জাফলং (Jaflong) সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মাঝে অন্যতম। অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য লোকে একে প্রকৃতির কন্যা বলে ডাকে। মেঘে ঢাকা উঁচু উঁচু সবুজ পাহাড়ের নিচে পিয়ান নদীর ঠান্ডা স্বচ্ছ পানি, সারি সারি পাথর, ঝুলন্ত ব্রিজ, পাহাড় থেকে অবিরাম প্রবাহমান জলপ্রপাত জাফলংকে করেছে অনন্য। সিলেট এসে জাফলং না গেলে আপনার ট্যুর টাই অপূর্ণ থেকে যাবে।
জাফলং কোথায় অবস্থিত
জাফলং বাংলাদেশের সিলেট জেলার, গোয়াইনঘাট উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার।
জাফলং এর দর্শনীয় স্থান
সিলেট শহর থেকে জাফলং যাবার রাস্তাটি খুবই সুন্দর। আঁকাবাঁকা পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে এই পথ। এই পথে পাবেন সিলেট আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট, শাহ পরান রহঃ এর মাজার, সবুজ পাহাড়, সারি সারি চা বাগান, লালা খাল, জাফলং-ডাউকি ল্যান্ড বর্ডার, বিশাল হাওড় ইত্যাদি। জাফলং এ আছে সুন্দর পাথরে নদী যার পানি খুবই স্বচ্ছ, জিরো পয়েন্ট, ডাওকি জুলন্ত ব্রিজ। নদী পার হলে পাবেন মায়াবী ঝর্ণা বা সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা।
জাফলং কখন যাবেন
জাফলং সব সময়েই যাওয়া যায়। একেক ঋতুতে এটি একেক রূপ ধারণ করে। তবে জাফলং যাওয়ার সব থেকে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল। সে সময়ই এর পূর্ণ সৌন্দর্য দেখা যায়। তবে খেয়াল রাখবেন যেন তা মাঝ বর্ষায় না হয়। তখন বন্যায় সব কিছু ডুবে যায়। সব থেকে ভালো হয় বর্ষাকাল যখন শুরু হচ্ছে অথবা শেষ হচ্ছে তখন। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মাঝামাঝি বেস্ট সময়।
জাফলং কিভাবে যাবেন
জাফলং যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে বাংলাদেশের সিলেট জেলায়। রাজধানী ঢাকা থেকে আপনি সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে যেতে পারেন সিলেট শহর। হানিফ, শ্যামলী, গ্রিনলাইন ইত্যাদি পরিবহনের বাস প্রতিদিন সকাল ৬ থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত একটু পর পর সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সিলেট থেকে ঢাকায় আসে। ভাড়া ৫০০/- থেকে ১০০০/- টাকা।
এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বেশ কিছু ট্রেন সিলেট যায়। আপনি ঢাকা থেকে আকাশ পথেও যেতে পারেন। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইট চলাচল করে। সময় নিবে প্রায় ৪৫ মিনিট। ভাড়া ৩০০০/- থেকে ৫০০০/- টাকা।
সিলেট শহর থেকে বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি বা লেগুনায় যাওয়া যায় জাফলং। নগরীর শিবগঞ্জ থেকে প্রায় এক ঘন্টা পর পর বাস ছারে জাফলং এর উদ্দেশ্যে। ভাড়া নিবে ৮০ টাকা। এছাড়া নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে নিতে পারেন। ভাড়া নিবে সারাদিনের জন্য ১৪০০ – ১৬০০০ টাকা। পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর সামনে থেকেও সিএনজি পাবেন।
নগরীর মাক্রোবাস স্ট্যান্ড থেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে নিতে পারেন। ভাড়া নিবে ৩০০০ – ৩৫০০ টাকা। এছাড়া লেগুনা ভাড়া করেও যেতে পারেন। ভাড়া নিবে ২০০০ টাকার মতো।
তবে বাস থেকে সিএনজি, লেগুনা বা মাইক্রোবাসই উত্তম। তাহলে আসা-যাওয়ার মাঝে বিভিণ্ণ স্পট দেখতে পারবেন। তবে যাই নেন অবশ্যই দরদাম করে নিবেন। ছুটির দিনে ভাড়া একটু বাড়ে। অন্য দিন কম থাকে।
কোথায় থাকবেন
জাফলং থাকার মতো তেমন কিছু নাই। আর দরকারও নাই। দেখা শেষ হলে চলে আসবেন সিলেট শহরে। এখানে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। ১০০০-২০০০ টাকার ভিতর ভালো মানের হোটেল পাবেন। তবে হোটেল নেয়ার সময় অবশ্যই আম্বরখানা এলাকায় নিবেন। এইখান থেকেই সব দিকে মুভ করার যানবাহন পাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
জাফলং এ এখন কিছু রেস্টুরেন্ট হয়েছে। তবে সবগুলোই সাধারণ মানের। তার মধ্যে সীমান্ত পর্যটক ভিউ রেস্টুরেন্ট একটু ভালো। চাইলে এখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। এছাড়া সিলেট শহর থেকেও খাবার নিয়ে যেতে পারেন। সিলেটে জিন্দাবাজার এলাকায় খাবারের জন্য বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যেমন: পাঁচ ভাই, পানশি, পালকি।
এদের মধ্যে পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর খাবারের মান বেশ ভালো এবং তুলনামূলক ভাবে বেশ সস্তা। হরেক রকম ভর্তা, মাংস, খিচুরি বেশ টেস্টি। এদের পাঁচ মিশালী আইটেম দারুন। সাথে একটা মাংস বা মাছ নিলে ভাত এবং ডাল একদম ফ্রি।
খেয়ে বিল দেয়ার সময় একবার হলেও চিন্তা করবেন সিলেটের মানুষ কেন বাসায় রান্না না করে রেস্টুরেন্ট এ এসে খায়। ভালো কথা, এয়ার কন্ডিশন রুমে না বসে খেলে খাবারের বিল কিন্তু আরো কম আসে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
জাফলং এর আশেপাশের আছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। হাতে সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।