আমরা অনেকেই সাধারণত দেশের পরিচিত কয়েকটা জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও ঘুরতে যেতে চাইনা। তবে পজিটিভ দিক হল ইদানীং আমাদের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ আগের থেকে বেশ বেড়েছে। তাই প্রতিদিনই ঘুরে বেড়ানোর জন্য নতুন জায়গার সন্ধান আমরা করছি এবং পাচ্ছি। মৈনট ঘাট (Moinot Ghat) ঠিক তেমনি নতুন একটি আদর্শ দর্শনীয় স্থান।
এখানে আসলে আপনি মুগ্ধ হবেন, তাকিয়ে থাকবেন নদীর অপরূপ জলরাশির দিকে। বিশাল জলরাশি, নদীতে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা, নদীর তীরে হেঁটে বেড়ানো, সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন আছেন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে । মূলত এ কারণেই অনেকে মৈনট ঘাটকে বলে থাকে ছোট কক্সবাজার।
মৈনট ঘাট কোথায় অবস্থিত
মৈনট ঘাট বা মইনট ঘাট (Moinot Ghat) ঢাকা জেলার দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। আসলে মৈনট ঘাট পদ্মা পাড়ের একটি খেয়াঘাট। পদ্মার এক পাড়ে দোহার আর অপর পারে ফরিদপুর জেলা। মৈনট ঘাট পাড় হয়ে মানুষ ফরিদপুরের গোপালপুর যায়।
খেয়া পারাপারের জন্য জায়গাটি আগে থেকেই পরিচিত ছিল। তবে এখন এটা জনপ্রিয় একটি বেড়ানোর জায়গা। এত দিন অনেকটা আড়ালে থাকলেও ঢাকার কাছাকাছি বেড়ানোর ‘হটস্পট’ এখন এই মৈনট ঘাট।
মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া মৈনট ঘাটের এখন নতুন নাম হল মিনি কক্সবাজার। ঘাটের পাশের বেলাভূমি কে মনে হয় সমুদ্রের বীচ, আর বিশাল পদ্মা নদীতে কে মনে হয় সমুদ্র।
মৈনট ঘাট কখন যাবেন
মৈনট ঘাট আপনে সব সময়ই যেতে পারেন। তবে সব থেকে ভাল শীত কালে গেলে। তখন নদী অনেক শান্ত থাকে, বীচ টাও অনেক বড় মনে হয়। মৈনট ঘাটের আসল সৌন্দর্য এসময়ই দেখা যায়। নদীর মাঝে একটা চর আছে ওটা কেবল শীতকালেই দেখা যায় ভালো করে।
চাইলে বর্ষা কালেও যেতে পারেন। তখন নদী পুরা ভরপুর এবং অনেক উত্তাল থাকে। নদীতে স্রোত থাকে প্রচুর। তখন নদী আর আশে পাশের বিল এক হয়ে যায়। কোনটা নদী আর কোনটা বিল বুঝা যায় না। বীচটাও আর তেমন দেখা যায় না। তাই বর্ষাকালে গেলে আপনে অনেকটা হতাশ হতে পারেন।
মৈনট ঘাট যাওয়ার উপায়
মৈনট ঘাট ঢাকার খুব কাছেই, তাই দিনে যেয়ে ঘুরাঘুরি করে আবার বিকালে ফেরত আসা যায়। মৈনট ঘাট বিভিন্ন ভাবে যাওয়া যায়। তবে সব থেকে সহজ উপায় হচ্ছে বাস। ঢাকার গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজার এর কাছ থেকে যমুনা পরিবহন নামে একটা বাস ছাড়ে, যা সরাসরি মৈনট ঘাট আসে। ভাড়া নিবে ৯০ টাকার মতো (কম বেশি হতে পারে)।
গুলিস্থান থেকে নবাবগঞ্জ বা দোহারের বাসে করেও আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভেঙে ভেঙে আসতে হবে। আগেই বাসের হেল্পার কে বলে রাখবেন আপনে মৈনট ঘাট যাবেন। তাহলে ওরা কাছাকাছি আপনাকে নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে অটো রিক্সা করে চলে যেতে পারবেন মৈনট ঘাট।
এছাড়া ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ থেকে টেম্পুতে আটিবাজার, সেখান থেকে আবার সিএনজি করে কোনাখোলা। সেখান থেকে নবাবগঞ্জ বা দোহারের বাসে উঠতে হবে। তবে সব থেকে ভাল হয় ৮-১০ জনের গ্রূপে যাওয়া। তখন একটা মাইক্রো বাস ভাড়া করে নিবেন। তেমন খরচ পড়বেনা।
মৈনট ঘাটে কোথায় থাকবেন
এখন পর্যন্ত মৈনট ঘাটের আশপাশে ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং তৈরি হয়নি। স্থানীয় কোনো বাসিন্দাদের বাড়ি ম্যানেজ করতে পারলে ভাল, না হলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া ভাল।
মৈনট ঘাটে কোথায় খাবেন
মৈনট ঘাটে তেমন কোনো ভালো মানের রেস্টুরেন্ট নাই। তবে কিছু ভাতের হোটেল আছে যেখানে দুপুরের খাবার খাওয়া যায়। এখানে ভাতের সাথে পদ্মার ইলিশ খেতে ভীষণ মজা। তবে সাইজ দেখে দরদাম করে নিলে ভাল হয়। একটু বড় সাইজের ইলিশ খেতে হলে তাদের বলতে হবে। তাহলে তারা ম্যানেজ করে দিবে। এছাড়া বোয়াল, চিংড়ি ইত্যাদি মাছ ও পাওয়া যায়।
কিছু মোদী দোকান আছে যেখান থেকে চিপস, কোকাকোলা, চকলেট, ব্রেড, কলা ইত্যাদি কিনতে পারবেন। সময় থাকলে কার্তিকপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি অবশ্যই খাবেন । এখানকার মিষ্টি বিদেশেও যায়। বেশ কিছু মিষ্টির দোকান আছে যেমন: নিরঞ্জন মিষ্টান্নভাণ্ডার, মুসলিম সুইটস, রণজিৎ মিষ্টান্নভাণ্ডার ইত্যাদি।
মৈনট ঘাটে কি কি করবেন
মৈনট ঘাট অনেক সুন্দর জায়গা। এখানে নদীর বেলাভূমিতে ঘুড়াঘুড়ি করতে অনেক মজা। পরে দরদাম করে ১ ঘন্টার জন্য একটা ট্রলার ভাড়া করে নিতে পারেন পদ্মায় ঘুরাবার জন্য। সাথে হালকা কিছু নাস্তা ব্রেড, কলা, পানি, চকলেট ইত্যাদি সাথে নিয়ে নিতে পারেন। উত্তাল পদ্মায় পা ঝুলিয়ে এইসব খাবার খেতে দারুন লাগে।
ভাল একটা জায়গা দেখে পদ্মার পারে নেমে যাবেন, পানিতে লাফালাফি, খেলাধুলা করার জন্য। তবে পদ্মায় অনেক স্রোত। সাঁতার জানলেও আপনাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। তাই সাবধান থাকবেন। তীরের কাছাকাছি থাকবেন। দল বেঁধে থাকবেন। সাঁতার না জানলে পানিতে না নামাই ভাল। এমন তীব্র স্রোত এখানে না আসলে বুঝতে পারবেন না।
সতর্কতা
পদ্মা অনেক খরস্রোতা নদী। সব সময় প্রচুর স্রোত থাকে। তাই সাবধান থাকবেন। সাঁতার না জানলে পানিতে না নামাই ভাল। দুপুরে মারাত্মক গরম থাকে। তাই মাথায় ক্যাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
নৌকা ভাড়া নিলে দরদাম করে নিবেন। ট্যুরিস্ট স্পট হওয়ায় খাবার দাম একটু বেশি। খাবার অর্ডার করার আগে দাম জেনে নিবেন। যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে আসে পাশের পরিবেশ দুষিত করবেন না।
সময় থাকলে সোহানা হোটেলের, বিখ্যাত ইনসার আলীর খুদের ভাত খেয়ে যেতে পারেন। সব থেকে ভালো হয় যাবার পথে, এখানে সকালে নাস্তা করে গেলে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।