বরিশাল বিভাগের দর্শনীয় স্থান

চর কুকরি মুকরি

Loading

নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
napittochara-trail-3
চর কুকরি মুকরি
napittochara-trail-3
চর কুকরি মুকরি
napittochara-trail-3
চর কুকরি মুকরি
Shadow

চোখের দৃষ্টির সীমানার পুরোটা ক্যানভাস জুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ। চোখ ধাঁধানো সবুজের সমারোহ আর শান্ত নিশ্চুপ প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি চর কুকরি মুকরি (Char Kukri Mukri)। প্রকৃতির বুকে নিজেকে বিলীন করে দিতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই দ্বীপ থেকে।

চর কুকরি মুকরি কোথায় অবস্থিত

চর কুকরি মুকরি বাংলাদেশের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত ছোট্ট এক দ্বীপ। অনেকটা সাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা এবং তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় এর অবস্থান। কুকরি-মুকরি ইউনিয়ন নবীনগর, বাবুগঞ্জ, রসুলপুর, আমিনপুর, শাহবাজপুর, মুসলিমপাড়া, চর পাতিলা ও শরীফপাড়া নিয়ে গঠিত।

চর কুকরি মুকরি এর ইতিহাস

ঐতিহাসিকভাবে তেমন কোনো সঠিক তথ্য না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয়, ১৯১২ সালে এ চর জেগে উঠে। তৎকালীন জার্মান যুবরাজ প্রিন্স ব্রাউন জনমানবহীন এই চরে শিকার করার জন্য জাহাজ নিয়ে আসেন। তিনি এসে এখানে কোনো মানুষের দেখা না পেলেও কিছু বিড়াল ও কুকুর দেখতে পান। এবং জার্মান ভাষায় বলেন বিড়াল ও কুকুর এর দ্বীপ। পরবর্তীতে জার্মান ভাষা থেকে অনূদিত হয়ে বাংলায় নাম হয়ে যায় চর কুকরি মুকরি।

যাওয়ার উপায়

চর কুকরি মুকরি যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। বিভিন্ন উপায়ে চরফ্যাশন আসা গেলেও সব থেকে ভালো উপায় হলো বেতুয়াগামী লঞ্চ। প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে চরফ্যাশন (বেতুয়া) এর উদ্দেশ্যে বেশ কিছু লঞ্চ ছেড়ে যায়।

তাদের মধ্যে কর্ণফুলী, টিপু, তাশরিফ উল্লেখযোগ্য। লঞ্চ গুলো সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮ টা নাগাদ ছাড়ে। ডেকের ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০। সিঙ্গেল কেবিন ১০০০, ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা। কর্ণফুলী লঞ্চ এর বেশিরভাগ এসি কেবিন। লঞ্চ গুলো উন্নত মানের এবং ভিতরে খাবারের ব্যবস্থা আছে।

সকাল ৬/৭ টার দিকে পৌঁছে যাবেন বেতুয়া ঘাট। ঘাট থেকে মোটর সাইকেল, অটো ভাড়া করে চলে যাবেন চরফ্যাশন সদর। অটো ভাড়া ৩০/৪০ টাকা, সময় নিবে ২০/২৫ মিনিট। চরফ্যাশন এসে দক্ষিণ আইচা যাওয়ার বাসে উঠে যাবেন। দক্ষিণ আইচা আসতে সময় নিবে ১ থেকে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। ভাড়া ৫০ টাকা।

দক্ষিণ আইচা থেকে অটো নিয়ে চলে যাবেন চর কচ্ছপিয়া। অটো ভাড়া ১৫/২০ টাকা। চর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে লোকাল ট্রলারে, তেতুলিয়া নদী পার হয়ে পৌঁছাবেন চর কুকরী মুকরী বাজারে। ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সময় দিবে ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। এছাড়া টিমের সাইজ বড় হলে ৬০০/৮০০ টাকায় ট্রলার রিজার্ভ করে নিতে পারেন।

চর কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৯টা ও দুপুর ১২ টায় চর কুকরি মুকরির জন্য লোকাল ট্রলার ছাড়ে। লোকাল ট্রলার আবার দুপুর ৩ টায় চর কুকরি মুকরি থেকে ছেড়ে চর কচ্ছপিয়া ফেরত আসে। তাই লোকাল ট্রলারে যেতে চাইলে সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

হাতে সময় কম থাকলে স্পিড বোটে করেও যেতে পারেন। জন প্রতি ভাড়া ১৫০ টাকা। সময় নিবে ২০ মিনিট। কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে খোলা ট্রলার, ছাউনি ওলা ট্রলার এবং বিভিন্ন রকমের স্পিড বোট পাওয়ায় যায়। আপনার বাজেট অনুসারে যে কোন একটি বেছে নিতে পারেন। রোদ থেকে বাঁচতে হলে ছাউনি ওলা ট্রলার সব থেকে ভালো হবে।

কোথায় থাকবেন

চর কুকরি মুকরিতে থাকার জন্য একটি রেস্ট হাউজ আছে। প্রতি রুমের ভাড়া ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা। এক রুমে ২ জন থাকার নিয়ম থাকলেও ৪ জন অনায়াসে থাকতে পারেন। প্রতি রুমে এসি আছে। রেস্ট হাউজে টেনিস কোর্ট, সুইমিংপুল (যদিও পানি ময়লা) আছে। সোলার দিয়ে এখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার হানিফ ভাইয়ের সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করে রুম বুকিং করে নিতে পারেন। হানিফ ভাই এর ফোন নাম্বার ০১৭৩৯-৯০৮০১৩।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা তার সেক্রেটারির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। উনারা থাকার একটা ব্যবস্থা করে দিবে। এছাড়া বাজারে যে দুইটি খাবারের হোটেল আছে তাদের বললেও তারা কোন বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে।

এছাড়া চরে ক্যাম্প করে থাকতে পারেন। এই চরের যেখানে খুশি ক্যাম্প করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ক্যাম্প করার জন্য এখানে আছে, বিশাল ফাঁকা জায়গা। এখানে সাইক্লোন সেন্টার ও দুটি এনজিওর অফিস আছে। কথা বলে সেখানেও থাকতে পারবেন।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি এনজিও এলাকার মহিলাদের ট্যুরিজম এর উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিজ্ঞ করে তুলেছেন। তারা তাদের বাড়িতে হোম স্টে সার্ভিস দিয়ে থাকে। এখানে আপনি কম খরচে পরিবার বা বন্ধু বান্ধব নিয়ে থাকতে পারবেন। এখানে পছন্দ মতো খাবার, বার বি-কিউ, ভালো মানের টয়লেট ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে।

চর কুকরি মুকরিতে এখন আগের মতো থাকা নিয়ে আর সমস্যায় পরতে হয়না। থাকার জন্য বেশ কিছু উপায় চালু হয়েছে। তাই নিশ্চিন্তে চলে আসতে পারেন চর কুকরি মুকরি।

কোথায় খাবেন

চর কুকরি মুকরি বাজারে দুটি খাবারের হোটেল আছে। নিমাই হোটেল অন্যটি মিজান ভাইয়ের হোটেল। অর্ডার দিলে আপনার চাহিদা মত মেনু রেডি করে দিবে। ব্যাকপ্যাকিং করেও নিজেরা রান্না করে খেতে পারবেন ৷ এই চরে লাকড়ির অভাব নেই ৷ এছাড়া স্থানীয় অনেক লোক আছে যারা ব্যাকপ্যাকারদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করে থাকে ৷

কি করবেন

চর কুকরি মুকরিতে পৌঁছে থাকার জায়গায় মালামাল রেখে বাইক বা অটো দিয়ে চলে যাবেন দক্ষিণ দিকের নারিকেল বাগান। সামান্য কিছু পথ হেটে যেতে হবে। জায়গাটা দারুন সুন্দর। বিশাল সমতল সবুজ মাঠ। এখানে অনেক নারিকেল গাছ আছে। গাছ থেকে নারিকেল পেরে খেতে পারেন। চারপাশ হেটে দেখতে পারেন। পানিতে নেমে গোসল করতে পারেন। ইচ্ছে হলে এখানে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারেন। বেশির ভাগ লোক এখানেই থাকে।

দর্শনীয় স্থান

চর কুকরি ঘুরে দেখার মত খুবই সুন্দর। বনের ভেতরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। বনের ভিতর দিয়ে ছোট ছোট খাল দিয়ে ট্রলার বা স্পিড বোটে যখন যাবেন তখন অনেকটা ভারতের কেরালা কেরালা ফিল হবে। খালের দুই পাশের গাছপালা গুলো উপরে এসে ছাদের মতো তৈরী হয়েছে। সুন্দরবন বা রাতারগুল এর মতো মনে হবে।

দেখতে পাবেন অনেক হরিণ, মহিষ আর শিয়াল। এই চরের কাছাকাছি আছে ঢাল চর, চর মানিক, সোনার চর, রুপার চর সহ বেশ কিছু চর। চাইলে কুকরি মুকরি থেকে ট্রলার রিসার্ভ করে ঘুরে আসতে পারেন ৷ এছাড়া আরো দেখতে পারেন:

পরামর্শ ও সতর্কতা

  • চর এলাকা, গাড়ির কোন ব্যবস্থা নাই, যাদের হাঁটার অভ্যাস নাই বা অনিহা তারা না যাওয়াই ভালো।
  • হরিণ শিকার থেকে বিরত থাকবেন। ইহা দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • এখানে বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই অবশ্যই পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন। বাজারে সোলার পাওয়া গেলেও, সেখানেও মোবাইল চার্জ করা অনেক সময়সাপেক্ষ।
  • স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
  • নদীতে গোসল করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। সাতার না জানলে বেশী দূর যাওয়ার দরকার নাই।
  • গ্রামীনফোন ও রবির নেটওয়ার্ক পাবেন এখানে। তাই এদের সিম সাথে রাখুন।
  • টিম মেম্বার কম হলে একটু বেশি সাবধানতা অবলম্বন করবেন। স্থানীয় কিছু দুষ্ট লোক গাইড হিসাবে যুক্ত হয়ে অবৈধ মালামাল দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। অনেক সময় ব্ল্যাক মেইল করে। টিমের সংখ্যা ৫/৬ জন বার তার বেশি হলে সমস্যা নাই।

4.5 12 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
1 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

1
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx