ক্যাম্পিং আমার কাছে খুবই দুঃসাহসিক একটা কাজ মনে হয়। এটি অনেকটা আদিম যুগের মতো লাগে। সারাদিন কাপ্তাই লেকের পানিতে ভেসে বেড়ানোর পর শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশে তাঁবুতে রাত্রিযাপন করা আমার অনেক দিনের প্ল্যান ছিল। তাই নানান প্রতিবন্ধকতা থাকার পরেও হটাৎ করে চলে আসি কাপ্তাই লেকে। লেকের তীরে সুন্দর এক রিসোর্ট বার্গী লেক ভ্যালীতে ক্যাম্পিং করি।
বার্গী লেক ভ্যালীতে ক্যাম্পিং
১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাতের বাসে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে আমরা সকালে রাঙামাটি পৌঁছাই। বাস আমাদের রাঙামাটি শহর পার করে রিজার্ভ বাজারে নামিয়ে দেয়। রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করে আগে থেকেই ভাড়া করা ট্রলার নিয়ে কাপ্তাই লেক ভ্রমণে বের হয়ে যাই। বিকালে ট্রলারে আমরা আমাদের ভেন্যু বার্গী লেক ভ্যালী রিসোর্টে পৌঁছাই। আমি যেহেতু বাংলাদেশ লোকাল গাইড কমিউনিটির সাথে এসেছি, তাই সব কিছুর ব্যাবস্থা কমিউনিটির লোকজন করেছিল।
রিসোর্টে এসে দেখি আমাদের জন্য তাবু রেডি করা হচ্ছে। এই রিসোর্টে কটেজ, হাউজ বোট এবং তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা আছে। আমরা সবাই তাঁবুতে থাকবো আগে থেকেই প্ল্যান ছিল। কাপ্তাই লেকের তীরে সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশের এই ক্যাম্পিং সাইট আমার খুব পছন্দ হয়েছে। সাইটে অনেক গাছপালা আছে। আর আছে প্রচুর লিচু গাছ। লিচু গাছের তলায় আমাদের জন্য তাবু টানানো হয়। তাই লিচুর মৌসুমে আসলে সব থেকে ভালো হয়। গাছ থেকে পেরে লিচু খেতে পারবেন। আমরাও কতৃপক্ষেকে বলে লিচু খেয়েছিলাম। রিসোর্টে আম, কাঁঠাল গাছও আছে।
সাইটে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট আছে। মোবাইল চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। প্রত্যেক তাঁবুতে আরামদায়ক বিছানা এবং বালিশ আছে। প্রতি তাঁবুতে ২ জন করে থাকা যাবে। এগুলো সব রিসোর্ট কতৃপক্ষ সরবরাহ করেছিল। তাবু ভাড়া জনপ্রতি ১৩০০ টাকা। অগ্রিম বুকিং দিয়ে আসলে ভালো হয়। প্যাকেজের সাথে খাবার অন্তর্ভুক্ত আছে কিনা কথা বলে নিবেন।
আপনারা নিজে নিজে ঢাকা থেকে বার্গী লেক ভ্যালীতে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত নন এসি বাস ভাড়া ৮৫০/৯০০ টাকা। রাঙামাটি শহর থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন বার্গী লেক ভ্যালী। সিএনজি ভাড়া ৩৫০/৪০০ টাকা। একক বা দল বেঁধে ক্যাম্পিং করার জন্য এই জায়গা খুবই উপযুক্ত। আমরা প্রায় ৫০ জন তাঁবুতে ছিলাম।
রাতের অভিজ্ঞতা
সন্ধ্যা পর্যন্ত রিসোর্টে ঘুরাঘুরি করি। সন্ধ্যার পর রিসোর্টের রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা করি। এর পর ৯:৩০ টা পর্যন্ত সবার সাথে আড্ডা দেই। ডিনার করে ১১ টার দিকে ঘুমানোর জন্য তাঁবুতে চলে আসি। নাস্তা এবং ডিনার রিসোর্ট কতৃপক্ষ সরবরাহ করেছিল। নাস্তায় ছিল পাস্তা, পানি এবং কফি। ডিনারে ছিল বারবিকিউ চিকেন, পরোটা এবং সফ্ট ড্রিঙ্কস। রেস্টুরেন্টে অন্য খাবারও পাওয়া যায়।
তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে চেইন আটকাতেই কেমন জানি কফিন কফিন ফিল করলাম। ডিনারের সময় রেস্টুরেন্টে বিশাল আকারের একটা বিচ্ছু দেখেছিলাম। তাই কোন পোকামাকড় এসে কামড়ে দেয় নাকি তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। তাঁবুতে আমার সাথে জাসেদ ভাই ছিল। আমার মতো ওনারও এটি প্রথম তাঁবুতে রাত্রিযাপন।
সাইটে কিছু তাবু চারপাশ খোলা শেডের ভিতরে ছিল। আর কিছু তাবু ছিল উন্মুক্ত জায়গায়। ভাগ্যক্রমে আমারটা ছিল একদম খোলা আকাশের নিচে। রাতে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে কি করবো তা আগেই ঠিক করে নিলাম। যদিও তাবু ভালো মানের ছিল। এখন গরমকাল, তাই তাঁবুর ভিতরে হালকা গরম ছিল। একটু পর পর গাছ থেকে লিচু পড়ার শব্দ আর নানারকমের কীটপতঙ্গের ডাক সব মিলিয়ে পরিবেশটা একদম প্রাকৃতিক মনে হচ্ছিলো ।
সারাদিন অনেক পরিশ্রম করায় শরীর খুব ক্লান্ত ছিল। তার উপর এমন নিরিবিলি পরিবেশ। কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ কখন জানি ঘুমিয়ে যাই। হটাৎ মাঝ রাতে পোকার কামড়ে ঘুম ভেঙে যায়। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দেখি ছোট এক পোকা। সব বন্ধ থাকার পরেও এটি কিভাবে ভিতরে প্রবেশ করলো বুজতে পারলাম না। সম্ভবত আগে থেকেই ছিল। হাত দিয়ে ধরে বাহিরে ফেলে দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
শান্ত সকালে
ভোর ৫ টার দিকে আমার ঘুম ভেঙে যায়। মনে হলো অনেক দিন পর আজ একটা ফ্রেশ ঘুম হলো। তাঁবুর বাহিরে এসেই দেখি আরো কয়েকজন ইতিমধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। তখনো সূর্য মামা উঠে নাই। এই সুন্দর পরিবেশে কাপ্তাই লেক দেখতে খুবই দারুন লাগছিলো। কিছুক্ষন চারপাশের শান্ত প্রকৃতি উপভোগ করে ফ্রেশ হয়ে সবাই মিলে কাপ্তাই লেকে গোসল করতে নেমে যাই। এই শীতল পানিতে গোসল করা খুবই উপভোগ করেছিলাম।
তাঁবুতে ফিরে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য রেডি হয়ে যাই। আর এভাবেই শেষ হয় আমার আমার প্রথম ক্যাম্পিং অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি। সত্যি কথা বলতে আমার প্রথম ক্যাম্পিং অভিজ্ঞতা এক কথায় অসাধারণ ছিল।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।