খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Waterfall) আকার আকৃতিতে বাংলাদেশের সব থেকে বড় ঝর্ণা। এই ঝর্ণাতে ৯ টি ধাপ আছে। সাথে আছে আরো কিছু ছোট ছোট ধাপ। দেশের আর কোন ঝর্ণাতে এখন পর্যন্ত এই বৈশিষ্ট দেখা যায়নি। তাই এই ঝর্নাকে কে বলা হয় বাংলাদেশের ঝর্ণা রাণি।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা কোথায় অবস্থিত
খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khoiyachora Jhorna) বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশেই এর অবস্থান।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা কখন যাবেন
এই ঝর্ণাতে সব সময়ই কম বেশি পানির প্রবাহ থাকে। সব থেকে বেশি থাকে বর্ষাকালে। তাই বর্ষাকালে যাওয়াই উত্তম। তবে বর্ষাকালে কিছু বিপদ থাকে। তাই সব থেকে ভালো হয় মাঝ বর্ষায় না গিয়ে বর্ষার আগে আগে বা পর পর যাওয়া। তখন আশেপাশের পরিবেশ মিলিয়ে একটু বেশি সুন্দর মনে হয় একে।
খৈয়াছড়া ঝর্ণা কিভাবে যাবেন
দেশের যেকোন জায়গায় থেকে বাস বা ট্রেন আসতে পারেন ফেনী। ঢাকা থেকে ফেনী বাস ভাড়া ২৮০ টাকা। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে উঠে যাবেন। মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নেমে যাবেন। ভাড়া ৩০/৪০ টাকা।
অথবা চট্টগ্রাম গামী যেকোন বাসে উঠে, মিরসরাই এর বড়তাকিয়া বাজারের কাছে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নেমে যাবেন। তবে এর জন্য আগে থেকে অবশ্যই সুপারভাইজার কে বলে রাখবেন, আপনি খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাবেন। ভাড়া নন এসি ৪৮০ টাকা, এসি ৮০০/১১০০ টাকা।
ঢাকা থেকে মিরসরাই আসতে বাসে যে ভাড়া নিবে, মিরসরাই থেকে ঢাকা যেতে তার থেকে কম ভাড়া নিবে। যদিও বাস একই কোম্পানির হয়। কিছু কোম্পানির বাস ঢাকার উত্তরা এবং গাবতলী পর্যন্ত আসে। তাই আপনার বাসার কাছাকাছি আসে এমন বাসের টিকেট কাটতে পারেন।
মিরসরাই থেকে খৈয়াছড়া
খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন খৈয়াছড়া ঝর্ণার ঝিরির কাছে। ভাড়া নিবে ১০০ টাকা। অথবা পায়ে হেটেও যেতে পারেন। স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞেস করলেই খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাবার পথ দেখিয়ে দিবে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক থেকে নেমে পূর্বদিকে ১০ মিনিট হেটে গেলে রেললাইন পাবেন। রেললাইন পার হয়ে আরো ১০/১৫ মিনিট হেটে গেলেই খৈয়াছড়া ঝর্ণার ঝিরির দেখা পাবেন।
এই ঝিরির কাছ থেকেই মূল ট্রেকিং শুরু করতে হবে। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ঝিরির পথ ধরে ৪০/৫০ মিনিট হেটে গেলেই ঝর্ণার দেখা পাবেন। এই ঝর্ণায় যাবার পথ একটাই। তাই পথ হারাবার ভয় নাই। চাইলে সাথে গাইড নিতে পারেন। তবে কোন দরকার নাই। কেননা পথে খৈয়াছড়া ঝর্ণা গামী অনেক পর্যটক পাবেন।
যাবার পথে খাবারের হোটেলে লাঞ্চ এর অর্ডার করে যাবেন। এই সব হোটেলে লাঞ্চ অর্ডার করলে ব্যাগ রাখা যায় বিনামূল্যে। অনেকের আবার জামাকাপড় পাল্টানোর রুমও থাকে। আর খাবার না খেলে প্রতি ব্যাগ ২০ টাকার বিনিময়ে হোটেলে রাখতে পারবেন। তাই পানিতে নামার ড্রেস পরে, মোবাইল, ক্যামেরা আর টাকা পয়সা সাথে নিয়ে বাকি ব্যাগ এখানে রেখে যেতে পারেন।
বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাবার পথ বেশ পিচ্ছিল এবং দুর্গম হয়ে যায়। কাঁদার কারণে নরমাল জুতা পরে হাটা মুশকিল। মাঝে মাঝে পথ ছেড়ে পাহাড়ের উপরে উঠে যেতে হয়। তখন বয়স্ক এবং বাচ্চাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পরে।
কোথায় খাবেন
খৈয়াছড়া ঝর্ণা যাবার পথে বেশ কিছু খাবারের হোটেল পাবেন। সেখানে খেতে পারেন। এখানে খাবার বেশ সস্তা। আনলিমিটেড ভাত, ডাল সহ বিভিন্ন তরকারির প্যাকেজ আছে। ভাতের সাথে দেশি মুরগি ১৩০ টাকা, ফার্মের মুরগি ১০০ টাকা। সাথে আলুভর্তা, সালাদ নিলে ১৪০ টাকা।
অনেক হোটেল এর মাঝে মায়েরদোয়া হোটেলের ম্যানেজার বেশ ভালো লোক। এরা যত্ন সহকারে ব্যাগ রাখে। এই হোটেলে খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন বিকাল ৫ টার পর সব হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। আর এখানে না খেতে চাইলে মিরসরাই ফিরে খেতে পারেন।
ট্রেকিং এর শুরুতে বাঁশের লাঠি এবং পায়ের এংলেট ভাড়া পাওয়া যায়। অবশ্যই একটা লাঠি এবং একজোড়া এংলেট নিয়ে নিবেন। তাহলে হাটতে সুবিধা হবে। ভাড়া নিবে ২০ টাকা। ইচ্ছে করলে এংলেট নতুনও কিনে নিতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
ঝর্ণার কাছে থাকার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নাই। তাই মিরসরাই এসে থাকতে হবে। অথবা সীতাকুন্ড এসেও থাকতে পারেন। এখানে মোটামোটি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। তার মধ্যে সাইমুন, সৌদিয়া অন্যতম। এছাড়া চট্টগ্রাম এসেও থাকতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। সব গুলো মোটামোটি কাছাকাছি হওয়াতে এক দিনে বেশ কয়েকটা কভার করা যায়। তবে এক রাত দুই দিন সময় নিয়ে আসলে প্রায় সব গুলো কভার করতে পারবেন। আপনার সময় বিবেচনা করে ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই করবেন। এখানকার জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো হলো:
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
- কমলদহ ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- গুলিয়াখালি বীচ
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
সতর্কতা এবং টিপস
- অতিরিক্ত খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
- ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পিচ্ছিল। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন।
- পানিতে জোঁক থাকতে পারে। তাই জোঁক ছাড়ানোর জন্য সাথে লবন বা গুল রাখুন।
- একেবারে ওপরের ধাপগুলো খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে। তাই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- সাথে পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ লাইট রাখুন।
- এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক সব সময় কাজ করেনা।
- উপরে বৃষ্টি হলে অনেক সময় আটকে পড়তে হয়। তাই সকাল সকাল এখানে আসার চেষ্টা করুন।
- আবহাওয়া খারাপ হলে অনেক সময় আটকে পড়া লাগে। তাই অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- জোক থেকে বাচঁতে ঘাস এড়িয়ে চলুন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।