আলুটিলা গুহা (Alutila Guha) প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট এক রহস্যময় সুড়ঙ্গ। স্থানীয় লোকজন এই গুহাকে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। এই গুহা খুবই অন্ধকার ও শীতল। সাধারণত খাগড়াছড়ি বেড়াতে এলে বা সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার পথে পর্যটকরা সবাই অন্তত একবার হলেও এই গুহা দেখে যায়।
আলুটিলা গুহার বৈশিষ্ট
আলুটিলা গুহার দৈর্ঘ ৩৫০ ফুট। এই গুহার ব্যাস প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ফুট। গুহার এক প্রান্ত দিয়ে ঢুকে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হতে সময় লাগে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। গুহার ভিতরে সবসময় অন্ধকার থাকে। তাই এখানে প্রবেশ করার জন্য হাতে মশাল বা টর্চ লাইট নিয়ে যেতে হয়। টর্চ না থাকলে মোবাইলের লাইট ব্যবহার করতে পারেন। গুহার ভিতরে বেশ কিছু জায়গায় পানির প্রবাহ আছে এবং পাথর গুলো বেশ পিচ্ছিল। উপর থেকে টিপ্ টিপ্ পানি পরে। তাই ভালো গ্রিপের জুতা পরে যাওয়া উত্তম।
পর্যটন কেন্দ্রের গেট থেকে জন প্রতি ৪০ টাকা দিয়ে টিকেট কিনে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। গেট থেকে পাহাড়ি সরু পথ ধরে প্রায় ২৬৬ টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলেই এই গুহার দেখা পাওয়া যাবে। গুহার উচ্চতা মাঝে মধ্যে এতই কম যে, হামাগুড়ি বা নতজানু হয়ে সামনে যেতে হয়। গুহার ভেতরে অনেক গুলো বড় বড় পাথর আছে।
আলুটিলা গুহা কোথায় অবস্থিত
আলুটিলা গুহা বা আলুটিলা সুড়ঙ্গ (Alutila Cave) বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় আলুটিলা বা আরবারি পাহাড়ে অবস্থিত। খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে এর অবস্থান। নামে টিলা হলেও এটি মূলত একটি পর্বত শ্রেণী। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত। এর উচ্চতা প্রায় ৩,০০০ ফুট।
আলুটিলা গুহা কিভাবে যাবেন
আলুটিলা গুহা যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে খাগড়াছড়ি জেলা শহরে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ভাবে খাগড়াছড়ি আসা যায়। ঢাকা থেকে শান্তি, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, গ্রিনলাইন, সেন্টমার্টিন, এস আলম, বিআরটিসি ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস খাগড়াছড়ি আসে। নন এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১৬০০ টাকা।
চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে বিআরটিসি এবং শান্তি পরিবহনের বাস খাগড়াছড়ি যায়। এছাড়া এই রুটে বেশ কিছু লোকাল বাসও চলাচল করে। নন এসি এইসব বাসের ভাড়া ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা। যেতে সময় নিবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে চান্দের গাড়ি, সিএনজি বা মোটর বাইক নিয়ে চলে যাবেন আলুটিলা গুহা। টিম মেম্বার কতজন তা হিসাব করে যানবাহন ঠিক করবেন। আলুটিলা গুহার কাছে আরো দুটি ট্যুরিস্ট স্পট, রিসাং ঝর্ণা এবং বৌদ্ধ মন্দির আছে। তাই সব থেকে ভালো হয় সব গুলো স্পট একসাথে ঘুরে দেখা। গাড়ি ঠিক করার পূর্বে কোন কোন জায়গায় যাবেন তা বলে নিবেন। সব স্পটের জন্য চান্দের গাড়ি ভাড়া ২,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা, সিএনজি ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা। চান্দের গাড়িতে ১০ থেকে ১২ জন বসা যায়। সব স্পট ঘুরতে সময় লাগবে ৪ থেকে ৫ ঘন্টা। গাড়ি ঠিক করার পূর্বে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।
কোথায় খাবেন
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রর গেইটে আদিবাসীদের বেশ কিছু দোকান আছে। যে গুলোতে আদিবাসীদের জামাকাপড়, পানি, সফ্ট ড্রিঙ্কস, বিস্কুট, আইসক্রিম ইত্যাদি হালকা খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর এবং বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অনেক গুলো রেস্টুরেন্ট আছে। যেকোনো একটায় পছন্দ মতো খাবার খেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়ি শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল আছে। এইসব হোটেল গুলোর ভাড়া সাধারণত ৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী যে কোনোটায় থাকতে পারেন। এছাড়া শাপলা চত্বরের আশেপাশে কিছু বোর্ডিংর আছে, যেখানে কম খরচে থাকা যায়। বোর্ডিং গুলোর ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
সতর্কতা
- ছোট বচ্চা এবং বয়স্কদের সাথে না নিয়ে যাওয়ায়ই উত্তম।
- ভালো গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
- সাথে টর্চ বা মোবাইলের আলো রাখুন।
- উঠা এবং নামার পথ পিচ্ছিল, তাই সাবধানে হাঁটুন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।