যতদূর চোখ যায় কেবল সাদা সাদা পাথর, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল, উপরে নীল আকাশ আর সবুজ পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন। যেন প্রকৃতির এক অপরুপ স্বর্গরাজ্য। সব মিলিয়ে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক অদ্ভুত সৌন্দর্যের ক্যানভাস এই ভোলাগঞ্জ (Bholaganj)।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কোথায় অবস্থিত
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। ভোলাগঞ্জের অপর পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সেখানকার উঁচু উঁচু পাহাড় থেকে নেমে আসে ঝর্ণার পানি। এই পানি ধলাই নদের প্রধান উৎস।
এই পানির ঢলের সাথে চলে আসে পাথর। সেই পাথর ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। ভোলাগঞ্জ বর্ডারের ১০ নং ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ধলাই নদ ধরে কিছু পথ এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে বিশাল পাথরের এলাকা। স্থানীয় লোকজন এই এলাকাকে সাদা পাথর বলে থাকে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কখন যাবেন
ভোলাগঞ্জ সব সময়ই যাওয়া যায়। তবে সব থেকে ভালো হয় বর্ষাকালে গেলে। এই সময় নদীতে পানি বেশি থাকে। তবে বর্ষার পর পর গেলে অন্যরকম সৌন্দর্য দেখতে পাবেন। তখন পানি একটু কম থাকলেও নীল পানি আর অর্ধ ডুবন্ত পাথর গুলো দেখতে সেই সুন্দর। ফুল বর্ষায় বেশির ভাগ পাথর পানিতে ডুবে যায়। তাই চেষ্টা করবেন বর্ষার একটু আগে বা পরে যেতে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর কিভাবে যাবেন
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে সিলেট শহর। রাজধানী ঢাকা থেকে আপনি সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যেতে পারেন সিলেট শহর। হানিফ, শ্যামলী, গ্রিনলাইন ইত্যাদি পরিবহনের বাস প্রতিদিন সকাল ৬ থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত একটু পর পর সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সিলেট থেকে ঢাকায় আসে। ভাড়া ৫০০/- থেকে ১০০০/- টাকা।
এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ কিছু ট্রেন সিলেট যায়। আপনি ঢাকা থেকে আকাশ পথেও যেতে পারেন। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট চলাচল করে। সময় নিবে প্রায় ৪৫ মিনিট। ভাড়া ৩০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা।
সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর যেতে হলে আপনাকে আসতে হবে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে। এটি হজরত শাহজালাল রহঃ এর মাজারের গেইটের সাথেই। এখানে বাস/সিএনজি ষ্টেশন আছে। বাস/সিএনজি করে যেতে হবে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। দুরুত্ব প্রায় ৩৩ কিঃমিঃ। সময় নিবে এক ঘন্টার মতো। এখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত বিআরটিসি বাস ছেড়ে যায় ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট। ভাড়া ৫০ টাকা।
এছাড়া শেয়ার করে বা পুরা সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন ভোলাগঞ্জ। শেয়ারে গেলে ১৩০/১৫০ টাকার মতো ভাড়া নিবে। আর রিজার্ভ করে নিলে আসা-যাওয়া ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা। রিজার্ভ করে নেয়াই উত্তম। কেননা ফেরার পথে সিএনজি নাও পেতে পারেন। তবে রিজার্ভ করে নেয়ার সময় অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিন হলে ভাড়া একটু বেশি নিবে। আর অন্য দিন হলে আরো কমেও পেতে পারেন।
ভোলাগঞ্জ বাজারে নেমে ১০ নং নৌকা ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করতে হবে। আসা-যাওয়া নৌকা ভাড়া ৮০০ টাকা। এক নৌকায় ১০ জন বসা যায়। টিম ছোট হলে অন্য টিমের সাথে শেয়ারে যেতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন ঘাটের আগে থেকেই অন্য টিমের সাথে যোগ হতে। কারণ ঘাটে সিন্ডিকেট বিদ্যমান। তারা ঝামেলা করতে পারে।
কোথায় খাবেন
ভোলাগঞ্জ বাজারে ভালো মানের তেমন কোনো রেস্টুরেন্ট নাই। তবে ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি দেশি খাবার পাওয়া যায়। ভোলাগঞ্জ যাবার পথে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। আর ভালো কিছু খেতে হলে সিলেট শহরে এসে খেতে পারেন।
সিলেটে জিন্দাবাজার এলাকায় খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেমন: পাঁচ ভাই, পানশি, পালকি। এদের মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর খাবারের মান বেশ ভালো এবং তুলনামূলক ভাবে বেশ সস্তা। হরেক রকম ভর্তা, মাংস, খিচুরি বেশ টেস্টি। এদের পাঁচ মিশালী আইটেম দারুন। সাথে একটা মাংস বা মাছ নিলে ভাত এবং ডাল একদম ফ্রি।
খেয়ে বিল দেয়ার সময় একবার হলেও চিন্তা করবেন সিলেটের মানুষ কেন বাসায় রান্না না করে রেস্টুরেন্ট এ এসে খায়। ভালো কথা, এয়ার কন্ডিশন রুমে না বসে খেলে খাবারের বিল কিন্তু আরো কম আসে।
কোথায় থাকবেন
ভোলাগঞ্জে থাকার মতো তেমন কিছু নাই। আর দরকারও নাই। দেখা শেষ হলে চলে আসবেন সিলেট শহরে। এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। ১০০০ থেকে ২০০০ টাকার ভিতর ভালো মানের হোটেল পাবেন। তবে হোটেল নেয়ার সময় অবশ্যই আম্বরখানা এলাকায় নিবেন। এইখান থেকেই সব দিকে মুভ করার যানবাহন পাওয়া যায়।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর এর আশেপাশের আছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। হাতে সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।