কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের সব থেকে আকর্ষণীয় দুই ট্যুরিষ্ট স্পট। কক্সবাজারে আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুময় সমুদ্র সৈকত। অন্যদিকে সেন্ট মার্টিন হচ্ছে দেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ। নীল আকাশ, নীল পানি, সারি সারি নারিকেল গাছ, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা গাঙচিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে করেছে অনন্য। আসুন দেখে নেই স্বল্প সময়ে, কম খরচে এই দুই জায়গা ভ্রমণ করার কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান।
কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান
পাশাপাশি হলেও কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিন দুইটি আলাদা জায়গা। দুই জায়গায়ই আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। কক্সবাজার পার হয়ে সেন্ট মার্টিন যেতে হয়। আপনি প্রথমে কক্সবাজার ভ্ৰমণ করে পরে সেন্ট মার্টিন যেতে পারেন। অথবা প্রথমে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করে পরে কক্সবাজার আসতে পারেন। পুরো ব্যাপারটি আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে দুই পথেই কিছু সুবিধা, অসুবিধা আছে। সেগুলো মাথায় রেখেই আপনার ট্যুর প্ল্যান সাজাবেন।
তবে প্রথমে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করে পরে কক্সবাজার আসলে সব থেকে ভালো হয়। এক সাথে চার রাত তিন দিনে কক্সবাজার এবং সেন্ট মার্টিন মোটামোটি ভাবে ভ্রমণ করার যায়। তবে পাঁচ রাত চার দিন হলে সব থেকে ভালো হয়। ৪ রাত ৩ দিনের কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান (Cox’s Bazar Saint Martin Tour Plan) মোটামোটি এই রকম:
প্রথম দিন
ঢাকা থেকে রাতের বাসে চলে আসবেন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ। ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। এদের মধ্যে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাসে সময় নিবে ১০/১২ঘন্টা। বাস ভাড়া ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
বাসগুলো সাধারণত সকাল ৮:০০ টার মধ্যেই টেকনাফ চলে আসে। জাহাজের টিকেট আগে থেকে না কেটে থাকলে টেকনাফ পৌঁছে প্রথমেই টিকেট কেটে নিবেন। এর পর সকালের নাস্তা করে নিবেন।
টেকনাফ থেকে জাহাজ, ট্রলার বা স্পিড বোটে চলে যাবেন সেন্ট মার্টিন। জাহাজে যাওয়াই সব থেকে নিরাপদ। প্রতিদিন বেশ কিছু জাহাজ টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে রুটে আসা-যাওয়া করে। তাদের মধ্যে কুতুবদিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, ঈগল, সুন্দরবন ও গ্রীনলাইন ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য। জাহাজগুলো সকাল ৯.০০ থেকে ৯.৩০ মিনিটে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। বিকাল ৩.০০ থেকে ৩.৩০ মিনিটে সেন্টমার্টিন থেকে ছেড়ে যায়। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা আছে।
জাহাজে শ্রেনীভেদে জনপ্রতি আপ-ডাউন ভাড়া ৬৫০/১৬০০ টাকা। সময় নিবে ৩ ঘন্টার মতো। ট্রলার ভাড়া ৮০০ টাকার মতো। অথবা জন প্রতি ১০০ টাকা করেও যেতে পারেন। তবে ট্রলারে যাওয়া লাইফ রিস্ক। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সেন্ট মার্টিন পৌঁছে
জাহাজগুলো দুপুর ১ টার দিকে সেন্ট মার্টিন চলে আসে। সেন্ট মার্টিনে বিভিন্ন মানের হোটেল এবং রিসোর্ট আছে। আপনার পছন্দমতো হোটেলে চেকইন করে হালকা বিশ্রাম করে চলে যাবেন উত্তর পূর্ব দিকের বিচে (হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইজ এর কাছে)। ১/২ ঘন্টা গোসল করে রুমে ফেরত এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নিবেন। এর পর চলে যাবেন পশ্চিম দিকের বিচে। সন্ধ্যার সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে কাটাতে পারেন।
অথবা সাইকেল ভাড়া করে পুরো দীপ চক্কর দিতে পারেন। পুরো সেন্ট মার্টিন দীপ কভার করতে ৩/৪ ঘন্টা লাগতে পারে। পায়ে হেঁটেও ঘুরে বেড়াতে পারেন। এখানে বিভিন্ন ধরণের ফিশ ফ্রাই পাওয়া যায়। ইচ্ছে মতো খেতে পারেন। আরো কিছু সময় বীচে অতিবাহিত করে ডিনার করে রুমে ফিরে আসবেন। চাইলে রাতে বার বি কিউ পার্টি করতে পারেন। তাহলে হোটেলে আগে থেকেই বলে রাখবেন। তারা ব্যবস্থা করে দিবে। এর পর ঘুমিয়ে পড়ুন।
দ্বিতীয় দিন:
অনেক সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে যাবেন ছেঁড়া দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন এর জেটি থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার স্পীড বোট ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার পাওয়া যায়। ভাড়া সাধারণত সিজনের উপর নির্ভর করে। জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকায় ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।
আর যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল ভাড়া নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন। তবে অবশ্যই জোয়ার ভাটার সময় জেনে নিবেন।
ছেঁড়া দ্বীপে গোসলও করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ছেঁড়া দ্বীপের শেষ মাথায় পশ্চিম দিকে গিয়ে পানিতে নামাই ভালো। এখানে কোরাল তুলনামুলক কম আর ঢেউ গুলো চমৎকার। দুই ঘন্টা থেকে ফিরে আসুন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ।
সকাল ১১ থেকে ১১:৩০ এর মধ্যে হোটেল থেকে চেক আউট করতে হয়। এ জন্য সব থেকে ভালো হয় ব্যাগ গুছিয়ে নিচে অভ্যর্থনা কক্ষে রেখে গেলে। তাহলে দেরি হলেও সমস্যা নাই। হোটেলে ফ্রেশ হবার আলাদা রুম থাকে। সেখানে ফ্রেশ হয়ে জাহাজের জন্য অপেক্ষা করবেন।
জাহাজ ছাড়বে ৩ টা থেকে ৩:৩০ এর মধ্যে। এর আগেই লাঞ্চ করে নিন। হাতে সময় থাকলে বীচের কাছে গিয়ে বসে থাকতে পারেন। তবে কোনো ভাবেই জাহাজ মিস করবেন না। তাহলে ট্রলারে ফিরতে হবে।
টেকনাফ ফিরে বাসে চলে আসুন কক্সবাজার। এছাড়া ইচ্ছে করলে নৌপথে সেন্ট মার্টিন থেকে কক্সবাজার আসতে পারেন। তখন জাহাজের ওয়ান ওয়ে টিকেট কাটবেন।
কক্সবাজার পৌঁছে
রাত ৯ টার মধ্যে চলে আসবেন কক্সবাজার। কক্সবাজার পৌঁছে আপনার পছন্দমতো হোটেলে চেকইন করে নিন। এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। রাতের খাবার খেয়ে চলে যেতে পারেন বিচে। কিছু সময় কাটিয়ে রুমে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ুন।
তৃতীয় দিন:
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে চলে যাবেন লাবনী বিচ। দুপুরে হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করে নিন। লাঞ্চ শেষে সিএনজি/চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলে যাবেন ইনানি বিচ। ভুলেও অটো নিবেন না। তাহলে সময় কুলাবেনা। দুপুর ১২ টার মধ্যে হোটেল থেকে চেকআউট করতে হয়। তাই বের হবার সময় ব্যাগ গুছিয়ে নিচে অভ্যর্থনা কক্ষে রেখে যাবেন।
যাবার পথে হিমছড়ি দেখে নিবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইনানি বিচে থেকে চলে আসবেন কক্সবাজার। রাতে যেতে পারেন কলাতলী বিচ। অথবা লাবনী বিচের আগে ঝাউবনের কাছে মাছ ভাজা খেতে পারেন। মাছ খেয়ে চলে যাবেন পাশেই বার্মিজ মার্কেটে (যদি প্রয়োজন থাকে)।
হোটেল থেকে ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ুন। সব ঠিক থাকলে সকালের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছে যাবেন।
কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান নিয়ে শেষ কথা
হাতে সময় থাকলে কক্সবাজারে ২ দিন এবং সেন্টমার্টিনে ২ দিন থাকতে পারেন। তাহলে আশেপাশের সব জায়গা ভালো করে ঘুরে দেখতে পারবেন। আর ট্যুর ও বেশ আরামদায়ক হবে। আশা করি এই কক্সবাজার সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্ল্যান, আপনার পরবর্তী কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ভ্রমণ কে আরো সহজ এবং সুন্দর করবে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।