ভুটান (Bhutan) দক্ষিণ এশিয়ার এক ক্ষুদ্র দেশ। এই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয়। সুবিশাল হিমালয়ের কল্যাণে উঁচু উঁচু পাহাড়, ঘন জঙ্গল, সবুজ ভ্যালি ভুটানকে করেছে অপরূপ। ফ্রেন্ডস ট্যুর, ফ্যামিলি ট্যুর, মধুচন্দ্রিমা, কাপল ট্যুর, সবকিছুর জন্যই ভুটান ভ্রমণ হতে পারে যে কারো প্রথম পছন্দ। যে কোনো ধরনের, যে কোনো বয়সের মানুষ এই দেশের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতে বাধ্য।
ভুটান কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশ থেকে ভুটান আকাশ পথে এবং সড়ক পথে, দুই ভাবেই যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে ভুটানের একমাত্র এয়ারলাইনস সপ্তাহে কয়েক দিন ফ্লাইট পরিচালনা করে। আর সড়ক পথে ভারত হয়ে ভুটান যাওয়া যায়। কেননা ভুটানের সাথে আমাদের সরাসরি কোনো ল্যান্ড বর্ডার নাই। ঢাকা থেকে বুড়িমারী/চ্যাংড়াবান্ধা ল্যান্ড বর্ডার দিয়া ভারতে প্রবেশ করে ওইখান থেকে বাস বা ট্যাক্সি করে জয়গাঁ/ফুন্টশোলিং ল্যান্ড বর্ডার দিয়ে ভুটানে প্রবেশ করা যায়।
তবে সড়ক পথে গেলেই বেশি মজা। উঁচু উঁচু পাহাড়ের কোল গেষে, আঁকাবাঁকা পথ ধরে, কখনো সবুজের, কখনো মেঘের, কখনো বরফের ভিতর দিয়ে, বিশাল বিশাল ঝর্ণা থেকে সৃষ্ট পাহাড়ি নদীর স্বচ্ছ কালারফু পানির পাশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ানোই ভুটান ভ্রমণ। এর জন্য দরকার ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা। আমাদের আগে থেকে ভুটানের ভিসার দরকার নাই। কেননা ভুটান বাংলাদেশিদের জন্য অন অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান করে। মানে আপনে ভুটান গেলেই ওরা আপনাকে ভিসা দিবে।
ভুটান ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়
আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাস ভুটানে বেড়ানোর জন্য সব থেকে ভাল সময়। কারণ তখন আবহাওয়া খুব ভালো থাকে। তখন অবশ্য ভুটানে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। শীতকালে ভুটানে মারাত্বক ঠান্ডা পরে এবং বরফ জমে অনেক রাস্তা ঘাট বন্ধ হয়ে যায়। অনেক জায়গায় যাওয়া যায় না। তাই শীতকাল ভুটানে বেড়ানোর ভাল সময় নয়। বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে এ সময়টাও ভুটানে বেড়ানো কঠিন।
ভুটান ভ্রমণে কেমন সময় লাগে
ভুটানে মোট ২০ টা ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। সব গুলাতেই আছে বেশ কিছু ছোট বড় শহর এবং দর্শনীয় স্থান, যার সবগুলাই অসম্ভব সুন্দর। সব ভ্রমণ করতে গেলে মোটামোটি এক মাস সময় লেগে যাবে। যাদের প্রচুর টাকা পয়সা আছে এবং হাতে যথেষ্ট সময় আছে তারাই কেবল এমন অভিযানে নামতে পারে। তবে থিম্পু, পারো, ফুন্টসলিং, পুনাখা, বুমথং এবং হা ভ্যালি এই শহর গুলি ঘুরলেই মোটামোটি ভুটান ভ্রমণ হয়ে যায়। আর এর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৭-৮ দিন।
ভুটান ভ্রমণ এর খরচ
একজন মানুষ মাত্র ১৫০০০ টাকায় সড়ক পথে ভুটান ঘুরে আসতে পারে। তবে অনেকের খরচ একটু কম বেশি হতে পারে। কারণ বিভিন্ন দামের হোটেল, খাবার আছে। আপনে কোথায় থাকবেন কি খাবেন তা নিতানন্তই আপনার ব্যপার।
ভুটান ভ্রমণ এর জন্য কি কি দরকার
ভুটান ভ্রমনের জন্য আপনার নিচের জিনিস গুলো দরকার হবে:
- বাংলাদেশী পাসপোর্ট
- বাসের টিকেট (ঢাকা-বুড়িমারী অথবা ঢাকা-শিলিগুঁড়ি)
- পাসপোর্টে প্রয়োজনীয় ডলার এন্ড্রোসমেন্ট (আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড থাকলে তার এন্ড্রোসমেন্ট)
- আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ( যদি থাকে সব থেকে ভালো হয় )
- ইন্ডিয়ান ট্রানসিট ভিসা
- নুন্নতম ১৫ হাজার টাকা ( শপিং ছাড়া )
- চাকরিজীবী হলে অফিস থেকে NOC (বর্ডারে দেখতে হবে)
- পাসপোর্টের প্রধান পেইজের ৩-৪ সেট ফটোকপি
- ট্রানসিট ভিসার ১ সেট ফটোকপি
- ৩-৪ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- প্রয়োজনীয় জামাকাপড় (শীত কালে গেলে মোটা জ্যাকেট, কান টুপি, হাত মুজা ইত্যাদি)
- প্রয়োজনীয় ঔষধ পত্র (প্যারাসিটামল, গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ, ঠান্ডা কাশির সিরাপ ইত্যাদি)
- লেখার জন্য কলম (জরুরি না, তবে বিভিন্ন ফর্ম পূরণ করতে গেলে লাগবে)
- ভুটানে কোথায় কোথায় ঘুরবেন তার ম্যাপ, স্মার্ট ফোন থাকলে গুগল ম্যাপে অফলাইন ম্যাপ লোড করে নিবেন
- পরিশ্রম করার মতো সুস্থ শরীর
- হিন্দি বা ইংরেজী তে কথা বলার অভিজ্ঞতা (ভুটানিরা হিন্দি ভাল জানে)
- ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা, স্মার্ট ফোন
খুচরা কিছু টিপস
ভুটানিরা খুবই অলস জাতি এবং ঘুম কাতুরে। এরা তেমন চাষবাস করেনা। অবশ্য সমতল জমি তেমন নাই। খাবার, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ঔষধ, জামাকাপড়, ইত্যাদি সব দরকারি জিনিসপত্রই আসে ভারত থেকে। প্রতিদিন সকালে প্রায় ৪০০ গাড়ি ফুন্টশোলিং থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে ভুটানের বিভিন্ন শহরে আসে। এরা দৈনিক প্রায় ১২-১৪ ঘন্টা ঘুমায়। তাই সকাল সকাল বের হতে চাইলে আগে থেকেই বলে রাখবেন। ট্যাক্সি, হোটেল দামাদামি করে নিবেন। হোটেলে ওয়াইফাই, গিফার আছে আছে কিনা দেখে নিবেন। এরা খুবই শান্তশিষ্ট, তাই অহেতুক এদের খেপাবেন না। কোনো কিছু দরকার হলে পুলিশ কে বলবে। এখানকার পুলিশ খুবই হেল্পফুল। তারা তাদের দেশ কে সব সময় পরিষ্কার পরিছন্ন রাখে। তাই পরিবেশ নোংরা করবেন না। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা বা সিগারেট খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। জেব্রা ক্রসিং ছাড়া রাস্তা পার হবেন না। তাদের রাজাকে নিয়ে বাজে কিছু বলবেন না। সব সময় খরচ কমানোর চিন্তা করবেন। জামাকাপড় না কিনাই ভালো। ভুটানে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের কয়েকগুন। তাই সব দোকানপাট, রেস্তোরায় মেয়েই বেশি দেখা যায়। তাদের সম্মান করবেন, নিজেকে সংযত রাখবেন। আপনে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তা তাদের সাথে শেয়ার করবেন। বাংলাদেশীদের এরা খুব সম্মান করে এবং ভালো জানে। চেষ্টা করবেন তা ধরে রাখতে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।