কক্সবাজার বাংলাদেশের সব থেকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। এখানে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় সমুদ্র সৈকত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২২ কি.মি।
কক্সবাজার কখন যাবেন
কক্সবাজার সারা বছরই যাওয়া যায়। একেক সময় একেক মজা। তবে শীতকালে গেলে বেশি মজা। যদিও তখন প্রচুর ভিড় থাকে। নভেম্বর মাস সব থেকে বেস্ট। তখন ভিড় একটু কম থাকে। আর বেশি কোলাহল না চাইলে ছুটির দিন এড়িয়ে গেলে ভালো। তখন বেশি ভিড় হয় না। হোটেল ভাড়া, যানবাহন ভাড়া তুলনামূলক ভাবে কমে যায়।
কক্সবাজার এর দর্শনীয় স্থান
কক্সবাজারে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কলাতলী বিচ, লাবনী বিচ, ইনানি বিচ, মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি, সোনাদিয়া দ্বীপ, রামু, মহেশখালী দ্বীপ, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
কক্সবাজার কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং প্লেনে কক্সবাজার (Cox’s Bazar) আসা যায়।
ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজার
প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি ও নন-এসি বাস ছেড়ে যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি। নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১৪০০ থেকে ২২০০ টাকা। বেশিরভাগ বাস সন্ধ্যার পর ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়, তবে দিনের বেলাতেও কিছু বাস চলাচল করে।
গাবতলী, শ্যামলী, কল্যাণপুর, পান্থপথ, উত্তরা, আরামবাগ, কমলাপুর, কাঁচপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব বাসের কাউন্টার রয়েছে। আপনি সরাসরি কাউন্টারে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন। এছাড়া সহজ, বিডি টিকেটস, বাস বিডি, শ্যামলী, গ্রীন লাইন ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে টিকেট কিনতে পারেন। অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে টিকেটের মূল্য পরিশোধ করা যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছাতে এসব বাস সাধারণত ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা সময় নেয়।
ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার
ঢাকা থেকে ট্রেনে এখন সহজেই কক্সবাজার যাওয়া যায়। বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রতিদিন দুটি ট্রেন চলাচল করে। পর্যটক এক্সপ্রেস সকাল ৬:১৫ মিনিটে, এবং কক্সবাজার এক্সপ্রেস রাত ১০:৩০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায়। এই ট্রেনগুলোর কক্সবাজার পৌঁছাতে প্রায় ৯ ঘণ্টা সময় লাগে। যাত্রাপথে ট্রেনটি ঢাকা এয়ারপোর্ট স্টেশনে ৫ মিনিট এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে ২০ মিনিটের যাত্রা বিরতি করে।
শোভন চেয়ার ৬৯৫ টাকা, স্নিগ্ধা ১৩২৫ টাকা, এসি বাথ ১৫৯০/২৩৮০ টাকা। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসেই টিকেট কাটতে পারেন। এছাড়া কাউন্টার থেকেও কাটতে পারেন।
ঢাকা থেকে প্লেনে কক্সবাজার
এছাড়া আকাশ পথেও কক্সবাজার আসা যায়। বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকেটের দাম বিভিন্ন হয়, তাই নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে গিয়ে টিকেটের মূল্য ও সময়সূচী দেখে নেওয়া ভালো। প্লেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে সময় নিবে প্রায় ৫০ মিনিট। আবার আকাশপথে প্রথমে চট্রগ্রাম এসেও সেখান থেকে সড়ক পথে কক্সবাজার যেতে পারবেন।কক্সবাজারে কোথায় থাকবেন
কক্সবাজারে এখন প্রচুর হোটেল, মোটেল, কটেজ আছে। এদের মধ্যে সায়মন বিচ রিসোর্ট, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সী গাল, ওশেন প্যারাডাইজ, লং বীচ, কক্স টুডে, হেরিটেজ, সী প্যালেস, কোরাল রীফ, নিটোল রিসোর্ট, আইল্যান্ডিয়া, বীচ ভিউ, সী ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট, উর্মি গেস্ট হাউজ, কোরাল রীফ, ইকরা বিচ রিসোর্ট, অভিসার, মিডিয়া ইন, কল্লোল, হানিমুন রিসোর্ট, নীলিমা রিসোর্ট উল্লেখ্য। বিভিন্ন হোটেলের ভাড়া বিভিন্ন রকম। আপনার প্রয়োজন অনুসারে বেছে নিন।
সাধারণত অফ সিজনে অগ্রিম হোটেল বুকিং না দিলেও চলে। কিন্তু সিজনে (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী) অগ্রিম বুকিং দিয়ে যাওয়াই ভালো। নাহলে ঝামেলায় পড়তে পারেন। অফসিজনে হোটেলের ভাড়া প্রায় অর্ধকে নেমে আসে। সুযোগ থাকলে কক্সবাজার নেমে কয়েকটি হোটেল দেখে একটু দরদাম করে নিতে পারেন। বীচ এবং মেইন রোড থেকে হোটেল যত দূরে হবে হোটেলের ভাড়া ততো কমতে থাকবে।
হোটেল খোঁজার ক্ষেত্রে রিকশাওয়ালা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শ নিতে পারেন। তাদেরকে আপনার বাজেট আর চাহিদা বলে দিলে তারাই আপনাকে ওই ধরণের হোটেলেই নিয়ে যাবে। তবে সাধারণত এরা যেখানে কমিশন পাওয়া যাবে আপনাকে সেখানেই নিয়ে যাবে। প্রয়োজনে হোটেলের ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েবাসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
কক্সবাজারে কিভাবে চলাফেরা করবেন
কক্সবাজার দেশের সেরা পর্যটন শহর। এখানে চলাফেরা করার জন্য মোটামুটি সব ধরনের যানবাহন পাওয়া যায়। প্রাইভেটকার, জিপ গাড়ি, চান্দের গাড়ি, রিক্সা, অটো রিক্সা, ইত্যাদি সব কিছুই সহজে ভাড়ায় পাওয়া যায়। বাজেট, টিমের সাইজ এবং সময় বিবেচনা করে যে কোন টি বেছে নিন। তবে শহরের ভিতরে, আশেপাশে চলাফেরা করার জন্য অটো রিক্সা সব থেকে ভালো।
মেরিন ড্রাইভে চাঁন্দের গাড়ি ভালো। উপরে খোলা থাকায় অন্যরকম মজা পাবেন। চাঁন্দের গাড়ির ভাড়া ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো। দরদাম করে নিবেন। এক গাড়িতে ১০/১২ জন বসা যায়। ইনানী গেলে চাঁন্দের গাড়ি বা সিএনজি নিবেন। তাহলে সময় কম লাগবে। একবার একটা ভাড়া নিয়ে বলে রাখলে প্রতিদিন সময় মতো ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে আসবে।
কোথায় খাবেন
এখন কক্সবাজারে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। চাইলে এসব রেস্টুরেন্টের যেকোনো একটাতে খেয়ে নিতে পারেন। তাদের মধ্যে পৌষি, ধানসিঁড়ি, রোদেলা, ঝাউবন, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। সিজন অনুসারে এখানে খাবারের দাম কম বেশি হতে পারে। একটু দূরে হলেও পৌষিতে (প্রধান শহরে যেটা) একবার হলেও খাবেন। আশা করি অনেক ভাল লাগবে।
আর কক্সবাজার এসে রূপচাঁদা মাছ খেতে ভুলবেন না যেন। সন্ধার পর ঝাউবনের পাশে প্রচুর মাছ ফ্রাই পাওয়া যায়। দরদাম করে একটা কিনে খেয়ে দেখতে পারেন। এখানে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়।
কোথায় শপিং করবেন
কক্সবাজারে শপিং করার জন্য অনেক গুলো মার্কেট আছে। বীচের পাশেই বেশ কিছু মার্কেট আছে। যেখানে বার্মিজ চকলেট, আচার, জুতা, জামাকাপড়, মুক্তার জিনিসপত্র, ক্যাপ, খেলনা, শুঁটকি ইত্যাদি পাবেন। পছন্দ মতো দরকার করে কিনে নিতে পারেন।
তবে চকলে, আচার কিনলে একটু দাম দিয়ে ভালো জিনিস কেনাই ভালো। প্রচুর ভেজাল মাল পাওয়া যায়। দোকানদারকে বললে ওরা আসল জিনিস দেবে। কক্সবাজার শহরেও বেশ কিছু মার্কেট আছে। শহরে ভালো কালেকশন পাবেন। আর শুঁটকি কিনলে শহর থেকে কেনাই ভালো। শহরে বিশাল শুঁটকি মার্কেট আছে। ড্রাইভারকে কে বললে দেখায় দিবে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।