বিছানাকান্দি (Bichnakandi) মূলত একটি পাথর খনি। ভারতের খাসিয়া পর্বত থেকে পানির প্রবাহ এসে এখানে মিলিত হয়েছে এবং হ্রদের সৃষ্টি করেছে। এই হ্রদ পিয়াইন নদীর সাথে মিশেছে। পানির প্রবাহ সাথে বয়ে নিয়ে আসে প্রচুর পাথর। বিছানাকান্দির এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে পাথর আর পাথর। দেখে মনে হয় যেন এক পাথরের বিছানা। নদীর স্বচ্ছ পানি, পাথর, পাহাড় আর আকাশ মিলিয়ে এখানকার সৌন্দর্য অসাধারণ।
বিছানাকান্দি কোথায় অবস্থিত
বিছানাকান্দি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তম ইউনিয়নে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার।
বিছানাকান্দি কখন যাবেন
বিছানাকান্দি যাওয়ার সব থেকে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল। সে সময়ই এর পূর্ণ সৌন্দর্য দেখা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন যেন তা মাঝ বর্ষায় না হয়। তখন বন্যায় সব কিছু ডুবে যায়। সব থেকে ভালো হয় বর্ষাকাল যখন শুরু হচ্ছে অথবা শেষ হচ্ছে তখন। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি বেস্ট সময়।
বিছানাকান্দি কিভাবে যাবেন
বিছানাকান্দি যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। রাজধানী ঢাকা থেকে আপনি সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যেতে পারেন সিলেট শহর। হানিফ, শ্যামলী, গ্রিনলাইন ইত্যাদি পরিবহনের বাস প্রতিদিন সকাল ৬ থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত একটু পর পর সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সিলেট থেকে ঢাকায় আসে। ভাড়া ৫০০/- থেকে ১০০০/- টাকা।
এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ কিছু ট্রেন সিলেট যায়। আপনি ঢাকা থেকে আকাশ পথেও যেতে পারেন। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট চলাচল করে। সময় নিবে প্রায় ৪৫ মিনিট। ভাড়া ৩০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা।
সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দি
সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দি যেতে হলে আপনাকে আসতে হবে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্টে। এটি শাহজালাল রহঃ এর মাজারের গেইটের সাথেই। এখানে সিএনজি ষ্টেশন আছে। সিএনজি করে যেতে হবে হাদারপার বাজারে। দুরুত্ব প্রায় ৩৫ কিঃমিঃ। সময় নিবে দুই ঘন্টার মতো।
আপনি শেয়ার করেও যেতে পারেন, আবার পুরা সিএনজি রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। শেয়ারে গেলে ১৫০/- এর মতো ভাড়া নিবে। আর রিজার্ভ করে নিলে আসা-যাওয়া ১২০০-১৪০০ টাকা। তবে রিজার্ভ করে নেয়ার সময় অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিন হলে ভাড়া একটু বেশি নিবে। আর অন্য দিন হলে আরো কমেও পেতে পারেন।
হাদারপার বাজারে নৌকা ঘাট আছে। ঘাট থেকে নৌকা দিয়ে যেতে হবে বিছানাকান্দি মূল পয়েন্টে। এখানে বেশ কয়েকটি ঘাট রয়েছে। একেক ঘাটে একেক ধরণের ভাড়া। সিএনজিওলাকে বলবেন যে ঘাটে ভাড়া কম সেখানে নিয়ে যেতে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া আসা যাওয়া ১৫০০ টাকা। কম ভাড়ার ঘাট থেকে ৭০০-৮০০ টাকায় নৌকা পাওয়া যায়।
শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায়। সময় নিবে ৩০-৪০ মিনিট। তবে নৌকায় গেলেই ভালো। ভাড়া ঠিক করার সময় এক সাথে বিছানাকান্দি, পান্থুমাই, লক্ষণছড়া ঘুরে দেখবেন বলে নিবেন।
হাতে সময় কম থাকলে বিছানাকান্দি আসার আগে রাতারগুল ঘুরে আসতে পারেন। তার জন্য আগেই ড্রাইভারকে বলে নিবেন, আর সকাল ৮ টার মধ্যে রওনা দেয়ার চেষ্টা করবেন। সকাল ১০ টার মধ্যে রাতারগুল পৌঁছে ১২ টা পর্যন্ত অবস্থান করে চলে যাবেন বিছানাকান্দি। দুপুর ৩ টার মধ্যে বিছানাকান্দি পৌঁছে, ২ ঘন্টা সেখানে সময়ে কাটিয়ে আবার সিলেট শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন। সব কিছু ঠিক থাকলে রাত ৮ টা নাগাদ চলে আসবেন সিলেট শহর।
কোথায় থাকবেন
বিছানাকান্দিতে থাকার মতো তেমন কিছু নাই। আর দরকারও নাই। দেখা শেষ হলে চলে আসবেন সিলেট শহরে। এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। ১০০০-২০০০ টাকার ভিতর ভালো মানের হোটেল পাবেন। তবে হোটেল নেয়ার সময় অবশ্যই আম্বরখানা এলাকায় নিবেন। এইখান থেকেই সব দিকে মুভ করার যানবাহন পাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
বিছানাকান্দিত মূল পয়েন্টে কয়েকটা ভাতের হোটেলের মতো ছোট ছোট খাবারের দোকান রয়েছে। ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে এখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। এছাড়া হাদারপাড় বাজারে এসেও খেতে পারেন। এখানেও মোটামোটি মানের খাবারের দোকান রয়েছে। এছাড়া এখানে হালকা কিছু নাস্তা করে সিলেট শহরে এসেও খেতে পারেন। সিলেটে জিন্দাবাজার এলাকায় খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেমন: পাঁচ ভাই, পানশি, পালকি।
এদের মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর খাবারের মান বেশ ভালো এবং তুলনামূলক ভাবে বেশ সস্তা। হরেক রকম ভর্তা, মাংস, খিচুরি বেশ টেস্টি। এদের পাঁচ মিশালী আইটেম দারুন। সাথে একটা মাংস বা মাছ নিলে ভাত এবং ডাল একদম ফ্রি।
খেয়ে বিল দেয়ার সময় একবার হলেও চিন্তা করবেন সিলেটের মানুষ কেন বাসায় রান্না না করে রেস্টুরেন্ট এ এসে খায়। ভালো কথা, এয়ার কন্ডিশন রুমে না বসে খেলে খাবারের বিল কিন্তু আরো কম আসে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
বিছানাকান্দি এর আশেপাশের আছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। হাতে সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।