বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য যে কয়জন ওলী-আউলিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের মধ্যে হযরত খান জাহান আলী (র) (Khan Jahan Ali) এর নাম স্মরণীয়। উনার সমাধি সৌধ খান জাহান আলীর মাজার নামে সারা দেশে খুবই পরিচিত। তার জীবনের বেশ ভালো একটা সময় তিনি ইসলামের সেবার ব্যয় করেন।
একাধারে তিনি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারক, সাধক, শাসক এবং বীর যোদ্ধা। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে খান জাহান আলী একটি অতি পরিচিত নাম। বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ তিনিই নির্মাণ করেন।
খানজাহান আলি (র.) এর পরিচয়
খানজাহান আলি (র.) ১৩৬৯ সালে দিল্লিতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আকবর খাঁ এবং মাতার নাম আম্বিয়া বিবি। তার পূর্বপুরুষগণ তুরস্কের অধিবাসী ছিলেন বলে অনেকেই মনে করে থাকেন। তিনি ১৩৮৯ সালে সেনা বাহিনীতে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৩৯৪ সালে তিনি জৈনপুর প্রদেশের গভর্নর হন। পরবর্তীতে নীতি বাংলা আক্রমণ করেন।
ধারণা করা হয় উনার সাথে ৩৬০ জন আউলিয়া এসেছিলো। তাদের সংখ্যার সাথে মিল রেখে তিনি যশোরের বারোবাজার থেকে শুরু করে সমগ্র ভাটি অঞ্চলে ৩৬০ টি মসজিদ এবং মিঠা পানির জন্য ৩৬০ দীঘি খনন করেন। প্রথমে শাসক হিসাবে শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি ধর্ম প্রচার এবং মানব সেবায় বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেন।
মানুষের কল্যানে তিনি অনেক দীঘি খনন, রাস্তাঘাট নির্মাণ, হাট-বাজার স্থাপন এবং মসজিদ নির্মাণ করেন। ষাট গম্বুজ মসজিদ ছিল উনার দরবারগৃহ। ষাট গম্বুজ মসজিদ হতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিল উনার বসতবাড়ি। এখন সেটির কোনো অস্তিত্বই নেই। তিনি ১৪৫৯ সালে দরবার গৃহে এশার নামাজ রত অবস্থায় ৯০ বছর বয়সে ত্যুবরণ করেন।
খান জাহান আলীর মাজার
মৃত্যুর পর উনাকে খাঞ্জেলী দীঘির উত্তর পাড়ে সমাহিত করা হয়। সেখানে তাঁর সমাধি সৌধ নির্মিণ করা হয়েছে যা খান জাহান আলীর মাজার নামে পরিচিত। সমাধি সৌধের প্রাচীর ২৫ ফুট উঁচু এবং ছাদে একটি বড় গম্বুজ রয়েছে। এই সমাধি সৌধের ভিতরে একটি পাথরের বেদিতে উনার মাজার অবস্থিত।
মাজারের স্থাপত্যশৈলীর সাথে ষাট গুম্বুজ মসজিদের বেশ মিল রয়েছে। প্রতি বছর বাংলা বর্ষপুঞ্জির ২৫ অগ্রহায়ণ মাজার প্রাঙ্গনে বার্ষিক ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। আর চৈত্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় এখানে মেলা বসে। প্রতিবছর মাজার দেখতে, ওরশ এবং মেলায় অংশ নিতে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত এখানে সমবেত হন।
খান জাহান আলীর মাজার কোথায় অবস্থিত
খান জাহান আলীর মাজার বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ২০০ কিঃমিঃ এবং বাগেরহাট শহর থেকে ৩ কিঃমিঃ।
কিভাবে যাবেন
খান জাহান আলীর মাজার যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে বাগেরহাট জেলা শহর। সেখান থেকে অটো নিয়ে চলে যাবেন মাজারের গেইটে। ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস বাগেরহাট শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া ট্রেনে খুলনা এসে সেখান থেকে বাগেরহাট।
কোথায় থাকবেন
বাগেরহাট শহরে এসি/নন এসি বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। পছন্দ মতো যেকোন একটায় থাকতে পারেন। আরো আছে সরকারি গেস্টহাউস। এছাড়া মাজার সংলগ্ন হাইওয়েতে বেশ কিছু হোটেল আছে। বাগেরহাট শহর থেকে খুলনা শহর মাত্র এক ঘন্টার পথ। চাইলে খুলনা এসেও থাকতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
সময় থাকলে দেখে যেতে পারেন এই মাজারের আশেপাশের আরো কিছু দর্শনীয় স্থান।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।