সন্দ্বীপ (Sandwip) বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অদ্ভুত সুন্দর সবুজ এক দ্বীপ। বিশাল বিশাল জাহাজের আনাগোনা, সাগরের ঢেউ, নদী আর মোহনার এক ঘোলাটে মিশ্রণ এই সন্দ্বীপ। এখানকার মনোরম স্নিগ্ধ পরিবেশ, মুক্ত হাওয়া আপনার মনকে মুগ্ধ করবেই।
সন্দ্বীপের ইতিহাস
সন্দ্বীপ খুবই প্রাচীন এক দ্বীপ। এখানে প্রায় তিন হাজার বছরের অধিককাল ধরে লোক বসতি বিদ্যমান। এটি এক সময় নোয়াখালী জেলার সাথে যুক্ত ছিল। একসময় এখানকার লবণ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বস্ত্র শিল্প পৃথিবী বিখ্যাত ছিল। ভারতবর্ষের মধ্যে এটি ছিল এক খুবই সমৃদ্ধশালী বন্দর। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে পর্তুগিজরা এখানে উপনিবেশ স্থাপন করেন।
সন্দ্বীপ কোথায় অবস্থিত
সন্দ্বীপ বাংলদেশের চট্টগ্রাম জেলার এক দ্বীপ উপজেলা। এই দ্বীপ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫/১৫ কিলোমিটার প্রস্থ। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ।
সন্দ্বীপে কি করবেন
সন্দ্বীপের প্রত্যেকটি জায়গা দেখার মতো সুন্দর। সবুজ প্রকৃতি, ফসল ভরা মাঠ, নদীর বুকে জেগে উঠা চর, সহজ সরল মানুষ ইত্যাদি সব কিছু আপনাকে মুগ্ধ করবে। শীতকালে এখানে ক্যাম্পিং করে দারুন মজা। ক্যাম্পিং এর জন্য পশ্চিম দিকের নদীর পাড় (রহমতপুর) আদর্শ জায়গা। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যাস্ত খুবই উপভোগ্য। শিবের হাটের বিণয় সাহার স্পঞ্জের রসগোল্লা খেয়ে দেবেন।
দ্বীপের উত্তর দিকে আছে মরিয়ম বিবি সাহেবানী মসজিদ। এটি বেশ পুরানো এবং অনেকটা তাজমহলের মতো করে বানানো। এর সাথে আছে বিশাল দীঘি। উপভোগ করতে পারেন বাউল আর জারি গানের আসর। আরো দেখতে পারেন উত্তরের সবুজ চর, পশ্চিম পাড়ের বিশাল প্রাকৃতিক পরিবেশ, কুমিরা ঘাটের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প।
সন্দ্বীপ কখন যাবেন
সন্দ্বীপ ভ্রমণ করার জন্য শীতকাল সব থেকে ভালো সময়। আর মাত্র ৩ হাজার টাকায় আপনি সন্দ্বীপ ভ্রমণ করে আসতে পারেন। সাগর নদী পরিবেষ্টিত সন্দ্বীপ আপনার সারাজীবন মনে থাকবে।
সন্দ্বীপ কিভাবে যাবেন
সন্দ্বীপ যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা। ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস যায় চট্টগ্রাম। যে কোনো একটায় উঠে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটঘর নেমে যাবেন। ভাড়া নিবে নন এসি ৪৮০ টাকা, এসি ৮০০/১১০০ টাকা। তবে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনাকে সন্দ্বীপ ফেরিঘাট যাবার রাস্তার মাথায় নামিয়ে দিতে। সেখান থেকে অটো বা রিক্স নিয়ে চলে যাবেন কুমিরা ঘাট। ভাড়া ১০/২০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকেও আসতে পারেন কুমিরা ঘাটঘর। চট্টগ্রামের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে ফেনী গামী বাসে আসতে পারেন কুমিরা ঘাটঘর। ভাড়া ৪০/৮০ টাকা। এছাড়া সিএনজি, প্রাইভেট কার রিজার্ভ করেও আসতে পারেন। সিএনজি ভাড়া ৩০০/৩৫০ টাকা।
কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ
কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্য স্পিড বোট এবং ছোট লঞ্চ আছে। স্পিড বোট ভাড়া জনপ্রতি ২৫০/৩০০ টাকা। সময় নিবে ৩০ মিনিট। ছোট লঞ্চ বা ট্রলার ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা। সময় নিবে ২/৩ ঘন্টা। আপনাকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে নামিয়ে দিবে। রাতে থাকতে চাইলে ঘাট থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন টাউন কমপ্লেক্স। আর ক্যাম্পিং করতে চাইলে চলে যাবনে পশ্চিম পারে রহমতপুর। ভাড়া নিবে ২৫০/৩০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
এখানে ভালো মানের খাবারের হোটেল নাই। তবে লোকাল হোটেলে ভাত, মাংস, মাছ, ভর্তা ভাজি দিয়ে খেতে পারেন। প্রতিবেলা খরচ হবে ১০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
এখানে রাতে থাকার জন্য মাঝারি মানের কিছু হোটেল আছে। এনাম নাহারে থাকার কয়েকটি হোটেল আছে। সেখান থাকতে পারেন। কমপ্লেক্সও বেশকিছু হোটেল আছে। এছাড়া সেনেরহাট এলাকায় ভালো একটি হোটেল আছে। সেখানেও থাকতে পারেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ থেকে অনুমতি নিয়ে সরকারি ডাক বাংলোতে থাকতে পারেন (যোগাযোগ: মাহমুদুর রহমান ০১৮১১৩৪১৭২২)।
সতর্কতা এবং টিপস
- শীতকালে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- কোথাও যাতে সময় নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- সন্ধ্যার আগেই জায়গা সিলেক্ট করে তাবু টানিয়ে ফেলুন।
- বাই সাইকেল ভাড়ায় পেলে পুরো দ্বীপ ঘুরে দেখতে পারেন।
- প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসাবে নিতে পারেন। তাহলে রাতে সাথে থাকা সোহ সব কিছু সহজেই ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। ৪০০/৫০০ টাকা দিলেই সে খুশি হয়ে যাবে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।