মহাস্থানগড় (Mahasthangarh) বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন নগরী। এর পূর্বের নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এটি এক সময় বাংলার রাজধানী ছিল। ২০১৬ সালে একে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষনা হয়। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গেছে। এটি দেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি।
মহাস্থানগড় কোথায় অবস্থিত
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পাশে, করতোয়া নদীর তীরে এর অবস্থান।
মহাস্থানগড় এর ইতিহাস
প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন বাংলার গড়ে উঠে পুণ্ড্র জনপদ। পুন্ড্রদের আসল বাসস্থান ছিল বরেন্দ্র অঞ্চল (বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, মালদাহ)। এখানেই গড়ে উঠেছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী মহাস্থানগড়। প্রাচীনকালে এই এলাকাটি পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেই পরিচিত ছিল। তবে কালের বিবর্তনে এটি মহাস্থানগড় হয়ে উঠে। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গোড়াপত্তন হয়েছিল এই মহাস্থানগড়ের।
পুণ্ড্রনগর মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশের রাজাদের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল। তারপর মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন বংশের রাজারা ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলটিকে তাদের প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে শাসন করে।
সেন বংশের রাজা লক্ষণ সেন এর সময়ে, এই স্থানের শাসন ক্ষমতা চলে যায় নল নামের এক রাজার হাতে। তিনি সেন বংশের লোক ছিলেন না। তবে নলের সাথে তার ভাইয়ের সব সময় দ্বন্দ্ব লেগে থাকতো। এই দ্বন্দ্বের সুযোগ নিয়ে দক্ষিণ ভারতের “ব্রাহ্মণ” নামের এক ব্যক্তি রাজ্যের ক্ষমতা নিয়ে নেন।
ইতিহাসে আমরা পরশুরাম নামক যে অত্যাচারী শাসকের কথা শুনি সেই ছিল এই ব্রাহ্মণ; যার অন্য নাম ছিল রাম। রামের অত্যাচারে এই অঞ্চলের মানুষ খুব অতিষ্ঠ ছিল। তখন শাহ সুলতান বলখী (রহ.) ইসলাম প্রচারের জন্য বলখী নগর থেকে এই অঞ্চলে আসেন। উনার সঙ্গে পরশুরামের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন। এর ফলে শাহ সুলতান এখানে ইসলাম প্রচারের সুযোগ পেয়ে যান। উনার মাজার শরীফ এখনো মহাস্থানগড়ে আছে।
চৌদ্দশ শতকে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ গৌড়, বঙ্গ, পুণ্ড্র, রাঢ়, হরিকেল, সমতট ইত্যাদি নিয়ে “বাঙ্গালা” নামে অখণ্ড এক রাজ্য গড়ে তোলেন। এর ফলে ১৫ শতাব্দীর পর থেকে মহাস্থানগড়ের গুরুত্ব কমতে থাকে এবং এর অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকে।
বহুকাল এই প্রাচীন নগরী লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকে। ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন ১৮০৮ সালে সর্বপ্রথম মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেন। পরবর্তীতে আলেকজান্ডার কানিংহাম ধারণা প্রকাশ করেন এটিই ছিল পুন্ড্রবর্ধন। এখানে প্রথম খননকার্য শুরু করা হয় ১৯২৮-১৯২৯ সালে। এর ফলে মহাস্থানগড় আবার জনসম্মুখে চলে আসে।
মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থান
মহাস্থানগড়ে আছে বিভিন্ন ঔতিহাসিক স্থান এবং স্থাপনা। এদের মধ্যে গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, মঙ্গলকোট, খুল্লনার ধাপ, গদাইবাড়ি ধাপ, তোতারাম পন্ডিতের ধাপ, ভাসু বিহার, লখীন্দরের বাসরঘর, স্কন্ধের ধাপ, মাহী সওয়ার মাজার শরীফ, জাদুঘর ইত্যাদি উল্ল্যেখ যোগ্য।
কিভাবে যাবেন
মহাস্থানগড় যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে বগুড়া জেলায়। ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ, এস আর ট্রাভেলস, টি আর ট্রাভেলস ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির বাস গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, উত্তরা থেকে বগুড়ায় যায়।
ঢাকা থেকে লালমনি এবং রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন বগুড়া হয়ে যাতায়াত করে। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে লালমনি এক্সপ্রেস সকাল ৯ টায়, রংপুর এক্সপ্রেস রাত ১০:১০ মিনিটে ছেড়ে যায়। লালমনি এক্সপ্রেস শুক্রবার এবং রংপুর এক্সপ্রেস রবিবার চলাচল করেনা।
বগুড়া শহর থেকে সিএনজি বা অটো রিক্সা দিয়ে সহজেই চলে যাওয়া যায় মহাস্থানগড়।
কোথায় থাকবেন
বগুড়া শহরে রাত্রি যাপনের জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও মোটেল আছে। চার তারকা হোটেল থেকে সাধারণ মানের হোটেল আছে এখানে। নিচে তাদের কয়েকটির বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।
- হোটেল নাজ গার্ডেন: সিলিমপুর, বগুড়া। যোগাযোগ: ০১৯১৩-৮০১১২২,০১৯১৩-৮০১১১৪
- পর্যটন মোটেল: বনানী মোড়। যোগাযোগ: ০৫১-৬৬৭৫৩
- আকবরিয়া হোটেল: কাজী নজরুল ইসলাম রোড, থানা রোড। যোগাযোগ: ০১৭১৬-১৭৯৯৮২
- হোটেল মম ইন
- হোটেল সেফওয়ে
- সেঞ্চুরি মোটেল
- সিয়াস্তা
- ম্যাক্স মোটেল
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।