পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝিরি ও সমতল ভূমি নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি খাগড়াছড়ি। দেশের এই পার্বত্য জেলাকে বলা হয় পাহাড়ের রানি। তাই প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চলে আসুন রহস্যময়তায় ঘেরা খাগড়াছড়ি। আসুন দেখে নেই খাগড়াছড়ি ট্যুর প্ল্যান (KhagrachhariTour Plan), যা আপনার ভ্রমণকে আরো সুন্দর এবং আরামদায়ক করবে।
খাগড়াছড়ি কিভাবে যাবেন
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা ভাবে খাগড়াছড়ি জেলায় আসা যায়। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা শহর থেকে শান্তি, শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, গ্রিনলাইন, সেন্টমার্টিন, এস আলম, বিআরটিসি ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস খাগড়াছড়ি আসে। এসি বাসের ভাড়া ১৬০০ টাকা এবং নন এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম শহর থেকেও খাগড়াছড়ি আসা যায়। চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন মোড় থেকে বিআরটিসি এবং শান্তি পরিবহনের বাস খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম রুটে নিয়মিত চলাচল করে। এগুলো ছাড়া এই রুটে বেশ কিছু লোকাল বাসও চলাচল করে। নন এসি এইসব বাসের ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
খাগড়াছড়ি শহরে বিভিন্ন মানের অনেক গুলো আবাসিক হোটেল এবং বোর্ডিং আছে। হোটেল গুলোর ভাড়া ৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত। আপনার বাজেট এবং পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো হোটেলে থাকতে পারেন। শাপলা চত্বরের আশেপাশে বেশ কিছু বোর্ডিং আছে, যেখানে আরো কম খরচে থাকা যায়। বোর্ডিং গুলোর ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
- পর্যটন মোটেল: যোগাযোগ – ০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
- হোটেল ইকো ছড়ি ইন: যোগাযোগ – ০৩৭১-৬২৬২৫, ৩৭৪৩২২৫
- হোটেল লবিয়ত: যোগাযোগ – ০৩৭১-৬১২২০, ০১৫৫৬-৫৭৫৭৪৬
- অরণ্য বিলাস: যোগাযোগ – ০১৮৩৮-৪৯৭২৫৭
- হোটেল গাইরিং: যোগাযোগ – ০১৮১৫-১৬৩১৭৩
কোথায় খাবেন
খাগড়াছড়ি শহরের বাসস্ট্যান্ড এবং শাপলা চত্বর এলাকায় অনেক গুলো খাবার হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট আছে। এগুলোতে ভাত, মাছ, মাংস সহ পরিচিত নানা ধরণের খাবার পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু রেস্টুরেন্টে স্থানীয় আদিবাসীদের খাবার পাওয়া যায়। আপনার পছন্দ অনুযায়ী খাবার খেতে পারেন।
খাগড়াছড়ি জেলার দর্শনীয় স্থান
খাগড়াছড়ি জেলায় অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান আছে। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো: আলুটিলা গুহা, রিসাং ঝর্ণা, বৌদ্ধ মন্দির, তৈদুছড়া ঝর্ণা, নিউজিল্যান্ড পাড়া, হাতিমাথা, হর্টিকালচার হ্যারিটেজ পার্ক, মায়াবিনী লেক, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির, মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী, মাতাই পুখিরি ইত্যাদি।
খাগড়াছড়ি ট্যুর প্ল্যান
খাগড়াছড়ি জেলার সব গুলো দর্শনীয় স্থান দেখতে কয়েকদিন লেগে যাবে। তবে হাতে সময় কম থাকলে তিন রাত দুই দিনেও খাগড়াছড়ি জেলা কভার করা যায়। ৩ রাত ২ দিনের খাগড়াছড়ি ট্যুর প্ল্যান মোটামোটি এইরকম:
প্রথম দিন:
রাতের বাসে রওনা দিয়ে সকালে খাগড়াছড়ি পৌঁছাবেন। নাস্তা করে পছন্দমতো হোটেলে চেকইন করে নিবেন। টিম মেম্বার কতজন তা হিসাব করে চান্দের গাড়ি, সিএনজি বা মোটর বাইক নিয়ে চলে যাবেন আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। এখানে কাছাকাছি ৩ টি ট্যুরিস্ট স্পট (আলুটিলা গুহা, রিসাং ঝর্ণা এবং বৌদ্ধ মন্দির) আছে। গাড়ি ঠিক করার পূর্বে কয়টি স্পট দেখবেন বলে নিবেন। সাধারণত সব স্পটের জন্য চান্দের গাড়ি ভাড়া ২,০০০/৩,০০০ টাকা, সিএনজি ভাড়া ৮০০/১,০০০ টাকা। সেগুলো দেখে হোটেলে চলে আসবেন। আসার পথে দুপুরের খাবার খেয়ে নিবেন। সকালে হোটেল ফাঁকা না পেলে ব্যাগ গাড়িতে সাথে নিয়ে চলে যাবেন। দুপুরে এসে হোটেল ঠিক করবেন।
হাতে সময় থাকলে বিকালে চলে যাবেন শহর থেকে মাত্র ১.৫ কিলোমিটার দূরে নিউজিল্যান্ড পাড়া। সিএনজি বা অটো করেই যাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ১০/২০ টাকা। সাজেক যাওয়ার পথেও এখানে যেতে পারেন।
দ্বিতীয় দিন
সকালে নাস্তা করে অটো নিয়ে চলে যাবেন হাতিমাথা পাহাড় বা স্বর্গের সিঁড়ি। হাতিমাথা না গেলে তৈদুছড়া ঝর্ণাও যেতে পারেন। দুই জায়গাতেই বেশ কিছু পথ ট্রেকিং করা লাগে। তাই এটি মাথায় রেখেই আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করবেন। রাতের গাড়িতে চলে আসবেন আপনার গন্তব্যে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।