যতদূর চোখ যাবে শুধু পানি আর পানি। মাথার উপরে নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, আর নিচে তার প্রতিচ্ছবি। দূরে পানিতে ভাসমান ছোট ছোট গ্রাম। মাথার উপরে উড়ন্ত সাদা সাদা বকের দল। এখানে সেখানে ভাসমান জলজ গাছপালা। জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। এই সব কিছুর এক অপূর্ব সুন্দর সংমিশ্রণ মিঠামইন হাওর (Mithamoin Haor)।
মিঠামইন হাওর কোথায় অবস্থিত
মিঠামইন হাওর বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত। এটি খুবই প্রাচীন এক জনপদ। এটি মিঠামন, মিঠামইন, মিটামন নামেও পরিচিত। এই এলাকায় একসময় প্রচুর মিষ্টি বা মিঠা রসের খাগড়া গাছের বন ছিল। সেখান থেকেই এর এমন নাম বলে ধারণা করা হয়।
মিঠামইন হাওর যাবার উপায়
মিঠামইন যেতে হলে প্রথমেই আসতে হবে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে আসা যায় কিশোরগঞ্জ। মহাখালী, সায়দাবাদ থেকে অনন্যা, যাতায়াত পরিবহন বাসে করে আসা যায় কিশোরগঞ্জ শহর। সায়দাবাদ থেকে এসি বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। সময় নিবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। কমলাপুর থেকে সকাল ৭:১৫ তে এগারসিন্দুর ট্রেন ছেড়ে আসে কিশোরগঞ্জ। ভাড়া ১৩০ থেকে ২৮০ টাকা। সময় নিবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা।
কিশোরগঞ্জ বাস স্টেশন বা রেল স্টেশন থেকে রিক্সা/অটোতে তে একরামপুর বাস/সিএনজি স্ট্যান্ড। এখান থেকে রিজার্ভ বা শেয়ার সিএনজি নিয়ে চামড়া/চামটা ঘাট। চামড়া ঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া নিয়ে যেতে হবে মিঠামইন। সময় নিবে ১:৩০ মিনিট। নৌকা ভাড়া প্রতি ঘন্টা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। ছুটির দিনে ভাড়া কম বেশি হয়। তাই দরদাম করে নিতে হবে। এই নৌকা দিয়েই ঘুরে বেড়ানো যায় মিঠামইন হাওর।
মিঠামইন হাওর এর দর্শনীয় স্থান
মিঠামইন হাওর ছাড়াও এখানে দেখার মতো আরো কিছু স্থান আছে। সেগুলো হলো: মালিকের দরগা, দিল্লির আখড়া, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বাড়ি ইত্যাদি।
মিঠামইনে কোথায় থাকবেন
মিঠামইন এলাকায় থাকার মতো তেমন ভালো কোনো ব্যবস্থা নাই। উপজেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে থাকায় যায়। মিঠামইন বাজার এলাকায় শিকদার হোটেল, সোহেল গেস্ট হাউজ আছে। সেখানে থাকতে পারেন। অথবা কিশোরগঞ্জ শহরে এসে থাকতে পারেন।
মিঠামইনে কি খাবেন
মিঠামইন হাওর এলাকার খাবারের হোটেল গুলোতে সাধারণত হাওরের তাজা মাছ রান্না করে। নিশ্চিন্তে ভাতের সাথে সেগুলো খেতে পারেন। এছাড়া গরু, মুরগি, খাসির মাংসও পাওয়ায় যায়। তবে মাংস থেকে মাছ খাওয়াই ভালো।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
মিঠামইন হাওর এর আশেপাশের আছে বেশি কিছু হাওড়। সবগুলোরই দেখার মতো এবং সৌন্দর্যে ভরপুর। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো:
সতর্কতা
হাওর অনেক বিশাল। অনেক জায়গায় বেশ গভীর। তাই সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না। সাথে লাইফ জ্যাকেট রাখুন। এক নৌকায় বেশি লোক উঠবেন না। নৌকায় বেশি লাফালাফি করবেন না। তাহলে নৌকা ডুবে যেতে পারে। নৌকা ভাড়া করার সময় দরদাম করে নিবেন। এবং অবশ্যই উপরে ছামনি আছে তেমন নৌকা নিবেন। মোটর সাইকেল সাথে থাকলে সাবধানে চালাবেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।