দামতুয়া জলপ্রপাত (Damtua Waterfall) বা দামতুয়া ঝর্ণা বিশাল দৈত্যাকার আকৃতির এক জলপ্রপাত। আকৃতি প্রকৃতি ও সৌন্দর্যের দিক থেকে দামতুয়া ঝর্ণা অন্যতম। সৌন্দর্য দেখতে হলে কষ্ট করা লাগে। পরিশ্রম ছাড়া প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর রূপটি উপভোগ করা যায়না। দামতুয়া ঝর্ণা যাওয়ার রাস্তাটি বেশ দূর্গম ও এডভেঞ্চারাস। ঝর্ণার জলে গা ভেজাতে চাইলে এই পথ পাড়ি দিতেই হবে। তাই এই ঝর্ণা এডভেঞ্চার প্রিয়দের বর্তমান গন্তব্য।
দামতুয়া জলপ্রপাত কোথায় অবস্থিত
দামতুয়া জলপ্রপাত বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় অবস্থিত। আলীকদম বাসস্ট্যান্ড থেকে ‘আলীকদম-থানচি’ রাস্তা ধরে ১৭ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে আদু মুরং পাড়া। এখান থেকে ৬/৭ কিলোমিটার দূরে দামতুয়া ঝর্ণার অবস্থান।
দামতুয়া যাওয়ার উপায়
দামতুয়া যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায়। এখন রাজধানী ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস সরাসরি আলীকদম আসে। তাদের মধ্যে হানিফ, শ্যামলী উল্লেখযোগ্য। বাস ভাড়া ৮৫০ টাকা। রাতের বাসে রওনা দিলে সকালেই পৌঁছে যাবেন আলীকদম।
এছাড়া কক্সবাজারগামী যেকোন বাসে উঠে চকরিয়া নেমে সেখান থেকে যেতে পারেন আলীকদম। ঢাকা থেকে চকরিয়া বাস ভাড়া ৮৫০/১৪০০ টাকা। চকরিয়া থেকে আলীকদম যাওয়ার লোকাল বাস আছে। এইসব বাস প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত ৩০ মিনিট পর পর আলীকদমের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ৬০ টাকা। সময় নিবে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
এছাড়া লোকাল জীপ বা চান্দের গাড়িতে চকরিয়া থেকে আলীকদম যেতে পারবেন। লোকাল ভাড়া নিবে ৬০/৬৫ টাকা। পুরা রিজার্ভ নিলে ১২০০/১৫০০ টাকা নিবে।
আলীকদম থেকে দামতুয়া
আলীকদম বাসস্ট্যান্ড অথবা পানবাজার থেকে বাইক বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে আদু মুরং পাড়া। দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। বাইক ভাড়া জনপ্রতি ২৫০/৩০০ টাকা। এক বাইকে ২ জন বসা যায়। টিমের সাইজ বড় হলে চান্দের গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন।
১০ কিলোমিটার যাওয়ার পর আর্মি ক্যাম্প এ রিপোর্ট করা লাগে। সবার নাম ঠিকানা, ফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা, ন্যাশনাল আইডির কপি জমা দিতে হবে। সব থেকে ভালো হয় টিমের সবার ইনফরমেশন একটা কাগজে প্রিন্ট করে ঢাকা থেকে কয়েক কপি সাথে নিয়ে আসবেন। নাম ঠিকানা, ফোন নাম্বার, বাসার ঠিকানা, ন্যাশনাল আইডির নাম্বার টেবিল আকারে প্রিন্ট করলেই হবে।
ফিরার পথে আবার একই জায়গায় রিপোর্ট করা লাগে। তাই বিকাল ৫ টার আগেই চলে আসতে হবে। নাহলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
আদু মুরং পাড়া নেমে বাকি পথ ট্রেকিং করে যেতে হবে। এখান থেকে ঝর্ণায় আসতে যেতে পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং হবে প্রায় ১২ কিলোমিটার। সময় লাগবে ৬ ঘন্টা। এখান থেকে একজন গাইড নিতে হবে। গাইড ভাড়া ৫০০/৮০০ টাকা। তবে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। আর এখানে বেশ কয়েকটি ঝর্ণা আছে। কোন কোন ঝর্ণা যাবেন তাও ফাইনাল করে নিবেন।
ট্রেকিং শুরু আগে এখান থেকে শুকান খাবার কিনে নিবেন। দুপুরের লাঞ্চ ও এগুলা দিয়েই সারতে হবে।
কোথায় থাকবেন
দামতুয়া ঝর্নার আসেপাশে থাকা যায় না। আর দরকার ও নাই। সারাদিন ঘুরে আবার রাতের বাসে ঢাকা ফিরে আসতে পারবেন।
এর পরেও যদি থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে আলীকদমে উপজেলা রোডে দ্যা দামতুয়া ইন অথবা জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকতে পারেন। অথবা পান বাজারে একটি বোর্ডিং আছে। সেখানেও থাকতে পারেন।
কোথায় খাবেন
আলীকদমে বেশ কিছু খাবারের হোটেল আছে। সেখানে খেতে পারেন। অথবা পান বাজারেও কিছু হোটেল আছে। সেখানেও খেতে পারেন। ট্রেকিং শুরু করার পূর্বে সাথে হালকা কিছু খাবার যেমন চকলে, খেজুর, বিস্কুট, কলা নিয়ে নিবেন। আদু মুরং পাড়া তে টং এর দোকান আছে। সেখানে হালকা নাস্তা করার কিছু পাবেন।
ট্রাভেল টিপস এবং সতর্কতা
- এডভেঞ্চার ট্রিপ। ৭/৮ ঘন্টা পাহাড়ি রাস্তায় ট্রেকিং করতে হবে। যাদের সমস্যা আছে না যাওয়াই ভালো।
- ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক মেডিসিন গ্রহন করা অত্যাবশ্যক। ওডোমস ক্রিম বা মশা নিরোধক রিস্ট ব্যান্ড সাথে নিলে ভালো হয়।
- প্যারাসিটামল, গ্যাসের ঔষধ, স্যালাইন ইত্যাদি দরকারি ঔষধ সাথে রাখুন।
- কেবল কাঁধের ব্যাগ সাথে নিবেন এবং ব্যাগের ওজন যত কম হয় সেই দিকে খেয়াল রাখুন।
- বিদ্যুৎ নাই। তাই মোবাইল, পাওয়ার ব্যাংক চার্জ দিয়ে রাখুন।
- ভালো গ্রিপের জেতা ব্যবহার করতে হবে।
- আদিবাসীদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
- অযথা সাহস দেখানো যাবেনা।
- শিশু, বয়স্কদের না নেওয়া ভালো।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
সময় থাকলে আশেপাশের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে যেতে পারেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।