কুয়াকাটা (Kuakata Sea Beach) বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত এক সুন্দর সমুদ্র সৈকত ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র। এটি দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট একে অন্য সব সৈকত থেকে আলাদা করেছে। এর দৈর্ঘ প্রায় ১৮ কিলোমিটার। অপরূপ সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকরা একে বলে “সাগর কন্যা”। ভালো একটি প্ল্যান আপনাকে স্বল্প সময়ে পুরা কুয়াকাটা কভার করতে সাহায্য করবে। আসুন দেখে নেই তেমন একটি ভালো মানের কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান ।
কুয়াকাটা যাবার উপায়
কুয়াকাটা সড়ক পথে বা নদী পথে যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে দ্রুতি পরিবহন, সাকুরা পরিবহন, সুরভী পরিবহনের বাস করে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। এসব বাসের জনপ্রতি ভাড়া ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ১০০০ টাকা। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল ও রাতে কমলাপুর বিআরটিসি বাস ডিপো থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। বাসগুলো আপনাকে একদম বীচের কাছেই নামিয়ে দিবে। হেঁটেই বীচে চলে যেতে পারবেন।
এছাড়া প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বেশ কিছু লঞ্চ পটুয়াখালীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। লঞ্চ গুলো বিকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে যাত্রা শুরু করে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকা। ডেকে গেলে আরো কম। যেকোনো একটায় চেপে চলে আসতে পারেন পটুয়াখালী। পরে সেখান থেকে বাস, মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার নিয়ে চলে যাবেন কুয়াকাটা। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটার দুরুত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। বাস বাড়া ১৩০-১৫০ টাকা।
এছাড়া বরিশাল পর্যন্ত লঞ্চ বা প্লেনে এসে সেখান থেকে সড়ক পথে আসতে পারেন কুয়াকাটা। বরিশাল থেকে কুয়াকাটার দুরুত্ব প্রায় ১০৮ কিলোমিটার। তবে সব কিছু বিবেচনা করে ঢাকা থেকে এসি বাসে গেলেই ভাল। ফেরিঘাটে অপেক্ষা করা লাগেনা। আর ঘুরাঘুরির জন্য সময় একটু বেশি পাওয়া যায়। কারণ বাসগুলো সন্ধ্যা সাত টার পর কুয়াকাটা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। যেখানে লঞ্চ ছাড়ে বিকালে।
কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান
কুয়াকাটা ঘুরার জন্য তিন রাত দুই দিন যথেষ্ট। একটু টাইট হলেও দুই দিন পর দেখার মত আর কিছু থাকেনা। তবে আপনি চাইলে একরাত বেশি থাকতে পারেন। রাতের লঞ্চ বা বাসে রওনা দিলে সকালেই চলে আসবেন কুয়াকাটা।
প্রথম দিন:
সকালে এসেই হোটেলে চেকইন করে একটু রেস্ট নিয়ে চলে যাবেন সমুদ্রে। দুপুর পর্যন্ত বীচে কাটিয়ে চলে আসবেন হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে চলে যাবেন পশ্চিম দিকে। ড্রাইভারকে বলবেন আপনি তিন নদীর মোহনা পর্যন্ত যাবেন, ফেরার পথে লেবু বাগানে সূর্যাস্ত দেখে ফিরবেন। মোটর সাইকেলে ভাড়া নিবে ৬০০-৮০০ টাকা। আর অটোতে ১০০০-১২০০ টাকা।
যাবার পথে প্রথমেই পরবে শুঁটকি পল্লী। এখানে জেলেরা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি বানায়। চাইলে কিনে নিতে পারেন। এর পর আসবে লেবু বাগান। জায়গায় অসাধারণ। এখান থেকেই সূর্যাস্ত দেখে বেশি ভালো লাগে। তাই না থেমে সামনে এগিয়ে যাবেন। একটু পর আসবে ঝিনুক বীচ। দেখার মতো কিছুই নাই। এখানে নাকি ঝিনুক একটু বেশি পাওয়া যায়। তবে আপনি নাও পেতে পারেন।
এর পর চলে যাবেন ফাতরার বন। জায়গাটা দারুন। অপর পারে আছে সুন্দর বনের কিছু অংশ, যাকে লোকজন বলে ফাতরার বন। তবে এখান থেকে বনে যাওয়া যায়না। যেতে হলে কুয়াকাটা বীচ থেকে ট্রলারে যেতে হয়। কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে চলে যাবেন পাশের ঝাউ বনে। দারুন সুন্দর জায়গা। ছবি তুলে অনেক ভাল লাগবে। এর পর চলে যাবেন তিন নদীর মোহনায়। এখানে তিন নদী এসে মিশেছে। এখানকার ভিউ দারুন।
কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে ফেরার পথে থামবেন লেবু বনে। লেবু গাছ না থাকলেও জায়গাটা অসাধারণ। পাশেই বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। বললে তারা ফ্রাই করে দিবে। মাছের ফ্রাই খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখেতে অন্নরকম লাগবে। সূর্যাস্ত দেখে ফিরে যাবেন হোটেলে। তবে কাল সূর্যোদয় দেখতে যেতে হলে রাতেই যানবাহন ঠিক করে রাখবেন। তাহলে সময়মতো তারা চলে আসবে। সূর্য উঠার ১ ঘন্টা আগে রওনা দিতে হয়।
দ্বিতীয় দিন
ভোর ৪:৩০ এর দিকে হোটেল থেকে রওনা দিবেন। গঙ্গামতির চর থেকে সূর্যোদয় দেখে ফেরার পথে লাল কাঁকড়ার চর, বৌদ্ধ মন্দির, ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী নৌকা, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান, কুয়াকাটার কুয়া দেখে নিবেন। তবে সূর্যোদয় গঙ্গামতির চর থেকে কাউয়ার চর এ ভালো দেখা যায়।
কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান নিয়ে শেষ কথা
আশা করি এই কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান, আপনার পরবর্তী কুয়াকাটা ভ্রমণ কে আরো সহজ এবং সুন্দর করবে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।