ভুটানের দর্শনীয় স্থান

দোচুলা পাস, ভুটান

Loading

দোচুলা পাস

দোচালা পাস বা দোচুলা পাস (Dochula Pass) ভুটানের সব থেকে সুন্দর পাস। এটি রাজধানী থিম্পু থেকে পুনাখা শহরে যাবার পথে পরে। পাহাড়ী এলাকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবার সময় দুই স্থানের মাঝখানের সব থেকে উঁচু জায়গাকে পাস বলে। দোচুলা পাস থিম্পু থেকে পুনাখা যাবার পথের সব থেকে উঁচু জায়গা, যার উচ্চতা প্রায় ১০০০০+ ফিট।

দোচুলা পাসের ইতিহাস

বেশ কয়েক বছর আগে ভারতীয় বিদ্রোহীরা (আসামের উলফা) ভূটানের সীমানা ব্যবহার করে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চেয়েছিল। ভূটানের তৎকালীন রাজা জিগমে সিংহে ওয়াংচুক এই বিদ্রোহীদের দমন করেন। এইখানেই ২০০৩ সালে ভারতীয় বিদ্রোহীদের সাথে ভুটানি সৈন্যদের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বেশ কিছু ভূটানীজ সৈন্য মারা যায়। রানীমাতা আসি দরজি ওয়াংমু ওয়াংচুক এই মন্যুমেন্ট তৈরী করান সেই সব ভূটানীজ সৈনিকদের স্মরণে। ২০০৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্তম্ভে এক সাথে একশত আটটি স্টুপার রয়েছে। এর তিনটি স্তর আছে। প্রথম স্তরে আছে ৪৫ টি স্টুপার, দ্বিতীয় স্তরে ৩৬ টি স্টুপার, শেষ স্তরে ২৭ টি স্টুপার। আর মাঝ খানে রয়েছে বড় একটি স্টুপার।

দোচুলা পাস কোথায় অবস্থিত

দোচুলা পাস রাজধানী থিম্পু থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দুরুত্বে অবস্থিত। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০২০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত। এটি ভুটানের সব থেকে পরিচিত এবং সুন্দর পাস। ভুটানের বর্তমান রাজধানী থিম্পু থেকে পূর্বের রাজধানী পুনাখা যেতে হলে এই পাস অতিক্রম করেই যেতে হয়।

দোচুলা পাসে কি দেখবেন

দোচুলা পাস প্রায় সময়ই সাদা মেঘে ঢাকা থাকে। এখানে রয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, মন্দির, দূরে দেখার জন্য বড় একটি দূরবীক্ষিন যন্ত্র, ক্যাফেটেরিয়া, আর সুন্দর বাগান। দোচুলা যাবার রাস্তাটিও বেশ চমৎকার। মাঝে মাঝে মেঘ এসে রাস্তা ঢেকে দেয়। রাস্তার দুইপাশে বেশ লম্বা লম্বা গাছ। প্রায় সবগুলো গাছের ডাল নিচের দিকে হেলানো।

ডিসেম্বর-জানুয়ারির দিকে এখানে অনেক ভারি তুষারপাত হয়। সেই তুষারপাতের চাপে ডাল গুলোর এই অবস্থা। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই বেশ ঠান্ডা অনুভব করবেন। বাতাস ও থাকে বেশ। পায়ে হেটে হেটে উপরে উঠে যাবেন। উঠার সাথে সাথেই শাসকস্ট হতে পারে।

অতিরিক্ত উচ্চতা আর কম অক্সিজেনের জন্যই এমনটা হয়। এমন হলে একটু রেস্ট নিয়ে নরমাল হবার চেষ্টা করবেন। বেশি বেশি পানি খাবেন। এর একপাশ অনেক খারা এবং ঢালু। যাদের উচ্চতায় সমস্যা আছে তারা একটু সাবধানে যাবেন।

মেঘ, বৃষ্টি আর কুয়াশা না থাকলে এখান থেকে হিমালয় পর্বতমালার মোট দশটি পর্বতচুড়া দেখা যায়। এটি ভুটানের অন্যতম একটি দর্শনীয় ও পবিত্র স্থান। পাহাড়ের চূড়ায় এ জায়গাটি একেবারেই ছবির মতো সাজানো৷ ভুটান ভ্রমণে গেলে সবাই অবশ্যই এই জায়গাটি ঘুরে দেখবেন। জায়গাটিতে নভেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বরফ পড়ে।

এখানে একটি সুন্দর ক্যাফেটেরিয়া আছে। ইচ্ছে হলে কফি-স্ন্যাকস খেয়ে নিজেকে চাঙা করে নিতে পারেন। কারো যদি পুনাখায় যেয়ে রাফটিং করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে এখান থেকেই যোগাযোগ করতে পারেন। এই ক্যাফেটেরিয়াতেই যোগাযোগের ফোন নম্বর দেয়া আছে। যারা মোটর বাইক ভাড়া নিতে চান তারাও এই খান থেকে নিতে পারেন

দোচুলা পাস কিভাবে যাবেন

দোচুলা পাস যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে ভুটানের রাজধানী থিম্পু। থিম্পু এসে পুনাখা শহর যাবার পারমিশন নিতে হবে। কেননা ভুটানের বিভিন্ন শহরে প্রবেশ করার জন্য আলাদা করে পারমিশন নিতে হয়। তার পর থিম্পু থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যাবেন দোচুলা পাস।

সতর্কতা

অতিরিক্ত উচ্চতার কারণে মাউন্টেন সিকনেস হতে পারে। এতে শরীরের অক্সিজেন লেভেল কমে যায়। তাই শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘুড়ানো বা বমি হতে পারে। তাই বেশি বেশি করে পানি খাবেন। কিছু ঔষধ আছে যা দেহের অক্সিজেনর পরিমান বাড়ায়। সেগুলা খেতে পারেন। খুব বেশি কিনারে যাবেন না, পা পিছলে পরে যেতে পারেন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।

4.5 2 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
2 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

2
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx