চন্দ্রনাথ পাহাড় (Chandranath Hill) বর্তমানে ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আলোচিত এক স্থান। কোলাহলমুক্ত নির্জনতা, চারদিকে সবুজ গাছপালা, বিভিন্ন পশু-পাখির ডাক, শীতল বাতাস, পাহাড়ের উপর থেকে আবছা দেখা সুবিশাল সমুদ্র, এই সব রোমাঞ্চকর অনুভূতি আপনাকে দেবে এই পাহাড়।
চন্দ্রনাথ পাহাড় কোথায় অবস্থিত
চন্দ্রনাথ পাহাড় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। এর উচ্চতা প্রায় ১১৫২ ফুট। হিন্দু ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান আর সুবিশাল সমুদ্র এই পাহাড়কে করেছে অনন্য। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরেই চন্দ্রনাথ মন্দির।
চন্দ্রনাথ পাহাড় কিভাবে যাবেন
চন্দ্রনাথ পাহাড় যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। ঢাকা থেকে হানিফ, শ্যামলী, এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস যায় চট্টগ্রাম। যে কোনো একটায় উঠে সীতাকুন্ড বাজারে নেমে যাবেন। ভাড়া নিবে নন এসি ৬৮০ টাকা, এসি ৮৫০/১৬০০ টাকা। তবে সুপারভাইজারকে আগে থেকে বলে রাখবেন আপনি সীতাকুন্ড বাজারে নামবেন।
এছাড়া বাস বা ট্রেনে ফেনী এসে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে উঠে চলে আসবেন সীতাকুন্ড বাজার। ভাড়া ৫০/৮০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকেও আসতে পারেন সীতাকুন্ড। চট্টগ্রামের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী থেকে ফেনী গামী বাসে আসতে পারেন সীতাকুন্ড। ভাড়া ৪০/৮০ টাকা। এছাড়া সিএনজি, প্রাইভেট কার রিজার্ভ করেও আসতে পারেন। সিএনজি ভাড়া ২৫০/৩০০ টাকা।
ঢাকা থেকে সীতাকুন্ড আসতে বাসে যে ভাড়া নিবে, সীতাকুন্ড থেকে ঢাকা যেতে তার থেকে কম ভাড়া নিবে। যদিও বাস একই কোম্পানির হয়। কিছু কোম্পানির বাস ঢাকার উত্তরা এবং গাবতলী পর্যন্ত আসে। তাই আপনার বাসার কাছাকাছি আসে এমন বাসের টিকেট কাটতে পারেন।
সীতাকুন্ড থেকে চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুন্ড বাজার থেকে নাস্তা সেরে সিএনজি ভাড়া করে চলে যাবেন চন্দ্রনাথ পাহাড়। সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা। পাহাড়ের নিচেই সিএনজি নামিয়ে দিবে। পাহাড়ে উঠার দুই পথ। হাতের বাম পাশের পথ দিয়ে উঠবেন। আর ডান পাশের পথ দিয়ে নামবেন। ডান পাশের পথে কম সময় লাগলেও বেশি কষ্টকর। বাম পাশের পথ একটু লম্বা হলেও বেশ সহজ আর ভালো।
পাহাড়ে উঠতে ৫০ থেকে ৬০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। আর নামতে ২৫/৩০ মিনিট সময় লাগবে। উঠার আগে নিচ থেকে বাঁশ/লাঠি, পানি, হালকা খাবার কিনে নিতে পারেন। লাঠি ভাড়ায় পাওয়া যায়। ৩০ টাকা জমা নিবে, ফেরত দিলে ২০ টাকা রিটার্ন দিবে। লাঠি নেয়া অতটা জরুরী না। প্রত্যেকে ১ লিটার পানি নিয়ে নিবেন। কেননা উপরে পানির দাম বেশি।
উঠার পথ অতটা খারাপ না। মোটামোটি হাঁটার অভ্যাস আছে এমন যে কেউ সহজেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে পারবে। অনেকেই নানান কথা বলে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। সাহস করে শুরু করে দিলেই ভয় কেটে যাবে। আর মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিয়ে উঠবেন। তাহলেই আর কোনো সমস্যা হবে না। বৃষ্টি থাকলে না উঠাই ভালো।
পাহাড়ে উঠার জন্য কোনো গাইডের প্রয়োজন নাই। সব সময়ই কেউনা কেউ উঠেই। তাই তাদের সাথে দল বেঁধে গল্প করতে করতে উঠে যাবেন। উঠা-নামা আর সেখানে কিছু সময় থাকা, সব মিলিয়ে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা যথেষ্ট। তবে অবশ্যই সকালে অথবা বিকালে উঠবেন। নাহলে গরমে কষ্ট পাবেন। সব থেকে ভালো সময় হলো খুব সকালে।
তবে সূর্য উঠার কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘন্টা পর পাহাড়ে উঠা শুরু করবেন। এবং সূর্য অস্ত যাবার ৩০ মিনিট পূর্বেই নামা শেষ করবেন। নাহলে ডাকাতির কবলে পড়তে পারেন। ২০/৩০ জনের পর্যটক দলকেও ডাকাতেরা কাবু করে ফেলে। তাই খুব সাবধান।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। তার মধ্যে সাইমুন, সৌদিয়া অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় থাকতে পারেন। অথবা চট্টগ্রাম এসেও থাকতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের হোটেল আছে।
কোথায় খাবেন
সীতাকুন্ডে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। তার মধ্যে সৌদিয়া, আপন, আল আমিন অন্যতম। পছন্দমতো যেকোন একটায় খেতে পারেন। তার মধ্যে আল আমিন রেস্টুরেন্ট এর খাবার সব থেকে ভাল মানের। অথবা চট্টগ্রাম এসেও খেতে পারেন। চট্টগ্রামে সব ধরণের রেস্টুরেন্ট আছে।
পাহাড়ে উঠার সময় কয়েকটা ছোট ছোট দোকান পাবেন। সেখানে পানি, বিস্কুট, বিভিন্ন পাহাড়ী ফল, ডাব ইত্যাদি পাওয়া যায়। দাম একটু বেশি নিলেও জরুরী প্রয়োজনে কিনে খেতে পারেন।
সীতাকুন্ডের দর্শনীয় স্থান
সীতাকুণ্ডে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। সব গুলো মোটামোটি কাছাকাছি হওয়াতে এক দিনে বেশ কয়েকটা কভার করা যায়। তবে এক রাত দুই দিন সময় নিয়ে আসলে প্রায় সব গুলো কভার করতে পারবেন। আপনার সময় বিবেচনা করে ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই করবেন। সীতাকুণ্ডের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো হলো:
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- সুপ্তধারা ঝর্ণা
- সহস্রধারা ঝর্ণা
- কমলদহ ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- গুলিয়াখালি বীচ
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
সতর্কতা এবং টিপস
- পাহাড়ে উঠার শুরুতেই প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া আছে। তা মেনে চলুন।
- সূর্য উঠার ১ থেকে দেড় ঘন্টা পর ট্রেকিং শুরু করুন।
- অতিরিক্ত খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- জোকের প্রাদুর্ভাব আছে। তাই ঘাস এড়িয়ে চলুন।
- কাঁধের ব্যাগ নিবেন। আর ব্যাগের ওজন যাতে কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- সাথে কয়েক প্যাকেট খাবার সেলাইন রাখবেন। উঠেই খেয়ে নিবেন।
- কম পক্ষে ১ লিটার পানি সাথে নিয়ে নিবেন।
- ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
- সাথে পাওয়ার ব্যাংক রাখুন।
- উপরে মন্দিরের কাছে পুলিশ ফাঁড়ি আছে। প্রয়োজনে তাদের সাহায্য নিতে পারেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।