যাদুকাটা নদী বা যদুকাটা নদী বা জাদুকাটা নদী (Jadukata River) রূপ আর সম্পদের নদী। এখানে প্রকৃতি তার অকৃপণ হাতে বিলিয়ে দিয়েছে অফুরন্ত সম্পদ, আর অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য। নদীর স্বচ্ছ পানি, নীল আকাশ এবং সবুজ পাহাড় একসাথে মিলে অপূর্ব এক সুন্দর ক্যানভাস তৈরী করেছে।
যাদুকাটা নদী কোথায় অবস্থিত
যাদুকাটা নদী বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। যাদুকাটা নদী ভারতের খাসিয়া পাহাড় হতে উৎপত্তি হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে তাহিরপুর উপজেযায় এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়ে আবার বিশ্বম্ভরপুরে প্রবেশ করেছে। এর পর সেখান থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে জামালগঞ্জ উপজেলা শহরের নিকট রক্তি নামে সুরমা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।
এই নদীর দৈর্ঘ প্রায় ৩২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৭ মিটার, গভীরতা ৮ মিটার। এই নদীতে সারা বছরই কম বেশি পানি থাকে। বর্ষা কালে পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর দুই কূলে জেগে ওঠে বিশাল বালু চর। চরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলে পানির প্রবাহ।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এই নদীর রূপের যেন শেষ নেই। এর রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রায় সারা বছরই হাজার হাজার দর্শনার্থী ও পর্যটক এখানে ছুটে আসে। তারা ডিঙ্গি নৌকায় ভেসে, পানিতে নেমে, নদীর তীর ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে যাদুকাটার সৌর্ন্দয উপভোগ করে।
এই নদী থেকে বালু, পাথর এবং কয়লা আহরণ করে অনেক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। আহরিত এইসব বালু, পাথর এবং কয়লা পৌঁছে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
যাদুকাটা নদীর ইতিহাস
যাদুকাটা নদীর আদি নাম রেণুকা। জনশ্রুতি আছে, এই নদী তীরের কোন এক গাঁয়ের বধূ তার শিশু পুত্র যাদুকে কোলে নিয়ে একদিন এই নদীর মাছ কাটছিল। হটাৎ অন্যমনস্ক হয়ে তিনি মাছের পরিবর্তে তার কোলের শিশুকে কেটে ফেলেন। পরবর্তীতে সেই প্রচলিত কাহিনী থেকেই নদীটির নাম হয়ে যায় যাদুকাটা।
যাদুকাটা নদী কিভাবে যাবেন
যাদুকাটা নদী দেখতে হলে প্রথমেই আসতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকার গাবতলী, পান্থপথ, আরামবাগ, ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে হানিফ, শ্যামলী, এনা, মামুন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস সুনামগঞ্জ যায়। নন এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। যেতে সময় নিবে প্রায় ৭ ঘন্টা। সরাসরি কাউন্টার থেকে অথবা অনলাইনে বাসের টিকেট কাটা যায়।
সুনামগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা মোটরসাইকেল ভাড়া করে চলে যান লাউড়ের গড়। সেখান থেকে যাদুকাটা নদী দেখা যায়। মোটরসাইকেল ভাড়া ২০০/২৫০ টাকা। এক মোটরসাইকেলে দুইজন উঠা যাবে। তবে যাদুকাটা নদীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় বারিক্কা টিলা থেকে।
সবচেয়ে ভাল হয় টাঙ্গুয়ার হাওর দেখে টেকেরঘাট গিয়ে সেখানে নীলাদ্রী লেক দেখে শিমুল বাগান এবং যাদুকাটা নদী দেখে সুনামগঞ্জ ফেরত আসা। এতে সময় কম লাগবে এবং খরচ কম হবে। আর এক সাথে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করা হয়ে যাবে।
কোথায় থাকবেন
এখানে এসে সাধারণত কেউ থাকেনা। তাই এর আশেপাশে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল বা রিসোর্ট গড়ে উঠে নাই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানে থাকতে পারেন। সব থেকে ভালো হয় সুনামগঞ্জ শহরে এসে থাকা।
বড়ছড়া বাজারে গেস্ট হাউজ ভাড়া জনপ্রতি ২০০/৪০০ টাকা। আর সুনামগঞ্জ শহরে হোটেল ভাড়া ২০০/১,০০০ টাকা।
কোথায় খাবেন
এই নদীর একপাশে লাউড়ের গড়। অন্যপাশে বারিক্কা টিলা। লাউড়ের গড় বাজারে সাধারণ মানের দেশীয় খাবার পাওয়া যায়। বারিক্কা টিলার নিচে-ও খাবারের হোটেল আছে। সেখানে খেতে পারেন। এছাড়া টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার, তাহিরপুর বাজারে মোটামোটি মানের খাবারের দোকান আছে। তবে ভালো রেস্টুরেন্টে এর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। প্রয়োজন হলে সাথে কিছু শুকনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন।
যাদুকাটা নদী ভ্রমণের সতর্কতা এবং টিপস
- নদী থেকে বালি এবং পাথর উত্তোলন করার ফলে অনেক গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাই পানিতে নামার সময় সাবধান থাকবেন।
- শুকনো কালে নদীতে হাঁটুপানি আর বর্ষায় অনেক পানি এবং সাথে স্রোত থাকে।
- এই নদীর কাছেই শিমুল বাগান, নীলাদ্রি লেক। একসাথে ঘুরে আসুন।
- বাংলাদেশের বর্ডার অতিক্রম করবেন না।
- দরদাম করে যানবাহন ভাড়া করবেন।
- খরচ কমাতে চাইলে ছুটির দিন পরিহার করুন।
- পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
যাদুকাটা নদীর কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান
যাদুকাটা নদীর কাছাকাছি আছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। প্ল্যান করে হাতে ২ দিন সময় নিয়ে গিয়ে এক সাথে সব গুলো দেখে আসতে পারেন।
- টাঙ্গুয়া হাওর
- নীলাদ্রি লেক
- শিমুল বাগান
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।