বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের মধ্যে পুঠিয়া রাজবাড়ী (Puthia Rajbari) অন্যতম। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতিতে তৈরী এই রাজবাড়ীর দেশের অন্যান্য রাজবাড়ী গুলো থেকে একটু আলাদা। এইখানে আরো আছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া মন্দির। এই জন্য পুঠিয়াকে মন্দিরের শহরও বলা হয়।
পুঠিয়া রাজবাড়ী কোথায় অবস্থিত
পুঠিয়া রাজবাড়ী বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পাশে এর অবস্থান।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর ইতিহাস
১৮৯৫ সালে মহারানী হেমন্তকুমারী দেবী পুঠিয়া রাজবাড়ী নির্মাণ করেন। এই বাড়ি হেমন্তকুমারী দেবী তাঁর শাশুড়ি মহারানী শরৎ সুন্দরী দেবীর সম্মানে নির্মাণ করান। এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য আর ভালোবাসার এক অনন্য নিদর্শন।
রাজা পিতাম্বর ছিলেন পুঠিয়া জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। পূর্বে এই জনপদের অধিপতি ছিলেন আফগান লস্করি খান। সম্রাট আকবরের সাথে ঝামেলা করার ফলে জমিদারি চলে যায় পিতাম্বর এর কাছে। আর তখন থেকে পুঠিয়ায় জমিদারির গোড়াপত্তন হয়। এই রাজবংশ ব্রিটিশ-বাংলার দ্বিতীয় বৃহত্তম জমিদার ছিলেন। আর সম্পদের দিক থেকে প্রথম।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর নির্মাণ শৈলী
রাজবাড়ীর সামনের স্তম্ভ, অলংকরণ, কাঠের কাজ, কক্ষের দেয়াল ও দরজার উপর নানা রকম ফুল ও লতাপাতার চিত্রকর্ম সব মিলিয়ে চমৎকার নির্মাণ শৈলীর সংমিশ্রণ। এই রাজবাড়ীর ছাদ সমতল এবং ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা ও টালি ব্যবহার করা হয়েছে। রাজবাড়ির চারপাশে পরিখা খনন করে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
পরিখাগুলো শিব সরোবর, গোবিন্দ সরোবর, গোপালচৌকি, বাকিচৌকি, মরাচৌকি নামে পরিচিত। এছাড়াও রাজবাড়ীর মাঝখানে আছে শ্যামসাগর নামে বিশাল এক পুকুর।
এই রাজবাড়ীর আশেপাশে আছে বেশ কয়েকটি মন্দির। তাদের মধ্যে বড় শিব মন্দির, বড় আহ্নিক মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি মন্দিরের দেয়ালেই আছে অপূর্ব পোড়ামাটির ফলকের কারুকাজ।
পুঠিয়া রাজবাড়ী যাওয়ার উপায়
পুঠিয়া রাজবাড়ী যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে রাজশাহী জেলায়। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে রাজশাহী আসা যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইন ইত্যাদি কোম্পানির এসি/নন-এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৪০০ থেকে ১,০০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ করেকটি ট্রেন ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস দুপুর ২:৪০ মিনিটে, পদ্মা এক্সপ্রেস রাত ১১:১০ মিনিটে ছেড়ে যায়। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রবিবার এবং পদ্মা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। ভাড়া ৩৫০/১০৮১ টাকা।
ঢাকা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানি ঢাকা-রাজশাহী রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। ভাড়া ৩,৫০০/৪,৫০০ টাকা।
রাজশাহী শহর থেকে নাটোরগামী যেকোন বাসে উঠে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক এর পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাবেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫/১০ মিনিট পায়ে হেটে গেলেই পাবেন পুঠিয়া রাজবাড়ী। ইচ্ছে করলে রিক্সা নিয়েও যেতে পারেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে দুরুত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন
পুঠিয়াতে জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো আছে। ইচ্ছে করলে এখানে থাকতে পারেন। তবে এর জন্য জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে এবং নির্ধারিত ভাড়া প্রধান করতে হবে। জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নাম্বার: ০৭২১-৭৭৬৩৪৮। এছাড়া পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড এর কাছে কিছু আবাসিক হোটেল আছে। সেখানেও থাকতে পারেন।
অথবা রাজশাহী শহরে এসেও থাকতে পারেন। রাজশাহী শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। ভাড়া ৫০০/৩,৫০০ টাকা। তাদের মধ্যে কয়েকটির তত্ত্ব নিচে দেয়া হলো।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন মোটেল
রাজশাহী চিড়িয়াখানার পাশেই এর অবস্থান। ঢাকা থেকেই এর বুকিং দেয়া যায়। ভাড়া: সিঙ্গেল এসি রুম ১,৯০০ টাকা, ডাবল এসি রুম ২,৬০০ টাকা, সুইট ৪,৬০০ টাকা। যোগাযোগ: ০২-৮৮৩৩২২৯, ০২-৮৮৩৪৬০০ (ঢাকা), ০৭২১-৭৭৫২৩৭ (রাজশাহী)
হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল
গণকপাড়ায় এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭৬১৮৮
হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল
সাহেব বাজারে এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১১০০
হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল
বিন্দুর মোড়ে এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৮৮১১৪৭০
হোটেল শুকরান
মালোপাড়ায় এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১৮১৭
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।