কায়াকিং একটা এডভেঞ্চার স্পোর্টস। এর জন্য যথেষ্ঠ সাহস এবং শক্তির প্রয়োজন। আর সেটি যদি হয় কাপ্তাই লেকের মতো বিশাল জলাশয়ে তাহলে তো ব্যাপারটাই অন্যরকম। আসুন শুনি আমার কাপ্তাই লেকে কায়াকিং (Kayaking in Kaptai Lake) এর গল্প।
কাপ্তাই লেকে কায়াকিং
কায়াকিং একটি বিদেশী স্পোর্টস হলেও ধীরে ধীরে এটি আমাদের দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেকেই ছোট নৌকা নিয়ে বিশাল উন্মুক্ত জলাশয় পারি দেয়ার অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য ছুটে চলেন বিভিন্ন কায়াকিং পয়েন্টে। এখন আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি কায়াকিং পয়েন্ট আছে, যেখানে ঘন্টা হিসাবে ভাড়া নিয়ে কায়াকিং করা যায়। দেশের সব থেকে বড় লেক, কাপ্তাই লেকেও শুরুই হয়ে হয়েছে এই কায়াকিং। লেকের বেশ কিছু জায়গায় কায়াকিং ঘাট আছে। আবার কিছু রিসোর্ট তাদের দর্শনার্থীদের জন্য এই সেবা চালু করেছে।
বাংলাদেশ লোকাল গাইড কমিউনিটির একটি ইভেন্টে অংশ নেয়ার জন্য আমি রাঙামাটি যাই। সেখানে বার্গী লেক ভ্যালী রিসোর্টে রাত্রিযাপন করি। এই রিসোর্ট কাপ্তাই লেকের পারে অবস্থিত। রিসোর্টে কায়াকিং এর ব্যবস্থা আছে। ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৩, ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা দিয়ে আমরা সকালে রাঙামাটি পৌঁছাই। সেখান থেকে ভাড়া করা ট্রলারে রিসোর্টে যাই।
আপনি নিজেও ঢাকা থেকে বার্গী লেক ভ্যালীতে আসতে পারেন। ঢাকা থেকে রাঙামাটি শহর পর্যন্ত নন এসি বাস ভাড়া ৮৫০/৯০০ টাকা। বাস থেকে নেমে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন বার্গী লেক ভ্যালী রিসোর্ট। সিএনজি ভাড়া ৩৫০/৪০০ টাকা। একক বা দল বেঁধে কায়াকিং করার জন্য এই জায়গা খুবই উপযুক্ত। আমরা প্রায় ৫০ জন এখানে কায়াকিং করেছিলাম।
কায়াকের অভিজ্ঞতা
বিকালে বেশ ভীড় থাকায় আমরা সকালে কায়াকিং করি। সকাল ৬ টার দিকে আমরা রিসোর্টের ঘাটে চলে যাই। ঘটে ৭/৮ টি কায়াক বাধা ছিল। কিছু কায়াকে ২ জন উঠা যায়। আবার কিছু কায়াকে ৩ জন উঠা যায়। লাইফ জ্যাকেট পরে বৈঠা নিয়ে আমি এবং সঞ্জয় দাদা ২ জন উঠা যায় এমন একটা কায়াকে উঠে পরি। দাদা আগেই বলে নেয় আমি কিন্তু চালাতে পারিনা। আমি বললাম সমস্যা নাই। আমি শিখায় দিবো। আর না পারলে চুপচাপ বসে থাকবেন। আপনারা কায়াকে উঠার আগে অবশ্যই লাফ জ্যাকেট পরে নিবেন। আর ভুলেও কায়াক থেকে পানিতে নামবেন না।
বিশাল কাপ্তাই লেকের জলে ছোট একটা নৌকা নিয়ে ভেসে ভেড়াতে দারুন লাগলেও মনে একটু ভয় কাজ করছিলো। আমরা প্রায় অনেক দূর চলে যাই। লেকে কিছু জেলে জাল ফেলে মাছ ধরছিল। তাদের কাছে গিয়ে কথা বললাম। উনারা জানালো এই সময়ে লেকে খুব একটা মাছ পাওয়া যায় না।
আমাদের সময় বরাদ্ধ ছিল ৩০ মিনিট। এই রিসোর্টে রাত্রিযাপন করলে ৩০ মিনিট কায়াকিং ফ্রি। এর বাহিরে ২ জনের জন্য প্রতি ঘন্টার ভাড়া ৩০০ টাকা। ৩ জনের জন্য প্রতি ঘন্টার ভাড়া ৪০০ টাকা। ইচ্ছে করলে রাত্রিযাপন না করে কায়াক ভাড়া নিয়েও আপনারা কায়াকিং করতে পারেন। সেক্ষেত্রে টিকেট কেটে রিসোর্টে প্রবেশ করতে হবে।
বৈঠার পানিতে আমার শরীর বেশ ভিজে যায়। আপনারা মোবাইল, ক্যামেরা সাবধানে রাখবেন। আর একটু রিলাক্স ড্রেস পরে যাবেন। নির্ধারিত সময় শেষ হবার আগেই আমরা তীরে চলে আসি। আর এভাবেই শেষ হয় আমার দারুন এক কায়াকিং। বিশাল কাপ্তাই লেকে কায়াকিং এক কোথায় অসাধারণ। সময় সুযোগ পেলে আপনারাও কাপ্তাই লেকে কায়াকিং করতে পারেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।