। তাই আপনার বাসার কাছাকাছি আসে এমন বাসের টিকেট কাটতে পারেন।
সীতাকুন্ড থেকে সহস্রধারা ২ ঝর্ণা
সীতাকুন্ড বাজার থেকে সিএনজি ভাড়া করে চলে যাবেন সহস্রধারা ২ ঝর্ণা। সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা। সিএনজি সহস্রধারা সেচ প্রকল্পের কাছে নামিয়ে দিবে। সিএনজি থেকে নেমে বাকি পথ হেটে যেতে হবে। পায়ে হেটে সহস্রধারা সেচ প্রকল্পের ভিতরে সহস্রধারা লেক পর্যন্ত আসতে ২০/২৫ মিনিট সময় লাগবে।
লেকে এসে জনপ্রতি ৬০ টাকা ভাড়া দিয়ে, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লেক পার হয়ে পৌঁছে যাবেন সহস্রধারা ঝর্ণা। একই নৌকা আবার আপনাকে ফিরিয়ে আনবে। আসা-যাওয়ার ভাড়া ৬০ টাকা। ফেরার পথে সহস্রধারা সেচ প্রকল্পের সুইচ গেটে এসে ছবি তুলতে পারেন। লেক অনেক গভীর। তাই সাঁতার না জানলে লেকের পানিতে নামা উচিৎ নয়।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। তার মধ্যে সাইমুন, সৌদিয়া অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় থাকতে পারেন। অথবা চট্টগ্রাম এসেও থাকতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের হোটেল আছে।
কোথায় খাবেন
সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। তার মধ্যে সৌদিয়া, আপন, আল আমিন অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় খেতে পারেন। তার মধ্যে আল আমিন রেস্টুরেন্ট এর খাবার সব থেকে ভাল মানের। অথবা চট্টগ্রাম এসেও খেতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের রেস্টুরেন্ট আছে।
সীতাকুন্ডের দর্শনীয় স্থান
সীতাকুণ্ডে বেশি কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। সব গুলো মোটামোটি কাছাকাছি হওয়াতে এক দিনে বেশ কয়েকটা কভার করা যায়। তবে এক রাত দুই দিন সময় নিয়ে আসলে প্রায় সব গুলো কভার করতে পারবেন। আপনার সময় বিবেচনা করে ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই করবেন। সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো হলো:
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- কমলদহ ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- গুলিয়াখালি বীচ
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
সতর্কতা এবং টিপস
- অতিরিক্ত খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
- কাঁধের ব্যাগ নিবেন। আর ব্যাগের ওজন যাতে কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- জোকের প্রাদুর্ভাব আছে। তাই ঘাস এড়িয়ে চলুন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।