পুঠিয়া শিব মন্দির (Puthia Shiva Temple) উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শিব মন্দির। এই মন্দিরেই আছে দেশের সবচেয়ে বড় কষ্টি পাথরের শিব লিঙ্গের মূর্তি। প্রাচীন ঐতিহাসিক এই মন্দিরের দেয়াল জুড়ে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী অংকিত আছে। এখনও এই মন্দিরে পূজা-অর্চনা হয়।
পুঠিয়া শিব মন্দির কোথায় অবস্থিত
পুঠিয়া শিব মন্দির (Puthia Shiva Mondir) বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের কাছে এর অবস্থান। এই মন্দিরের কাছাকাছি আছে আরো কয়েকটি মন্দির। তাদের মধ্যে আহ্নিক মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, গোপাল মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, দোলমঞ্চ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই জন্যই লোকে বলে মন্দিরের শহর পুঠিয়া।
পুঠিয়া শিব মন্দির এর ইতিহাস
পুঠিয়া শিব মন্দির পুঠিয়া রাজপরিবারের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়। রাজা জগন্নারায়ণ এর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী রাণী ভুবনময়ী দেবী এই মন্দরী নির্মাণ করেন। পাঁচআনি জমিদার রানী ভুবনময়ী দেবীর নাম অনুসারে এটি ভূবনেশ্বর মন্দির নামেও পরিচিত। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮২৩ সালে এবং শেষ হয় ১৮৩০ সালে। তখনকার সময়ে এই মন্দিরটি নির্মান করতে খরচ হয় প্রায় ৩ লক্ষ মুদ্রা। আর তৈরী করতে সময় লাগে ৭ বছর।
মন্দিরটি নির্মানে ভারতের পাথর ও সুরকির ব্যবহার করা হয়েছে। এ মন্দিরের চর্তুরদিকে সুন্দর বারান্দা আছে। চর্তুরদিকের দেয়ালে উপরে উঠার ৩ টি সিড়ি আছে। মন্দিরের মাথার উপরে পিতলের কলস বসানো আছে। দেওয়ালে নানান ধরনের নিপুন কারু কার্য করা আছে।
চিরদিকে ৬৫ ফুট দীর্ঘ এই মন্দির ৪ মিটার উঁচু ভিতের উপরে নির্মিত। এর চার কোনায় চারটি আর কেন্দ্রে একটি রত্ন আছে। মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় একটি মাত্র কক্ষ আছে। কক্ষের চারপাশে দুই স্তরে বারান্দা আছে। মূল কক্ষের অভ্যন্তরে কষ্ঠি পাথরের বিশাল এক শিব লিঙ্গের মুর্তি আছে।
প্রতিবছর শ্রাবণ মাসে এই শিব মন্দিরে শিবের মাথায় গঙ্গা জল অর্পন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর ধর্ম প্রাণ পুরুষ-মহিলা গঙ্গা জল অর্পন করতে আসে।
পুঠিয়া শিব মন্দির যাওয়ার উপায়
পুঠিয়া শিব মন্দির যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে রাজশাহী জেলায়। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে রাজশাহী আসা যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন লাইন ইত্যাদি কোম্পানির এসি/নন-এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৪০০ থেকে ১,০০০ টাকা।
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ করেকটি ট্রেন ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচল করে। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস দুপুর ২:৪০ মিনিটে, পদ্মা এক্সপ্রেস রাত ১১:১০ মিনিটে ছেড়ে যায়। সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রবিবার এবং পদ্মা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। ভাড়া ৩৫০/১০৮১ টাকা।
ঢাকা আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স কোম্পানি ঢাকা-রাজশাহী রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। ভাড়া ৩,৫০০/৪,৫০০ টাকা।
রাজশাহী শহর থেকে নাটোরগামী যেকোন বাসে উঠে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক এর পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে যাবেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫/১০ মিনিট পায়ে হেটে গেলেই পাবেন পুঠিয়া রাজবাড়ি। ইচ্ছে করলে রিক্সা নিয়েও যেতে পারেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে দুরুত্ব প্রায় ১ কিলোমিটার। রাজবাড়ির প্রবেশদার সংলগ্ন বাম দিকেই পুঠিয়া বড় শিব মন্দির।
কোথায় থাকবেন
পুঠিয়াতে জেলা পরিষদের ২ টি ডাকবাংলো আছে। ইচ্ছে করলে এখানে থাকতে পারেন। তবে এর জন্য জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে হবে এবং নির্ধারিত ভাড়া প্রধান করতে হবে। জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নাম্বার: ০৭২১-৭৭৬৩৪৮। এছাড়া পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড এর কাছে কিছু আবাসিক হোটেল আছে। সেখানেও থাকতে পারেন।
অথবা রাজশাহী শহরে এসেও থাকতে পারেন। রাজশাহী শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। ভাড়া ৫০০/৩,৫০০ টাকা। তাদের মধ্যে কয়েকটির তত্ত্ব নিচে দেয়া হলো।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন মোটেল
রাজশাহী চিড়িয়াখানার পাশেই এর অবস্থান। ঢাকা থেকেই এর বুকিং দেয়া যায়। ভাড়া: সিঙ্গেল এসি রুম ১,৯০০ টাকা, ডাবল এসি রুম ২,৬০০ টাকা, সুইট ৪,৬০০ টাকা। যোগাযোগ: ০২-৮৮৩৩২২৯, ০২-৮৮৩৪৬০০ (ঢাকা), ০৭২১-৭৭৫২৩৭ (রাজশাহী)
হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল
গণকপাড়ায় এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭৬১৮৮
হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল
সাহেব বাজারে এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১১০০
হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল
বিন্দুর মোড়ে এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৮৮১১৪৭০
হোটেল শুকরান
মালোপাড়ায় এর অবস্থান। যোগাযোগ: ০৭২১-৭৭১৮১৭
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।