চট্টগ্রাম বিভাগের দর্শনীয় স্থান

কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গ

Loading

কেওক্রাডং পর্বতশৃঙ্গ

কেওক্রাডং (Keokradong) বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। সারিসারি পাহাড়ের উপর সবুজ গালিচা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, মেঘের লুকোচুরি, ঝৰ্ণাধারা, জুম চাষ, বন্য ঝোপঝাড়, ঘন জঙ্গল, নানা রকমের পশু পাখিতে পরিপূর্ণ এই দুর্গম এলাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব নীলাভুমি। এ যেন পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ।

কেওক্রাডং কোথায় অবস্থিত

কেওক্রাডং বা কেওকাড়াডং বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত। এর উচ্চতা প্রায় ৩১৭২ ফুট। অন্যান্য পর্বতশৃঙ্গ আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত এটিই দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ছিল। বর্তমানে সাকা হাফং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এই কেওক্রাডং নামটি মারমা ভাষা থেকে এসেছে। মারমা ভাষায় কেও মানে “পাথর”, কাড়া মানে “পাহাড়”, ডং মানে “সবচেয়ে উঁচু”। অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়।

কেওক্রাডং কিভাবে যাবেন

কেওক্রাডং যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে বান্দরবান শহরে। রাজধানী ঢাকার কলাবাগান, আরামবাগ থেকে শ্যামলী, হানিফ, সেন্টমার্টিন, দেশ ইত্যাদি পরিবহন কোম্পনীর এসি, নন-এসি, হুন্দাই বাস প্রতিদিন বান্দরবান শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং ঢাকায় ফিরে আসে। জনপ্রতি বাস ভাড়া নন-এসি ৫৫০-৭৫০, এসি ১২০০-১৫০০ টাকা। রাতের বাসে রওনা দিলে সকাল ৭ টার মধ্যে চলে আসবেন বান্দরবান।

এছাড়া ট্রেন বা প্লেনে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এসে, চট্টগ্রাম থেকে বাস, প্রাইভেট কার নিয়ে বান্দরবান আসতে পারেন। বদ্দারহাট, ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ২২০ টাকা। মাইক্রোবাস ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা।

বান্দরবান থেকে রুমা

এর পর বান্দরবান শহর থেকে যেতে হবে রুমা উপজেলার রুমা বাজার। বান্দরবান শহর থেকে রুমা বাজারের দুরুত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। রুমা বাজার, বাস এবং জীপগাড়ি বা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া যায়। বাসে যেতে হলে অটো করে চলে যাবেন রুমা বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে ১ ঘন্টা পর পর বাস ছাড়ে রুমার উদ্দেশ্যে। ভাড়া ১২০ টাকা। সময় নিবে ৩ ঘন্টা।

এছাড়া টিমের সাইজ একটু বড় হলে জীপগাড়ি বা চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করে যেতে পারেন। এক গাড়িতে ১০/১৫ জন যাওয়া যায়। বান্দরবান শহরের জীপগাড়ি বা চান্দের গাড়ি স্ট্যান্ড থেকে এই গাড়ি নেয়া যায়। ভাড়া ৩/৪ হাজার টাকা। সময় নিবে ২ ঘন্টা। স্ট্যান্ড এ সিন্ডিকেট বেশ সক্রিয়। তাই স্ট্যান্ড এলাকার একটু আগে থেকে নিলে কমে পেতে পারেন।

রুমা থেকে বগা লেক

রুমা বাজার পৌঁছে সরকারি ভাবে রেজিস্ট্রেশন কৃত গাইডের লিস্ট থেকে একজন গাইড নিতে হবে। এই গাইড পথ দেখিয়ে আপনাকে বগা লেক, কেওক্রাডং নিয়ে যাবে। গাইড নেয়া বাধ্যতামূলক। রুমা বাজারে আর্মি ক্যাম্পে সবার নাম, ঠিকানা, বাসার ফোন নাম্বার, ন্যাশনাল আইডির কপি ইত্যাদি তথ্য দিয়ে বগা লেক যাবার অনুমতি নিতে হবে।

সব থেকে ভালো হয় টিমের সবার তথ্য (নাম, ঠিকানা, বাসার ফোন নাম্বার, ন্যাশনাল আইডি নাম্বার) একটা কাগজে প্রিন্ট করে কয়েক কপি সাথে নিয়ে আসলে। আর মনে রাখবেন বিকাল ৪ টার পর আর কোনো অনুমতি দেয়া হয় না। সব ক্ষেত্রে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে।

এর পর রুমা বাজার থেকে জীপ বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করতে হবে। এক গাড়িতে ১০/১৫ জন বসা যায়। গাড়ি ভাড়া ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। তবে টিমের সাইজ ছোট হলে অন্য টিমের সাথে শেয়ারে যেতে পারেন। অথবা লোকাল চান্দের গাড়িতে যেতে পারেন। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ১ ঘন্টা পর পর লোকাল চান্দের গাড়ি চলাচল করে। ভাড়া ১০০ টাকা। রুমা বাজার থেকে বগা লেকের দুরুত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। সময় নিবে দেড় ঘন্টার মতো। রিজার্ভ গাড়িতে যাওয়াই সব থেকে ভালো।

বর্তমানে গাড়ি একদম বগা লেক পর্যন্ত যায়। তবে বর্ষাকালে রাস্তা খারাপ থাকলে বগা লেক পর্যন্ত গাড়ি নাও যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গাড়ি থেকে নেমে কিছু পথ হেটে যেতে হবে। তবে ভয় পাবার কিছু নাই। সব ক্ষেত্রে গাইড আপনাকে সাহায্য করবে।

বগা লেক থেকে কেওক্রাডং

সাধারণত সবাই বগা লেকে রাত্রিযাপন করে, পরের দিন সকালে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। তবে আপনি চাইলে এখানে না থেকেও সরাসরি কেওক্রাডং চলে যেতে পারেন। বগা লেকে আর্মি ক্যাম্প আছে। ক্যাম্পে সবার তত্ত্ব দিয়ে কেওক্রাডং যেতে হবে।

বগা লেক থেকে গাইড সহ সকাল সকাল রওনা দিবেন কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। ৩/৪ ঘন্টা ট্রেকিং করে পৌঁছে যাবেন কেওক্রাডং এর চূড়ায়। বগা লেক থেকে কেওক্রাডং এর দুরুত্ব প্রায় ৮/৯ কিলোমিটার এবং উচ্চতা ২০০০ ফিট। এই যাত্রা পথে বেশ কিছু পাহাড় পার হতে হবে। তবে এই পাহাড়ি সুন্দর পথ চলা আপনি খুব উপভোগ করবেন, সারা জীবন মনে থাকবে।

কোথায় থাকবেন

কেওক্রাডং এ থাকার জন্য উন্নত মানের কোনো হোটেল বা রিসোর্ট নাই। আদিবাসিদের ছোট ছোট কটেজই ভরসা। এত উপরে একেবারে প্রাকৃতিক পরিবেশে এভাবে থাকতে খারাপ লাগবে না। প্রতি রুমে ৫/৬ জন থাকা যায়। ভাড়া জন প্রতি ১০০/২০০ টাকা। ইচ্ছে করলে কাপল বা মেয়েদের জন্য আলাদা রুম নিতে পারবেন। সব ক্ষেত্রে গাইড সাহায্য করবে।

কোথায় খাবেন

কেওক্রাডং এ খাবারের জন্য ভালো মানের কোনো রেস্টুরেন্ট নাই। আদিবাসীদের ঘরই ভরসা। এখানে জন প্রতি ১০০/২০০ টাকায় খাবার খেতে পারবেন। ভাত, ডিম, আলুভর্তা, পাহাড়ি মুরগি ইত্যাদি আইটেম থাকে মেনুতে। কোন কোন আইটেম খাবেন তা আগে থেকেই গাইডকে বলে দিবেন। পাহাড়ি মুরগি একটু শক্ত, তবে খেতে খারাপ না। গাইডকে বলবেন ভালো মতো সিদ্ধ করতে।

টিপস এবং সতর্কতা

  • ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
  • আদিবাসীদের সাথে ভালো আচরণ করুন।
  • আদিবাসীদের অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না।
  • এখানে সব মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। রবি, টেলিটক পাওয়া যায়।
  • সাথে পাওয়ার ব্যাংক রাখুন।
4 5 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
1 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

1
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx