সমুদ্রের ভিতর পর্যন্ত দীর্ঘ লোহার ব্রীজ, ঝাউগাছের সারি, খেলামেলা নির্মল পরিবেশ, জেগে ওঠা সবুজ ঘাসের চর, সব মিলিয়ে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত (Bashbaria Sea Beach) যেন অপূর্ব সুন্দর। এখানকার সব থেকে আকর্ষণীয় দৃশ্য হচ্ছে ঝাউবনে বসে সূর্যাস্ত দেখা।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে ২ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।
বাঁশবাড়িয়া সৈকতে কি করবেন
এখানে সমুদ্রের মধ্যে প্রায় হাফ কিলোমিটার লোহার ব্রিজ বানানো আছে। জোয়ারের সময় ব্রিজটি ডুবে যায়। ব্রিজের উপর দিয়ে হাঁটার সময় পানির ধাক্কা এসে পায়ে লাগে। এই লোহার ব্রিজই বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখতে দারুন লাগে। ইচ্ছে করলে স্পিড বোটে ঘুরে বেড়াতে পারেন। শীতকালে গেলে খেজুরের রস খেতে পারেন।
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত কিভাবে যাবেন
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস যায় চট্টগ্রাম। যে কোনো একটায় উঠে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া বাজারে নেমে যাবেন। ভাড়া নিবে নন এসি ৪৮০ টাকা, এসি ৮০০/১১০০ টাকা। তবে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনি সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া বাজারে নামবেন।
এছাড়া বাস বা ট্রেনে ফেনী এসে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে উঠে চলে আসবেন সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া বাজার। ভাড়া ৭০/৮০ টাকা। সময় নিবে ১ ঘন্টা।
চট্টগ্রাম থেকেও আসতে পারেন বাঁশবাড়িয়া। চট্টগ্রামের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে ফেনী গামী বাসে আসতে পারেন বাঁশবাড়িয়া। ভাড়া ৪০/৮০ টাকা। এছাড়া সিএনজি, প্রাইভেট কার রিজার্ভ করেও আসতে পারেন। সিএনজি ভাড়া ২৫০/৩০০ টাকা।
ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া আসতে বাসে যে ভাড়া নিবে, বাঁশবাড়িয়া থেকে ঢাকা যেতে তার থেকে কম ভাড়া নিবে। যদিও বাস একই কোম্পানির হয়। কিছু কোম্পানির বাস ঢাকার উত্তরা এবং গাবতলী পর্যন্ত আসে। তাই আপনার বাসার কাছাকাছি আসে এমন বাসের টিকেট কাটতে পারেন।
বাঁশবাড়িয়া থেকে সমুদ্র সৈকত
বাঁশবাড়িয়া বাজার থেকে সিএনজি ভাড়া করে চলে যাবেন বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। রিজার্ভ ভাড়া ৩০০ টাকা। অনেক সময় সন্ধ্যার পর সিএনজি পাওয়া যায় না। তাই সময়ের দিকটা একটু খেয়াল রাখবেন। অথবা ড্রাইভারের ফোন নাম্বার নিয়ে রাখবেন।
কোথায় খাবেন
বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত এ খাবারের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নাই। কেবল মাত্র কিছু মুদি দোকান আছে। খেতে হলে সীতাকুন্ড এসে খেতে হবে। সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। তার মধ্যে সৌদিয়া, আপন, আল আমিন অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় খেতে পারেন। তার মধ্যে আল আমিন রেস্টুরেন্ট এর খাবার সব থেকে ভাল মানের। অথবা চট্টগ্রাম এসেও খেতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের রেস্টুরেন্ট আছে।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। তার মধ্যে সাইমুন, সৌদিয়া অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় থাকতে পারেন। অথবা চট্টগ্রাম এসেও থাকতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের হোটেল আছে।
সীতাকুন্ডের দর্শনীয় স্থান
সীতাকুণ্ডে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। সব গুলো মোটামোটি কাছাকাছি হওয়াতে এক দিনে বেশ কয়েকটা কভার করা যায়। তবে এক রাত দুই দিন সময় নিয়ে আসলে প্রায় সব গুলো কভার করতে পারবেন। আপনার সময় বিবেচনা করে ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই করবেন। সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো হলো:
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
- কমলদহ ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- গুলিয়াখালি বীচ
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
সতর্কতা এবং টিপস
- অতিরিক্ত খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- সৈকতটি পর্যটকদের জন্য খুব একটা নিরাপদ নয়। তাই প্রতি বছরই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।