বাংলাদেশের ভোলা জেলার সব থেকে বড় উপজেলা হচ্ছে চরফ্যাশন উপজেলা। এর আয়তন প্রায় ১১০৬.৩ বর্গ কিলোমিটার। এটি এক সময় বাকেরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাকেরগঞ্জ জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জে. এইচ ফ্যাশনের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় চরফ্যাশন। আর এখন এখানেই নির্মিত হয়েছে বাংলার আইফেল টাওয়ার (Banglar Eiffel Tower)।
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ১৮৮৫-১৮৮৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে দশটি শিক্ষিত পরিবার এবং দশটি উখরাইট পরিবার এনে এখানে প্রথম অভিবাসন গড়ে তোলেন। প্রথম গড়ে ওঠা দুই পল্লী ‘ভদ্রপাড়া’ ও ‘উখরাইট পাড়া’ নামে এখনো রয়েছে।
এই উপজেলা পর্যটনের জন্য খুবই পরিচিত। এর আসে পাশে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ যেমন: চর কুকরী-মুকরী, ঢালচর, চরনিজাম, চরপাতিলা ইত্যাদি। এখানকার ইলিশ মাছ খুবই টেস্টি এবং বিখ্যাত। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে বর্তমানে এখানে নির্মিত হচ্ছে বহু আধুনিক স্থপনা। জ্যাকব টাওয়ার তার মধ্যে অন্যতম।
বাংলার আইফেল টাওয়ার (জ্যাকব টাওয়ার)
জ্যাকব টাওয়ার (Jacob Tower) বা চরফ্যাশন টাওয়ার বাংলাদেশের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার ফ্যাশন স্কয়ার এ অবস্থিত। ভোলা শহর থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। অনেকটা আইফেল টাওয়ারের আদলে নির্মিত বলে একে বাংলার আইফেল টাওয়ার বলা হয়।
এই টাওয়ার এর উচ্চতা ২২৫ ফুট যা প্রায় ২১ তলা ভবনের সমান। এটি বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সব থেকে উঁচু টাওয়ার। টাওয়ারটির ডিজাইন করেছেন স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন। মাটির প্রায় ৭৫ ফুট নিচ থেকে পাইলিং করে সম্পূর্ণ ইস্পাত কাঠামোর উপর নির্মিত এই টাওয়ার ৮ মাত্রার ভূমিকম্পন সহনীয়।
ভূমির উপরিভাগ থেকে টাওয়ারের উপরে থাকা গম্ভুজ আকৃতির ওয়াচ পয়েন্ট পর্যন্ত চারদিকে রয়েছে ৫ মিলিমিটার ব্যাসের স্বচ্ছ গ্লাস। প্রতিটি তলায় ৫০ জন ও পুরো টাওয়ারে ৫০০ জন দর্শক একসাথে অবস্থান করতে পারবে। টাওয়ারে ওঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি রয়েছে অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট, যেখানে ১৩ জন একসাথে উঠতে পারে।
পর্যটকদের আকৰ্ষণ করার জন্য প্রায় সব ব্যবস্থাই এখানে রয়েছে। এর চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছে উচ্চক্ষমতাসম্পূর্ণ বাইনোকুলার, যার সাহায্যে বঙ্গোপসাগরের একটি অংশসহ চারপাশের প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দেখা যাবে। এছাড়া ও এখানে রয়েছে বিশ্রামাগার, হালকা খাবারের ব্যবস্থা। টাওয়ারের শীর্ষে দাঁড়িয়ে দেখা মিলবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল চর কুকরি-মুকরির নয়নাভিরাম সবুজের সারি।
টাওয়ারে প্রবেশে করার জন্য ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট কাটা লাগে। উপরে উঠে আপনার খুবই ভালো লাগবে। মনে হবে আপনি যেন হিমালয় এর কোন চূড়ায় উঠে গেছেন। নিচের মানুষ গুলো কে পিঁপড়ার মতো ছোট ছোট লাগবে।
কিভাবে যাবেন
বাংলার আইফেল টাওয়ার দেখার জন্য আপনাকে আসতে হবে ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। চরফ্যাশন আপনি বিভিন্ন ভাবে যেতে পারেন। তবে সব থেকে সহজ উপায় হলো লঞ্চ। প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলা শহর এবং এর আশেপাশের বিভিন্ন জায়গার উদ্দেশে লঞ্চ ছেড়ে যায়।
লঞ্চ থেকে নেমে বাস বা অটোতে করে চলে আসবেন চরফ্যাশন। তবে সব থেকে সহজ পথ হলো সরাসরি চরফ্যাশন এর লঞ্চ ব্যবহার করা। সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে চরফ্যাশন এর উদ্দেশে বেশ কিছু লঞ্চ ছেড়ে যায়। কর্ণফুলী-১২, কর্ণফুলী-১৩, ফারহান, ইত্যাদি উল্লেখ যোগ্য।
কর্ণফুলী-১২, কর্ণফুলী-১৩ খুবই সুন্দর এবং বিলাস বহুল। এগুলা ভোর ভোর পৌঁছে যায় বেতুয়া লঞ্চ ঘাট। সেখান থেকে অটো রিক্সায় চলে আসবেন চরফ্যাশন বাজার। আর বাজারেই জ্যাকব টাওয়ার।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।