কাশ্মীরে বিভিন্ন হিন্দি মুভির শুটিং দেখে ছোটবেলা থেকেই আমি কাশ্মীরের প্রেমে পরে যাই। জীবনে একবার হলেও কাশ্মীর যাব ঠিক করি। তবে আমির খানের থ্রি ইডিয়টস মুভি দেখার পরে লাদাখের প্রতি চাহিদা বেড়ে যায়। সিদ্ধান্ত নেই একবার লাদাখ যাব, পরে আবার কাশ্মীর যাব। সাধারণত সবাই এমন প্ল্যানই করে। কিন্তু সময় সল্পতার কারণে আমি একসাথে লাদাখ-কাশ্মীর ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। সাধারণত খুব কম লোকই এক সাথে লাদাখ-কাশ্মীর যায়। চলুন জেনে নেই পৃথিবীর স্বর্গ লাদাখ কাশ্মীর ভ্রমণ এর আদ্যপান্ত।
লাদাখ কাশ্মীর কিভাবে যাবেন
যেকোনো ট্যুরেই একা থেকে দলবদ্ধ ভাবে গেলে অনেক বেশি মজা হয়, আর খরচ ও কমে যায়। দল বা টিমের সাইজ ৪ বা ৬ গুণিতক হলে ভাল। তাহলে নিরাপত্তা নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করা লাগেনা এবং হোটেল বুকিং, গাড়ি ভাড়া করতে সুবিধা হয়। আমিও টিম খুঁজতে থাকি এবং ভুটান ট্যুরের মতো এবারও আমার অফিসের ৬ জন কে পেয়ে যাই।
যেই কথা সেই কাজ, আমার অফিসের ছয় কলিগ মিলে লাদাখ-কাশ্মীর ভ্রমণের প্লানিং শুরু করে দেই। লাদাখ বা কাশ্মীর যেতে হলে প্রথমেই আপনার থাকতে হবে ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা। কিভাবে ভারতের ভিসা নিবেন তা আমার অন্য এক পোস্টে বিস্তারিত লেখা আছে। ভারতের ভিসা থাকলে আপনি বিভিন্ন ভাবে ঢাকা থেকে কাশ্মীর যেতে পারেন।
আমরা ঢাকা থেকে সড়ক পথে আগরতলা হয়ে দিল্লি যাই। দিল্লি থেকে প্লেনে লাদাখের লেহ শহরে পৌঁছাই। ভ্রমণের ৪৫ দিন আগে টিকেট কাটায় আমরা মাত্র ৭০০০ রুপিতে আগরতলা-দিল্লি আসা যাওয়ার প্লেনের টিকেট পেয়ে যাই।
লাদাখ কাশ্মীর ভ্রমণ এর খরচ
লাদাখ এবং কাশ্মীর অনেক বড় আর দুর্গম। তাই এখানে খরচ বেশ বেশি। একজন মানুষ শপিং ছাড়া ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় মোটামোটি ভাবে লাদাখ এবং কাশ্মীর ঘুরে আসতে পারে। ইচ্ছে করলে এবং সঠিক প্ল্যান থাকলে খরচ আরো কমানো যায়।
আমরা ছয়জন আগরতলা থেকে প্লেনে প্রথমে লাদাখ যাই। পরে সেখান থেকে কাশ্মীর ঘুরে আবার আগরতলা হয়ে ঢাকায় ফেরত আসি। আমরা ৯ দিন ছিলাম এবং মোটামোটি ভালো মানের হোটেলে থাকি। আমাদের একেক জনের শপিং ছাড়া ৩৯,০০০ টাকার মতো খরচ হয়।
লাদাখ কাশ্মীর ভ্রমণ এর প্রস্তুতি
লাদাখ-কাশ্মীর ভ্রমণ করতে হলে বেশ টাকাপয়সা আর সময় লাগে। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া ভালো। খরচকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ফেলুন। তাহলে একসাথে খুব বেশি প্রেসার পড়বেনা। এটা ফলো করলে মাত্র ২০,০০০ হাজার টাকায় লাদাখ-কাশ্মীর ঘুরে আসতে পারবেন। অবাক হলেন? দাঁড়ান একটু ক্লিয়ার করি।
আমি প্রায় দুই মাস আগে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ১৮,০০০ টাকায় আসা যাওয়ার টিকেট কাটি। এই বিল পরিশোধ করে পরের মাসে শীতের জামাকাপড় কিনে ফেলি। ফাইনালি যাবার সময়ে মাত্র ২০,০০০ টাকা সাথে নিয়ে যাই। লাদাখে চলাফেরা করার জন্য শারীরিক ভাবে একটু ফিট থাকা লাগে। তাই যাবার ২-৩ মাস আগে থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করে নিজেকে শারীরিক ভাবে উপযুক্ত করে তোলার চেষ্টা করি।
লাদাখ কাশ্মীর ভ্রমণ এর ট্যুর প্ল্যান
লাদাখ-কাশ্মীরে আপনে কোন রুটে যাবেন, কোন রুটে ফেরত আসবেন, কবে কোথায় ঘুরবেন, কখন কোথায় থাকবেন ইত্যাদি সব কিছুর একটা খসড়া ঢাকা থেকেই করে নিবেন। আপনে দিল্লী থেকে প্রথমে কাশ্মীর ঘুরে সড়ক পথে লাদাখ চলে আসতে পারেন। পরে লাদাখ ঘুরে দিল্লী। আবার চাইলে দিল্লী থেকে প্রথমে লাদাখ হয়ে সড়ক পথে কাশ্মীর যেতে পাবেন। আমরা দিল্লী থেকে প্রথমে লাদাখ, সেখান থেকে কাশ্মীর যাই। সংক্ষেপে আমাদের ট্যুর প্ল্যান:
প্রথম দিন:
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকালের ট্রেনে আখাউড়া। সময় নিবে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট। সেখান থেকে আখাউড়া ল্যান্ড বর্ডার হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। ২-৩ ঘন্টা আগরতলা শহরে ঘুরাঘুরি করে বিকালের ফ্লাইটে দিল্লি। দিল্লি এয়ারপোর্টে রাত্রি যাপন।
দ্বিতীয় দিন:
দিল্লি থেকে সকাল ৭ টার ফ্লাইটে লাদাখের লেহ শহর। সময় নিবে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। পুরা দিন হোটেলে বিশ্রাম।
তৃতীয় দিন:
লেহ শহরের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ।
চতুর্থ দিন :
সকালে লেহ থেকে সড়ক পথে কাশ্মীরের উদ্দেশে যাত্রা করে কার্গিল শহরে রাত্রি যাপন। পথে বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ। এটাই ট্যুরের সব থেকে রোমাঞ্চকর ইভেন্ট।
পঞ্চম দিন:
সকালে কার্গিল থেকে কাশ্মীরের সোনমার্গ। পথে ভয়ঙ্কর জোজিলা পাস্ অতিক্রম। থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার এর সৌন্দর্য উপভোগ। বিকালে পেহেলগাম এর উদ্দ্যেশে যাত্রা এবং লিডার নদীর পারে কোনো এক কর্টেজে রাত্রি যাপন।
ষষ্ঠ দিন:
সারাদিন পেহেলগামের বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ। বিকালে রাজধানী শ্রীনগর এর উদ্দেশে যাত্রা। পথে আপেল গার্ডেন, ক্রিকেট ব্যাট ফ্যাক্টরি পরিদর্শন। রাতে বিখ্যাত ডাল লেকের পারে ভাসমান হোটেলে রাত্রি যাপন।
সপ্তম দিন:
ডাল লেকে শিকারা ভ্রমণ, শ্রীনগর শহরে ঘুরাঘুরি। শ্রীনগর থেকে বিভিন্ন কাশ্মীরি ড্রাইফুড, মসলা, জাফরান, কাশ্মীরি শাল, ড্রেস ইত্যাদি কেনাকাটা এবং হোটেলে রাত্রি যাপন।
অষ্টম দিন:
সকাল ৭ টার ফ্লাইটে দিল্লি। সময় নিবে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। এয়ারপোর্টের কাছাকাছি কোনো হোটেলে চেকইন করে মালামাল রেখে সারাদিন দিল্লির বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা পরিদর্শন। রাতে শপিং, ঘুরাঘুরি, আড্ডা। হোটেলে রাত্রি যাপন।
নবম দিন:
দিল্লি থেকে সকাল ৭ টার ফ্লাইটে আগরতলার উদ্দেশ্যে যাত্রা। বর্ডার পার হয়ে সন্ধ্যার ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা।
এবার মূল ভ্রমণে আসি
আমরা ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৭:৪৫ এর ট্রেনে আখাউড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। ১০:৩০ এর দিকে আমরা আখাউড়া স্টেশনে পৌঁছাই। সেখান থেকে দুটি অটো ভাড়া করে আখাউড়া ল্যান্ড বর্ডার চলে আসি। ভাড়া নিল একেক অটো ১৫০ টাকা।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন অফিসে এসে মাথা পুরাই নষ্ট। জরাজীর্ণ অফিস কক্ষ, মনে হল যে কোনো সময়ে ধসে পরবে। ফ্যান গুলাও কাজ করছে না। পক্ষান্তরে ভারতের ইমিগ্রেশন অফিস বেশ চকচকা, পরিষ্কার, সুন্দর। আমাদের এক টিম মেম্বারের পাসপোর্টের মেয়াদ কম থাকায় এবং ভারতের ইমিগ্রেশন অফিসে ইন্টারনেট লাইন ডাউন থাকায় দুই দেশের ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এর কাজ শেষ করতে দুপর দেড়টা বেজে যায়। তবে দুই দেশের ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এর লোকেরাই বেশ আন্তরিক।
আগরতলা শহর
আমাদের এক মেম্বার ফাহিম, যার বাড়ি আখাউড়ায়। তার এক চাচা থাকে আগরতলা। উনি আমাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে রাখে। ভারতের ইমিগ্রেশন অফিস থেকে বের হয়ে সেই গাড়িতেই আমরা চলে আসি আগরতলা শহরে। সময় নিল ১০-১৫ মিনিটের মতো। সেখানে এক রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। খাবার থেকে এর পরিবেশনটাই বেশি ইন্টারেষ্টিং ছিল।
আগরতলা শহরের লোকজন দেখতে আমাদের মতোই এবং বাংলায় কথা বলে। খাবার শেষে আমরা শহরে ঘুরাঘুরি করি। শহরটি বেশি বড় না। তবে প্রচুর গাছ পালা আর ছোট ছোট পাহাড়ের মতো টিলা রয়েছে। টিলার উপর বিভিন্ন সরকারি অফিস আর কর্মকর্তাদের বাস ভবন গুলো বেশ সুন্দর। রাস্তা গুলাও বেশ উঁচুনিচু, গাড়ি দিয়ে ঘুরতে বেশ ভালোই লাগলো।
আগরতলা থেকে দিল্লি
আমাদের ফ্লাইট বিকাল ৫:৪০ এ। তাই চলে আসি এয়ারপোর্টে। ল্যান্ড বর্ডার থেকে এখানে প্রাইভেট কার ভাড়া নেয় ১০০০ রুপি, সময় লাগে ২৫-৩০ মিনিট। এয়ারপোর্ট খুব বেশি বড় না হলেও এর নাম কিন্তু বেশ বড় “মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুর বিমানবন্দর”।
আগরতলা থেকে দিল্লির কোনো সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় আমাদের কলকাতা হয়ে দিল্লি যেতে হবে। সময়মতোই প্লেন ছেড়ে দিল। আমাদের মেম্বারদের অনেকেরই এটা প্রথম প্লেনে উঠা। তাই তারা খুব এক্সসাইটেড ছিল। আমরা কাউন্টারে বলে ৬ সিট একই সারিতে নিয়ে নেই।
আমাদের এয়ারলাইন্স ছিল ইন্ডিগো। ভারতে এরাই সব থেকে সস্তায় মানুষ পরিবহন করে। আর এদের সেবার মান ও বেশ ভালো। ৩/৩ সিটের এয়ারবাসগুলো বেশ সুন্দর আর বড়। তবে এরা প্লেনে একমাত্র পানি ছাড়া ফ্রিতে আর কোনো খাবার দেয়না, তাও গ্লাসে করে দেয়। যেখানে আমাদের দেশের সব এয়ারলাইন্সই ফ্রীতে খাবার পরিবেশন করে। ব্যাপারটা একটু অন্যরকম লাগলো। তবে আপনি চাইলে পয়সা দিয়ে কিনে খেতে পারবেন।
কলকাতায় ট্রানসিট
প্রায় ৪০ মিনিট পর আমাদের ফ্লাইট কলকাতা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে। এখানে ৩ ঘন্টা ট্রানসিট তাই এয়ারপোর্টের ভিতরেই থাকি। আমি কেএফসি থেকে রাতের খাবার খেয়ে নেই। দাম পড়লো ২৩০ রুপির মতো। আপনে চাইলে আরো কমে খেতে পারেন। রাত ১০:৩০ এর ফ্লাইটে আমরা আবার দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট পর আমরা দিল্লি চলে আসি।
দিল্লি এপারপোর্টে
দিল্লি থেকে আমাদের ফ্লাইট সকাল ৭ টায় লাদাখের লেহ শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। তাই হাতে প্রায় ৫ ঘন্টার মতো সময় আছে। রাত ১:৩০ এর দিকে আমরা এয়ারপোর্টের বাহিরে চলে আসি। উদেশ্যে একটু ঘুরাঘুরি আর নাস্তা করা। কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় দুরে কোথাও গেলাম না। এয়ারপোর্টের পাশেই এক স্ট্রিট ফুডের দোকানে ডিম-ব্রেড খেলাম।
এই মাঝ রাতে একটি দেশের রাজধানীতে ফুটপাতে বসে ব্রেড খেতে সেই লাগল। পাশের এক মুদি দোকান থেকে আমরা কিছু চকলেট, চিপস কিনে নিলাম লাদাখে ভ্রমনের সময় খাওয়ার জন্য। কেননা লাদাখে সব সময় এগুলা পাওয়া যাবেনা, আর দামও একটু বেশি। যেহেতু সেখানে লম্বা লম্বা জার্নি করব তাই সাথে কিছু খাবার থাকা উচিৎ।
দিল্লিতে রাতে বেশ ঠান্ডা পরে। তাই তাড়াতাড়ি এপারপোর্টে ঢুকে গরম কাপড় পরে নিলাম। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী এয়ারপোর্ট অনেক বড়। কত বড় তার একটা উদাহরণ দেই। আমরা টার্মিনাল ১ তে প্রবেশ করি। টিকেট দেখে গার্ড বললো, আপনাদের ফ্লাইট টার্মিনাল ৩ থেকে ছাড়বে। লিফ্ট দিয়ে নিচে নেমে যান, ঐখানে দেখবেন বেশ কিছু লোক দাঁড়িয়ে আছে, একটু পর পর বাস আসবে, উঠে টার্মিনাল ৩ তে চলে যান।
ভাবলাম কাছেই হবে, আবার বাস কেন হেঁটেই তো যেতে পারতাম। যাই হোক নেমে দাঁড়িয়ে থাকি, একটু পর বাস আসল। সুন্দর A/C করা বেশ ভালো মানের বাস। বাসের লোক বললো ২৫ রুপি ভাড়া দেন। একটু অবাক হলাম এতো ভাড়া কেন। কলকাতায় তো ২৫ রুপি দিয়েই ২৫ কিলোমিটার যাওয়া যায়। বাস যেতেই থাকল। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর আমরা টার্মিনাল ৩ তে আসলাম। এতক্ষন আমরা এপারপোর্ট এরিয়াতেই ছিলাম।
টিকেট দেখিয়ে সিকিউরিটি চেকিং কমপ্লিট করে ভিতরে ঢুকে অপেক্ষা করতে থাকি। এয়ারপোর্ট বিশাল বড় আর একদম পরিষ্কার, মনে হয় ৫ ষ্টার মানের হোটেল। কিভাবে এরা ম্যানেজ করে ভেবে একটু অবাক হলাম। আর আমাদের দেশে 🙁 আমরা শুয়ে, বসে, ঘুমিয়ে বাকিটা সময় পার করে দেই। ও ভালো কথা এখানে কিন্তু ঘুমানোর জন্য আলাদা বড় চেয়ার আছে, যেখানে শুয়ে ঘুমানো যায়।
দিল্লি থেকে লেহ
নির্ধারিত সময়ে আমাদের ফ্লাইট লেহ শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এবারকার এয়ারলাইন্স ভিস্তারা। ভিস্তারা খুবই সুন্দর, ৩/৩ সিট। এরা ফ্রি খাবার পরিবেশ করল। প্রায় ২০,০০০ ফিট উপরে বসে খেতে দারুন লাগলো। একটু পরেই সাদা সাদা বিশাল পাহাড় প্লেনের জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম।
প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পরে আমরা লেহ তে চলে আসি। পাইলট ঐখানকার বর্তমান তাপমাত্রা আর ওয়েদার কেমন জানিয়ে দিল। AMS এর ব্যাপারেও ধারণা দিয়ে দিল। সাথে তিনি এও জানালো যে পার্কিং না পাওয়ায় আমাদের ফ্লাইট নামতে দেরি হবে।
পাখির চোখে লেহ শহর
লেহ শহর কে নিচে রেখে বিশাল বিশাল পাহাড়ের মাঝ দিয়ে এঁকেবেঁকে আমাদের ফ্লাইট চক্কর দিতে থাকে। সিনেমায় নায়ক যেভাবে অন্য গাড়িগুলাকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত এগিয়ে যায়, আমাদের পাইলট ও সেভাবে পাহাড় গুলাকে পাশ কাটিয়ে ফ্লাইট কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। পাহাড়গুলো এতো কাছে ছিল যে মনে হচ্ছে এই বুঝি লেগে গেল।
কিছু পাহাড় বরফে ঢাকা, কিছু আবার ঝুরঝুরে পাথরের। অনেক দূরের রাস্তা, পাহাড়ি নদী সব সরু লাইনের মতো মনে হতে লাগলো। একপর্যায়ে মাথা ঘুরতে লাগলো, তাই বাহিরে তাকানো বন্ধ করে দেই। দেহের অক্সিজেন লেভেল ঠিক রাখার জন্য আমরা একটু পর পর পানি পান করতে থাকি। এভাবে প্রায় ২০ মিনিট চক্কর কাটার পর আমাদের ফ্লাইট ল্যান্ড করে।
ফ্লাইট থেকে নামার পরেই বুঝতে পারি এখানে অক্সিজেন কম, হালকা একটু খারাপ লাগতে লাগলো। তবে কারোরই তেমন কোনো সমস্যা হয় নাই। দ্রুত ব্যাগ নিয়ে, এয়ারপোর্টের বাহিরে চলে আসি। এসেই দেখি আমাদের জন্য গাড়ি নিয়ে একজন অপেক্ষা করছে। আমরা ঢাকা থেকেই তাকে ঠিক করে আসি।
এয়ারপোর্ট থেকে লেহ শহরে যেকোনো হোটেলে পিকাপ/ড্রপ ৫০০ রুপি। ১৫-২০ মিনিটের মাঝেই আমরা হোটেলে চলে আসি। এসে নাস্তা করে রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিয়ে দেই। আজ খুব ক্লান্ত তাই বাকি টুরের গল্প অন্য পর্বে বলব।
লাদাখ কাশ্মীর ভ্রমণ এর সতর্কতা
কাশ্মীর ভীষণ সুন্দর এলাকা। তাই যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা বা পানির বোতল ফেলে একে ময়লা করার কোনো মানে নাই। কাশ্মীরের লোকজন খুব ধর্মভীরু। তাই তাদের ধর্ম বা রাজনীতি নিয়ে কোনো সমালোচনা করবেন না। আপনে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তা তাদের সাথে শেয়ার করবেন। বাংলাদেশীদের এরা খুব সম্মান করে এবং ভালো জানে। চেষ্টা করবেন তা ধরে রাখতে। ক্রিকেট এদের জানপ্রাণ। সাকিব, মাশরাফি তাদের প্রিয় খেলোয়াড়।
অন্য পর্ব গুলোও দেখে নিতে পারেন। আশাকরি ভালো লাগবে:
- পর্ব ১: লাদাখ এবং কাশ্মীর ভ্রমণ
- পর্ব ২: লাদাখের দর্শনীয় স্থান সমূহ
- পর্ব ৩: সড়ক পথে লেহ টু কার্গিল
- পর্ব ৪: সড়ক পথে কার্গিল টু সোনমার্গ
- পর্ব ৫: পৃথিবীর স্বর্গ সোনমার্গ
- পর্ব ৬: এশিয়ার সুইজারল্যান্ড পেহেলগাম
- পর্ব ৭: কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর
সময়ে নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আশা করি খুব উপভোগ করেছেন। আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনার কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্টস করে জানাবেন। আর ভালো লেগে থাকলে ওয়ালে শেয়ার করে বন্ধুদের জানার সুযোগ করে দিন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।