কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের এক লীলাভূমি। পাহাড়, নদী আর লেক, এই তিনে কাপ্তাই লেক। এখানে চোখে পড়ে ছোট বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝর্ণা, পানির সাথে সবুজের মিতালি। কাপ্তাই লেকের এই অপার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে এখানে।
কাপ্তাই লেক কোথায় অবস্থিত
কাপ্তাই লেক বা হ্রদ বাংলাদেশের রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত। কাপ্তাই হ্রদ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি কৃত্রিম হ্রদ। এই লেকের সাথে কর্ণফুলী, কাচালং আর মাইনী নদীর সংযোগ রয়েছে। লেকের স্বচ্ছ জলরাশি আর সবুজ পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের সহজেই কাছে টানে আর লেকের পানিতে নৌ-ভ্রমণ মন-প্রাণ জুড়িয়ে দেয় প্রকৃতির আপন মহিমায়।
কাপ্তাই লেকের ইতিহাস
১৯৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কর্ণফুলী নদীর উপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করেন। এর ফলে রাঙামাটি জেলার প্রায় ৫৪ হাজার একর জমি পানির নিচে তলিয়ে যায় আর সৃষ্টি হয় এই কৃত্তিম লেকের। এর আয়তন প্রায় ২৯২ বর্গমাইল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্তিম লেক। শুরুতে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ধরা হয়েছিল ১.২০ মেগাওয়াট। তবে বর্তমানে মোট পাঁচটি ইউনিট চালু আছে যার মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট।
কাপ্তাই লেক কিভাবে যাবেন
ঢাকার কলাবাগান, সায়দাবাদ থেকে সোহাগ, সৌদিয়া, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস যায় রাঙামাটি। ভাড়া নন এসি ৬০০ থেকে ৬৫০, এসি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। সময় নিবে ৭/৮ ঘন্টা।
এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেন/প্লেনে চট্টগ্রাম এসে সেখান থেকে যেতে পারেন রাঙামাটি। চট্টগ্রামের বদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে যায় কাপ্তাই। ভাড়া ৮০/১২০ টাকা। সময় নিবে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা।
বান্দরবান থেকেও কাপ্তাই যেতে পারেন। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ড থেকে রাঙামাটি গামী বাসে উঠে বড়ইছড়ি নেমে সিএনজি দিয়ে যেতে পারেন কাপ্তাই। রাঙামাটি থেকে সড়ক পথে বাসে, সিএনজি দিয়ে, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় কাপ্তাই লেক হয়ে যেতে পারেন কাপ্তাই বাজার।
কাপ্তাই লেক এ কি করবেন
ইঞ্জিন চালিত নৌক ভাড়া করে লেকের জলে ভাসতে পারেন। পাহাড় থেকে লেকের সৌন্দর্য দেখতে ঘুরে আসতে পারেন প্যারাডাইস পিকনিক স্পট থেকে। কর্ণফুলী নদীতে কায়াকিং করতে পারেন। এখানে কায়াকিং করার জন্যে বেশ কিছু পয়েন্ট রয়েছে। পছন্দমত যেকোনো জায়গা থেকে কায়াকিং করতে পারেন। আরো দেখতে পারেন ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা। ক্যাবল কারে উঠতে চাইলে যেতে পারেন শেখ রাসেল ইকোপার্ক।
কোথায় খাবেন
কাপ্তাই লেকের মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপে কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে দুপুরের খাবার খেতে পারেন অথবা সাথে পার্সেল নিয়ে নিতে পারেন। কাপ্তাই এর কাছে আরো আছে জুম রেস্তোরা, প্যারাডাইস ক্যাফে, বেরাইন্যে লেক শোর ক্যাফে ইত্যাদি। এছাড়া নৌবাহিনীর ঘাঁটির কাছে ভাসমান এক রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানেও খেতে পারেন। এটি প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
কোথায় থাকবেন
কাপ্তাইয়ে রাত্রি যাপনের জন্য ভালো মানের তেমন হোটেলে/মোটেল নাই। তবে এখানকার সরকারি রেস্টহাউজ, সেনাবাহিনী, পিডিবি, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বন বিভাগের রেস্ট হাউস গুলোতে আলোচনা করে থাকতে পারেন। তবে সব থেকে ভালো হয় রাঙামাটি শহরে এসে থাকলে। রাঙমাটিতে থাকার জন্য পরিচিত কিছু হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজের বিস্তারিত নিচে দেয়া হলো:
- হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, ফোনঃ ০৩৫১-৬২১৪৫, ০৩৫১-৬১১৭৪, ০১৫৫৩৪০৯১৪৯
- হোটেল সুফিয়া, ফোনঃ ০৩৫১-৬২১৪৫, ০৩৫১-৬১১৭৪, ০১৫৫৩৪০৯১৪৯
- পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স, ফোনঃ ০৩৫১-৬৩১২৬
- হোটেল গোল্ডেন হিল, ফোনঃ ০১৮২০-৩০৪৭১৪
- হোটেল লেক ভিউ, ফোনঃ ০৩৫১-৬২০৬৩
কাপ্তাই লেক এর আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
কাপ্তাই লেকের আশেপাশে আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ঝুলন্ত ব্রিজ
- কাপ্তাই বাঁধ বা কাপ্তাই ড্যাম্প
- শুভলং ঝর্ণা
- নেভি একাডেমি
- শেখ রাসেল ইকোপার্ক
- ক্যাবল কার
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।