বাঙালিরা ভোজনরসিক হিসাবে বেশ সুপরিচিত। তাদের খাবারে আছে নানা বৈচিত্র্য। এখানকার প্রতিটি জেলায় আছে জনপ্রিয় কিছু স্থানীয় খাবার। যা ওই জেলার ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন খাবারের প্রতি সাধারণত সবারই লোভ থাকে। সেইসব খাবার খেতে অনেকেই সেখানে ছুটে আসে। বাংলাদেশের দ্বীপজেলা ভোলার তেমনই একটি বিখ্যাত খাবার হলো মহিষের দুধের টক দই। ইলিশ এবং মহিষের টক দই ভোলার ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত। মহিষের দুধের কাঁচা দধি ভোলার প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে।
টক দই এর গুরুত্ব
ভোলায় পারিবারিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক যেকোনো অনুষ্ঠানে দই থাকবেই। দই না থাকলে অনুষ্ঠান অপূর্ণ। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কাছেই সমান প্রিয় এই দই। স্থানীয়রা খাবারের শেষে ভাতের সঙ্গে এই দই খায়। টক দই এর সাথে গুড়, মিষ্টি অথবা চিনি মিশিয়ে খেতে হয়। অনেকে গরমের দিনে দইয়ের সঙ্গে হালকা পানি ও চিনি মিশিয়ে ঘোল তৈরি করে খায়। এ ঘোল গরমের দিনে মানুষের শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। এই দইয়ে আছে প্রচুর ঔষধি গুণ। এটি হজমে সহায়তা করে। স্বাস্থ্যবিদদের মতে, দইয়ে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিনসহ অন্যান্য উপদান থাকে, যা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারি।
মহিষের টক দই কিভাবে তৈরী করা হয়
ভোলার চারপাশে মেঘনা এবং তেতুলিয়া নদীতে অনেক চর আছে। বিস্তীর্ণ এসব চরাঞ্চলে শত শত মহিষ লালন করা হয়। যুগ যুগ ধরে অনেক পরিবার এখানে মহিষ ও দই বিক্রির পেশার সাথে জড়িত আছে। দুধ বা দধির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন চরে গড়ে উঠেছে মহিষের অনেক বাথান বা খামার। সকালে এসব বাথান থেকে মণে মণে দুধ আসে থানা শহরের বাজার গুলোতে। ওখান থেকে গোয়ালরা তাদের প্রয়োজন মতো দুধ কিনে নেয়।
টক দই তৈরী করা খুবই সহজ কাজ। এই দই সাধারণত মাটির পাত্রে (টালিতে) বসানো হয়। উপরে শুধু নিউজ পেপার দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক ধরনের পাত্র থাকে। কোয়াটার, এক লিটার, দেড় লিটার, দুই লিটার এবং পাঁচ লিটার। প্রথমে মাটির পাত্র গুলো ভালো ভাবে পরিষ্কার করে নেয়া হয়। এরপর কাঁচা দুধ আগুনে গরম না করে ভালোভাবে ছেকে মাটির পাত্রে স্থির জায়গায় রেখে দিতে হয়। সাধারণত গরমের দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা এবং শীতের দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগে দই তৈরী হতে।
মহিষের টক দই এর দাম কেমন
দইয়ের কোয়ালিটির উপর দাম নির্ভর করে। আর দইয়ের কোয়ালিটি নির্ভর করে মহিষের দুধের উপর। এই দই লিটার হিসাবে বিক্রি করা হয়। প্রতি লিটার দইয়ের দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
টক দই কোথায় পাওয়া যায়
ভোলা জেলার বিভিন্ন ছোট বড় বাজারে মহিষের টক দই পাওয়া যায়। তবে উপজেলা শহর গুলোতে ভালো মানের দই পাওয়া যায়। বেশি পরিমানে দই কিনতে চাইলে ১/২ দিন আগে অর্ডার করে রাখা ভালো। অনেকেই ঢাকায় ভোলার দই সরবরাহ করে দিবে বললেও সেটা অরিজিনাল হবে কিনা নিশ্চিত না। তাই অরিজিনাল দই খেতে চাইলে চলে আসুন ভোলা জেলায়। অথবা পরিচিত কেউ থাকলে তাকে দিয়ে আনিয়ে নিতে পারেন।
কিভাবে যাবেন
মহিষের অরিজিনাল টক দই খেতে চাইলে আপনাকে আসতে হবে ভোলা জেলায়। ভোলা আপনি বিভিন্ন ভাবে যেতে পারেন। তবে সব থেকে সহজ উপায় হলো লঞ্চ। প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ভোলা শহর এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন জায়গার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়।
ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে ভোলা সদর, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, মনপুরার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লঞ্চ ছেড়ে যায়। তাদের মধ্যে কর্ণফুলী, ফারহান, তাশরিফ, সাব্বির, টিপু, লালি, শ্রীনগর ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। লঞ্চ থেকে নেমে বাস বা অটোতে চলে যাবেন যেকোন উপজেলা শহরের বাজারে। বাজারের বিভিন্ন মিষ্টির দোকান এবং দইয়ের দোকানে মহিষের টক দই পাওয়া যায়।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।