বাউল সম্রাট লালনকে মৃত্যুর পর যেখানে সমাহিত করা হয় সেখানেই শিষ্যরা গড়ে তোলে তার মাজার। এই মাজার ফকির লালন শাহের মাজার (Fakir Lalon Saher Mazar) বা স্থানীয় ভাষায় লালনের আখড়া নামে সুপরিচিত। প্রতি বছর উনার মৃত্যবার্ষিকীতে ভক্তদের পাশাপাশি এখানে ছুতে আসে লাখো পর্যটকের দল।
লালন শাহের মাজার কোথায় অবস্থিত
ফকির লালন শাহের মাজার বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় অবস্থিত। ছেউড়িয়া নামক স্থানে এর অবস্থান। এই মাজারটি এখন বাউলদের তীর্থস্থান। মাজারের পাশে আছে লালন মিউজিয়াম। লালনের বসার জলচকি, একটি দরজা, ভক্তদের ঘটি-বাটি ও বেশ কিছু দুর্লভ ছবি এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। মিউজিয়ামের প্রবেশমূল্য ২ টাকা। এখানে আরো আছে লালনের আবক্ষমূর্তি, একতারার ভাস্কর্য।
প্রতিবছর দুইবার লালনের আখড়ায় লালন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। একবার কার্তিক মাসের ১ তারিখ, আরেকবার দোল পূর্ণিমা উৎসবের সময়। কার্তিক মাসের ১ তারিখ বিশাল মেলা হয়। তখন দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর লালন ভক্ত এখানে ভিড় করে। সারারাত লালন গান হয়। মাজারকে নানা সাজে সজ্জিত করা হয়। গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়।
লালনের আখড়া
লালন ছেউড়িয়াতে একটি আখড়া তৈরি করে সেখানে শিষ্যদের নীতি ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতেন। উনার শিষ্যরা উনাকে “সাঁই” বলে সম্বোধন করত। প্রতি শীতে তিনি আখড়ায় একটি ভান্ডারা (মহোৎসব) আয়োজন করতেন। উৎসবে সহস্রাধিক শিষ্য ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক একত্রিত হত। সেখানে সংগীত ও বিভিন্ন আধ্যাতিক বিষয়ে আলোচনা হতো।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে লালন শাহের মাজার বাস এবং ট্রেন দুই ভাবেই যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলি বাসস্ট্যাড থেকে এসবি, শ্যামলী, হানিফ ইত্যাদি পরিবহন কোম্পনীর এসি/নন-এসি বাস কুষ্টিয়া যায়। বাস ভাড়া ৪৫০/৬৫০ টাকা। বাসে কুষ্টিয়ার মজমপুর গেটে নেমে যাবেন। সেখান থেকে অটো বা রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন লালনের মাজার। এছাড়া ঢাকা-কুমারখালী রুটেও বেশ কিছু বাস চলাচল করে।
সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্র এক্সপ্রেস ট্রেনে যেতে পারেন। ট্রেনে গেলে পোড়াদহ বা ভেড়ামারা স্টেশনে নেমে যাবেন। পোড়াদহ বা ভেড়ামারা থেকে বাস বা সিএনজি তে কুষ্টিয়া শহরে এসে, রিকশা নিয়ে চলে যাবেন লালনের মাজার। শহরের যেকোনো জায়গা থেকে রিকশা বা অটো ভাড়া ২০/৩৫ টাকা।
কোথায় থাকবেন
কুষ্টিয়া শহরে মোটামুটি মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে। পছন্দমতো একটায় থাকতে পারেন। হোটেল রিভার ভিউ, হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনাল তাদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়া এন এস রোড এবং মজমপুর রোডেও বেশ কিছু মাঝারি মানের হোটেল আছে।
কোথায় খাবেন
কুষ্টিয়া শহরে মোটামুটি মানের বেশ কিছু খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট আছে। পছন্দমতো যেকোন একটায় খেতে পারেন। শিল্পী হোটেল, জাহাঙ্গীর হোটেল, খাওয়া-দাওয়া হোটেলে, শফি হোটেল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কুষ্টিয়া আসলে এখানকার তিলের খাজা, কুলফি এবং পেয়ারা মিষ্টি অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়া ছাড়াও আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। সময় নিয়ে সেগুলোও দেখে যেতে পারেন। রবীদ্রনাথ ঠাকুরের কুটি বাড়ি, মীর মোশাররফ হোসেনের বাস্তুভিটা, টেগর লজ, গড়াই নদীর তীরে রেনইউক বাধ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এইসব জায়গা রিকশা বা ইজি বাইক নিয়ে সহজেই ঘুরে দেখতে পারেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।