মহামায়া লেক (Mohamaya Lake) নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। পাহাড়ের কোলঘেঁষে আঁকাবাঁকা অপরূপ সুন্দর এই লেক। ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত এই লেকের অন্যতম আকর্ষণ পাহাড়ি ঝরনা। স্বচ্ছ পানির জলাধারের চার পাশ সবুজ চাদরে মোড়া। দেখে মনে হয় যেন কোনো শিল্পীর সুনিপুণ কারুকাজ।
মহামায়া লেক কোথায় অবস্থিত
মহামায়া লেক বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। ফয়েজ লেকের পরে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক (Lake)। এর আয়তন প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার।
এটি মূলত একটি সেচ প্রকল্প। অত্র এলাকার জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি ঢল নিরসনে এবং শুষ্ক মৌসুমে কৃষিখাতে সেচ সুবিধার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড “মহামায়া সেচ প্রকল্প” হাতে নেয় এবং মহামায়া খালের ওপর সুইস গেট স্থাপন করে। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া। এই প্রকল্পে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝর্ণা ও রাবার ডেম।
মহামায়া লেক এ কি করবেন
মহামায়া লেকে কায়াকিং করতে পারেন। কায়াকিং এখানকার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। প্রতি ঘন্টায় এক বোটের ভাড়া ৩০০ টাকা। এক বোটে ২ জন বসা যায়। ৩০ মিনিট ১৫০ টাকা। কায়াকে উঠা সবার জন্য লাইফ জ্যাকেট থাকে। তাই যারা সাঁতার জানে না তারাও কায়াকিং করতে পারবেন নিশ্চিন্তে।
স্টুডেন্ট হলে আর সাথে আইডি কার্ড থাকলে ১০০ তা ডিসকাউন্ট পাবেন। মানে প্রতি ঘণ্টা ২০০ টাকা। তবে ছুটির দিনে এই অফার থাকেনা। সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কায়াকিং করা যায়।
এছাড়া লেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ঘুরেবেড়াতে পারেন। মাঝারি মাপের নৌকা ভাড়া প্রতি ঘন্টা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এক সাথে ৮/১০ জন উঠা যায়। আর বড় নৌকা ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এক সাথে ১৫/২০ জন উঠা যায়। নৌকা ১ ঘন্টায় আশেপাশের সব জায়গা ঘুরিয়ে দেখাবে, ঝর্ণার কাছে নিয়ে যাবে। পিকনিকের জন্য মহামায় দারুন জায়গা। এখানে এসে রান্নাবান্না করে খেতে পারেন। এছাড়া লেকের পারে সমতল ভূমিতে ফুটবল, ক্রিকেট খেলা যায়।
এখানে ক্যাম্পিং করারও সুযোগ আছে। সপ্তাহের যেকোনো দিন রাতের বেলা ক্যাম্পিং করা যাবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত জনপ্রতি ফি ৬০০ টাকা। তবে মেয়েদের ক্যাম্পিং করার এখনপর্যন্ত অনুমতি নাই। মহামায়া লেকে ক্যাম্পিং ও কায়াকিং এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন, ফোন: ০১৮১৬১১০৩০০, ০১৭১৯৩৯৯৯১৫, ০১৬১৬৭৯৬৯৬৯
মহামায় লেক কিভাবে যাবেন
দেশের যেকোন জায়গায় থেকে বাস বা ট্রেন আসতে পারেন ফেনী। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে করে মিরসরাই এর ঠাকুরদীঘি বাজার। ভাড়া ৩০/৪০ টাকা। অথবা চট্টগ্রাম গামী যেকোন বাসে উঠে মিরসরাই এর ঠাকুরদীঘি বাজার। তবে এর জন্য আগে থেকে অবশ্যই সুপারভাইজার কে বলে রাখবেন, আপনি মহামায়া যাবেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে আসতে চাইলে মাদার বাড়ি থেকে সরাসরি বাসে যেতে পারেন মহামায়া লেক। অথবা অলংকার সিটি গেইট থেকে যেকোনো লোকাল বাসে মিরসরাই এর ঠাকুরদীঘি বাজার। ভাড়া ৪০/৭০ টাকা। সময় নিবে ১ ঘন্টার মতো।
ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে পায়ে হেটে অথবা সিএনজি, অটো রিক্সা করে চলে যাবেন মহামায় ইকো পার্কের গেটে। ভাড়া ১৫ টাকা। হেটে যেতে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে।
মহামায় লেক এর টিকেটের মূল্য
মহামায়া ইকো পার্কে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। লেকে কায়াকিং প্রতি ঘন্টা ৩০০ টাকা, প্রতি বোটের জন্য। এক বোটে ২ জন বসা যায়। এছাড়া স্টুডেন্ট কার্ড থাকলে ২০০ টাকা দিয়ে কায়াকিং করতে পারেন। তবে ছুটির দিনে এই অফার প্রযোজ্য নয়।
কোথায় খাবেন
মহামায়া লেকে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই সাথে করে খাবার নিয়ে যেতে পারেন। ঠাকুরদীঘি বাজারে ছোট ছোট কিছু হোটেল আছে। সেখানে খেতে পারেন। মিরসরাই এবং সীতাকুন্ড বাজারে গেলে মোটামোটি মানের বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট পাবেন।
কোথায় থাকবেন
মিরসরাই এ থাকার জন্য ভালো মানের তেমন কোনো আবাসিক হোটেল নাই। সীতাকুন্ডে কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল আছে। সেখানে থাকতে পারেন। তাদের মধ্যে সৌদিয়া, সাইমুন হোটেল অন্যতম। তবে আরো ভালো কোথায় থাকতে চাইলে চট্টগ্রাম শহরে যেতে হবে। এখানে সব ধরণের হোটেল পাবেন। মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম যেতে ১ থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। শহরের অলংকার মোড়, নিউ মার্কেট এলাকায় বেশ কিছু হোটেল আছে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।