বরিশাল বিভাগের দর্শনীয় স্থান

ভাসমান পেয়ারা বাজার

Loading

ভাসমান বাজারের কথা বললে আমাদের চোখের সামনে কেবল ইতালি, থাইল্যান্ড, ভারতে পানির উপরে ভেসে চলা কোনো বাজারের দৃশ্যই ভেসে উঠে। কিন্তু আমাদের দেশেই যে রয়েছে সুন্দর এক ভাসমান পেয়ারা বাজার (Floating Guava Market) তা কয়েক বছর আগেও তেমন পরিচিত ছিলোনা। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে এই বাজারের গল্প এখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আঁকাবাঁকা খাল জুড়ে পেয়ারা বোঝাই নৌকায় বেচাকেনা চলে সারাদিন।

ভাসমান পেয়ারা বাজার কোথায় অবস্থিত

বাংলাদেশের দক্ষিণের তিন জেলা বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুরের বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে এশিয়া মহাদেশের সব থেকে বড় পেয়ারা বাগান। পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠী উপজেলার আটঘড়, কুড়িয়ানা এলাকার কয়েকজন কৃষক প্রথমে শখের বসে শুরু করে পেয়ারা বাগান।

আজ এর পরিধি অনেক বেড়ে গেছে। আশেপাশের এলাকার শত শত কৃষক এখন পেয়ারার চাষ করে। জমি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বলে এরা দুপাশের মাটি তুলে মোটা আইল বানিয়ে সেখানে পেয়ারা গাছ লাগায়। যার ফলে পেয়ারা গাছের সাড়ির দুপাশে তৈরি হয় নালা। এই নালায় সহজে ডিঙ্গি নৌকা চলে। কৃষকেরা নৌকা নিয়ে পাকা পেয়ারা সংগ্রহ করে।

তিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় বসে পেয়ারার বাজার। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলো পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার ভিমরুলি, আটঘর, কুড়িয়ানা বাজার। এর মধ্যে ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার সব থেকে বড়। এই বাগান পানির উপরে ভাসমান। অনেকটা থাইল্যান্ডের ফ্লোটিং মার্কেটের মতো।

বাগান মালিকেরা নৌকায় করে পেয়ারা নিয়ে আসে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বড় বড় ইঞ্জিন বোট নিয়ে সেখানে হাজির হয় পেয়ারা কেনার জন্য। পেয়ারা কেনা হয় মন হিসাবে। পরে সেগুলো চলে যায় ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এখন নাকি বিদেশেও রপ্তানী হয়।

ভাসমান পেয়ারা বাজার কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে এই ভাসমান পেয়ারা বাগান সড়ক এবং নদী পথে বিভিন্ন ভাবে যাওয়া যায়। প্রতিদিন সদরঘাট হতে রাত ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত হুলার-হাট গামী বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। পছন্দমত যে কোন একটায় উঠে পড়ুন। ভাড়া নেবে ডেকে ২০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৯০০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৮০০ টাকা।

পর দিন সকাল ৫/৬ টায় পৌঁছে যাবেন ইন্দুর-হাট ঘাটে (নেছারাবাদ)। এখানে নেমে নাস্তা করে একটা ট্রলার ভাড়া করে ফেলুন। ৬/৭ ঘন্টার জন্য ভাড়া নিবে ১৫০০ টাকা। প্রথমে আটঘর বাজার, তারপর কুড়িয়ানা বাজার ঘুরে, ভিমরুলি বাজার চলে যাবেন।

ফেরার সময় ভিমরুলি হয়ে স্বরূপকাঠি চলে যাবেন। বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠে গুঠিয়া নেমে যাবেন। ভাড়া নিবে ৩০ টাকা। এরপর অটোতে দুর্গা-সাগর দিঘী, ভাড়া ১০ টাকা। এরপর এখান থেকে বাসে করে বরিশাল, ভাড়া ২০ টাকা। বরিশাল থেকে লঞ্চে ঢাকা। বরিশাল থেকে রাত ৮ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত লঞ্চ ছাড়ে।

আর সড়ক পথে যেতে হলে, প্রথমে বরিশাল আসতে হবে। বরিশালের রূপাতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে খুলনাগামী বাসে উঠে ঝালকাঠি পার হয়ে কির্তীপাশা মোড়ে নামিয়ে দিতে বলবেন। ভাড়া নেবে ৬০ টাকা। সেখান থেকে অটোতে ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার যেতে পারবেন, ভাড়া ২০/৩০ টাকা।

কোথায় খাবেন

দুপুরে খেতে পারেন কুড়িয়ানা বাজারে। এখানে সকাল সন্ধ্যা হোটেলের খাবার বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় লোকজন একে বৌদির হোটেল নামে ডাকে। এখানকার রান্না খুবই সুস্বাদু।

কোথায় থাকবেন

সারাদিন ঘুরে রাতে থাকতে চাইলে ঝালকাঠি শহরে চলে আসুন। এখানে সাধারণ মানের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস, আরাফাত বোডিং, হালিমা বোডিং ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভাড়া ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে ভালো কোনো হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে হবে বরিশাল শহরে।

কখন যাবেন

জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাস হলো পেয়ারার মৌসুম। তখন গেলেই সব থেকে ভালো হয়। তবে বন্যা হচ্ছে কিনা এটা খেয়াল রাখবেন। তখন না যাওয়াই উত্তম। আর পেয়ারার মৌসুম শেষ হলে আসে আমরার মৌসুম।

4.7 3 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
1 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

1
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx