করোনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় কোথাও ভ্রমণ করতে যাওয়া হয়নি। আবার যখন লকডাউন শেষ হয়েছে তখন সারাদেশে বর্ষা শুরু হয়েছে। তাই কোথায় ভ্রমণ করা যায় তার চিন্তা করতে লাগলাম। কুয়াকাটা, বরিশাল, সিলেট ইত্যাদি জায়গায় ভ্রমণের চিন্তা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ফেইসবুকে এক বন্ধু স্ট্যাটাস দিল কুতুবদিয়া, মারাংতাং ও সোনাদিয়ায় ক্যাম্পিং করার জন্য। পছন্দ হয়ে গেল পরিকল্পনাটা। প্রথমেই বলছি কুতুবদিয়া ক্যাম্পিং নিয়ে।
কুতুবদিয়া ক্যাম্পিং শুরু
পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাম্পিংয়ের জন্য তাবু জোগাড় করা হলো। আমরা ৪ জন ভ্রমণের জন্য তৈরি এবং সবাই বাজেট ট্রাভেলার। খুব ভোরে রওনা দিয়ে সকাল ১০ টায় পৌঁছে গেলাম মগনামা ঘাটে। ওইখান থেকে ট্রলারে কুতুবদিয়া ঘাটে পৌঁছালাম, সময় লাগলো ৪৫ মিনিট।
তখন চলছে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত। বুঝতেই পারছেন কি অবস্থা সাগরের। অনেক উচু ঢেউ এর মধ্যে দিয়ে ট্রলার যাচ্ছিল। আমাদের মধ্যে ১জন সাতার জানে না, তার অবস্থা ছিল দেখার মত। যাই হোক ১১ টায় পৌছে গেলাম কুতুবদিয়া।
কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ঘাটে নেমে অটো রিক্সায় গেলাম বড়ঘোপ বাজারে। ওইখান থেকে সমুদ্র টা অনেক বেশী সুন্দর, দুই পাশে ঝাউবন। যে কোন জায়গায় ক্যাম্পিং করা যায়, কিন্তু লোকজনের চলাচল কম এমন জায়গা বেছে নেয়া উত্তম। সুবিধামত ক্যাম্পিংয়ের জায়গা ঠিক করে ফেললাম।
দুপুরের খাবার খেয়ে সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম বাতিঘরের দিকে। কুতুবদিয়ায় সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র দেখা যায় এদিক দিয়ে। এখানে স্থানীয় ছেলেদের সাথে কিছুক্ষণ ক্রিকেট খেললাম। এদিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও হচ্ছে।
ওখান থেকে হেঁটে হেঁটে সমুদ্রতীর দিয়ে বড়ঘোপ বাজারে চলে আসলাম। পথিমধ্যে স্থানীয়দের সাথে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল ও খেললাম। এ যেন ভ্রমণের এক অন্য রকম তৃপ্তি। প্রায় দেড়ঘন্টা সাগরের তীরে হেঁটে বড়ঘোপ বাজারে পৌঁছালাম।
কুতুবদিয়া ক্যাম্পিং এ তাবু
সন্ধ্যায় ক্যাম্পিংয়ের তাঁবু সমুদ্রের পাড়ে ঝাউগাছের নিচে বসানো হলো। সাগর পাড়ে ক্যাম্প করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম এবং অভিজ্ঞতা টা ছিল অসাধারণ। সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন আর আকাশের তারার মিশেলে রাতভর গল্প, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া। উপরি হিসেবে ছিল লাল কাঁকড়ার সাথে দৌড়াদৌড়ি।
শুয়ে শুয়ে তাঁবুর জানালার ফাঁক দিয়ে তারা ও চাঁদের জ্যোৎস্না উপভোগের মত সুন্দর মুহুর্ত আর কি হতে পারে, তাই তো জীবনের সেরা কিছু রাতের একটি ছিল এই রাত। আমরা ৪ জন আড্ডা দিতে দিতে ঘুমিয়ে পরলাম একসময়। যখন ঘুম ভাংলো তখন ভোর ৬ টা, স্নিগ্ধ সমুদ্র দেখতে লাগলাম তাবুতে শুয়ে শুয়ে। তারপর নিজ হাতে কফি বানিয়ে কাপে চুমুক দিতে দিতে গাইলাম।
হাজার বছর ধ’রে আমি –
পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে –
নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি;
বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি;
আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক,
চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো –
নাটোরের বনলতা সেন।
সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে নিলাম। ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। আমাদের যেতে হবে সোনাদিয়া ও মারাংতাং পাহাড়ে ক্যাম্পিং করার জন্য। কিন্তু এই মুষলধারে বৃষ্টিতে রওনা দেওয়াটাও দূরুহ। অন্যদিকে আমরা এক্সট্রিম ট্রাভেলার এবং বাজেট ট্রাভেলার। তাই পরবর্তী লেখায় আরো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হচ্ছি।
সারাংশ
- ভ্রমণ তারিখঃ ২৪/০৮/২০২০ইং
- আজকের খরচঃ ৮৫০ টাকা