মেঘনা, ডাকাতিয়া আর ধনাগোদা নদীর জলধারায় বিধৌত দেশের অন্যতম বাণিজ্য নৌবন্দর চাঁদপুর। এই জনপদ বন্যা আর নদীর ভাঙ্গনে বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে। কিন্তু হারমানেনি, আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাঁদপুর কে বলা হয় ইলিশের রাজধানী। ইলিশ মাছের স্বাদ নিতে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষের আগমন ঘটে এখানে। শধু ইলিশের জন্যই নয়, গ্রাম বাংলার আবহমান নদীর রূপের টানেও এখানে প্রচুর লোকের আগমন ঘটে। তিন নদীর মোহনা অনেক থাকলেও এখানকার মেঘনা, পদ্মা, ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল অসাধারণ।
চাঁদপুরের ইতিহাস
চাঁদপুর (Chadpur) আগে কুমিল্লা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তরিত হয়। বার ভূঁইয়াদের সময়ে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এখানে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। ঐতিহাসিক জে এম সেনগুপ্তের মতে, জমিদার চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর।
অন্যদের মতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো কারো মতে, পঞ্চদশ শতকে শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নামানুসারেই এই জায়গার নাম হয়েছে চাঁদপুর।
কখন চাঁদপুর যাবেন
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা যে কোন সময়ই বেড়াতে পারেন ইলিশের রাজধানী চাঁদপুর। তবে সব থেকে ভালো হয় ইলিশের মৌসুমে গেলে।
কিভাবে চাঁদপুর যাবেন
ঢাকা থেকে আপনি খুব সহজেই চাঁদপুর যেতে পারেন। বাস এবং লঞ্চ উভয় পথেই চাঁদপুর যাওয়া যায়। রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় বেশ কিছু বাস চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এর মধ্যে পদ্মা এক্সপ্রেস, বিলাশ এক্সপ্রেস উল্লেখযোগ্য। তবে চাঁদপুর স্থল পথে যাওয়াটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।
চাঁদপুর যাওয়ার সব থেকে সহজ এবং ভাল উপায় হচ্ছে নদীপথ। প্রতিদিন সদরঘাট থেকে সকাল ৭:৩০ মিনিট হতে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রায় প্রতি ঘণ্টায় লঞ্চ ছেড়ে যায়। আপনার প্রয়োজন অনুসারে যে কোনো একটায় উঠে পড়ুন। ঢাকা থেকে চাঁদপুর যেতে সময় নিবে ৪ ঘন্টার মতো। এই রুটের অধিকাংশ লঞ্চই নিরাপদ ও আরামদায়ক।
আপনি চাইলে সকালে চাঁদপুর গিয়ে ঘুরে আবার বিকালে ফেরত আসতে পারেন। সাধারণত চাঁদপুরের লঞ্চ ভাড়া শ্রেনী ভেদে ১০০ থেকে ২০০০ টাকা হয়ে থাকে। যাবার সময় লঞ্চের ফেরার সময় সূচি জেনে নিবেন।
চাঁদপুরের দর্শনীয় স্থান
চাঁদপুরে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। সব গুলো দেখতে গেলে ২-৩ দিন সময় লেগে যাবে। সম্ভব হলে পরিচিত কারো বাসায় থেকে ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শুধু মাত্র চাঁদপুর শহর ঘুরতে চাইলে নিচের স্থান গুলো দেখতে পারেন।
- বড়স্টেশন মোলহেড নদীর মোহনা
- রেলওয়ে স্টেশন
- ওয়ান মিনিট আইক্রিম
- অঙ্গীকার স্মৃতিসৌধ
- ইলিশের বাজার
ইলিশ কোথায় কিনবেন
চাঁদপুর গেলে অনেকেই বাসার জন্য ইলিশ কিনে আনতে চায়। আপনিও কিনতে চাইলে সোজা চলে যান বড় স্টেশন। এখানেই ভালো মানের ইলিশ পাবেন। তবে এখানে চাঁদপুর ছাড়াও ভোলা, বরিশাল, এবং সামুদ্রিক ইলিশও পাওয়া যায়। চাঁদপুরের ইলিশ চেনার উপায় হলো, এখানকার ইলিশ একেবারেই রুপালি রঙের। অন্য জায়গার ইলিশে রুপালি রঙের সাথে হালকা লালচে আভা থাকে।
সাধারণত নদী বা মিষ্টি পানির ইলিশ চকচকে রুপালি রঙের হয়। বাজারের কাছেই ককশিট, ব্যাগ এবং বরফ পাওয়া যায়। কিনে তাদেরকে বললে তারাই সুন্দর করে প্যাকেট করে দিবে। তবে ফেরার পথে সদরঘেটে কুলিরা বেশ ঝামেলা করে। তাই ওদের হাতে ব্যাগ না দিয়ে তাদের অল্প কিছু টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়ার চেষ্টা করবেন।
গ্রামের সরু রাস্তায় সাইক্লিং
যারা সাইক্লিং করতে ভালবাসেন তাদের কাছে শহরের প্রশস্ত সুন্দর রাস্তার চেয়ে গ্রামীণ সরু আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে সাইক্লিং বেশি পছন্দনীয়। গ্রামের সবুজ প্রকৃতির মাঝে সাইকেল চালানো সবসময় উত্তেজনাপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর। আপনার হাতে সময় থাকলে চাঁদপুরের যেকোনো গ্রামের ভিতর দিয়ে সাইক্লিং করতে পাবেন। দারুন মজা পাবেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।