ময়মনসিংহ জেলার জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি (Muktagacha Jamidar Bari) বা মুক্তাগাছা রাজবাড়ি অন্যতম। প্রায় ১০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত এই রাজবাড়িটি বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন।
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি কোথায় অবস্থিত
মুক্তাগাছা রাজবাড়ী বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত। ময়মনসিংহ থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ-জামালপুর মহাসড়কের সংযোগ স্থল থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর পূর্বদিকে মুক্তাগাছা রাজবাড়ির অবস্থান। তখনকার জমিদার ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রথমে রাজা এবং পরে মহারাজা উপাধি পেয়েছিলেন। আর এর পর থেকে এই জমিদার বাড়ি রাজবাড়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির ইতিহাস
শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরী ১৭২৭ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তাগাছায় জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বগুড়া অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন এবং মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর দরবারে রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন। তিনি নবাবের খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ তিনি বিনোদবাড়ীর জমিদারি পান। মুক্তাগাছার পূর্বের নাম ছিল বিনোদবাড়ী।
১৭৫০ থেকে ১৭৬০ সালের মধ্যে এই জমিদার বাড়িটি গড়ে তোলা হয়। এই বাড়ির স্থাপত্যশৈলী খুবই চমৎকার। প্রবেশমুখে আছে কারুকার্যমণ্ডিত বিশাল ফটক। ফটকের পাশেই দৃষ্টিনন্দন রাজ রাজেশ্বরী মন্দির। রাজবাড়ির ভিতরে আছে ঘূর্ণায়মান একটি রঙ্গমঞ্চ, রাণীর অন্দরমহল, রাজকোষাগার, টিন আর কাঠের তৈরি অসাধারণ রাজপ্রাসাদ। আছে প্রায় ১০ হাজার দুর্লভ বই সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি। আরও আছে দরবার হল, লক্ষ্মীপূজা আর দুর্গাপূজার ঘর, কাচারিঘর। আর রয়েছে একটি গোপন সুড়ঙ্গ।
জমিদার বাড়ির আশেপাশেই আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। আরোও আছে অনেক মন্দির আর মিষ্টির দোকান।
কিভাবে যাবেন
মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি যেতে হলে আসতে হবে ময়মনসিংহ জেলায়। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় ১২১ কিলোমিটার এবং রেলপথে প্রায় ১২৩ কিলোমিটার। ঢাকার সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহে আসার এসি/নন-এসি বাস সার্ভিস আছে। এনা, সৌখিন, নূর, শামীম, নিরাপদ ট্রাভেলস্, আলম এশিয়া, বিলাস, এস আলম, সিসকম, ড্রিমল্যান্ড, মামুন, শ্যামলী প্রভৃতি পরিবহণ কোম্পানী এই রুটে নিয়মিত বাস সার্ভিস পরিচালনা করে। ভাড়া ১৫০/৩৫০ টাকা। সময় নিবে ৩/৪ ঘন্টা।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল ৭:৩০ মিনিটে, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস দুপুর ২:২০ মিনিটে, যমুনা এক্সপ্রেস বিকাল ৪:৪০ মিনিটে, ব্রম্মপুত্র সন্ধ্যা ৬:০০ টায়, হাওর এক্সপ্রেস রাত ১১:৫০ মিনিটে ছেড়ে যায়। ভাড়া ১২০/৩৬০ টাকা। সময় নিবে ৩/৪ ঘন্টা।
ময়মনসিংহ এসে টাঙ্গাইলগামী বাসে উঠে চলে যাবেন মুক্তগাছা। ভাড়া ২০/৩০ টাকা। এছাড়া সিএনজি করেও যেতে পারেন। ভাড়া ৪০/৫০ টাকা, রিজার্ভ ২০০/২৫০ টাকা। সময় নিবে ৩০/৪০ মিনিট। মুক্তাগাছা নেমে হেটে বা রিকশা নিয়ে বাজারের ভিতর দিয়ে চলে যাবেন মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি।
ঢাকা থেকে ইসলাম পরিবহনের বাস সরাসরি মুক্তাগাছা যায়। তবে এতে বেশি সময় লাগে। অথবা প্রাইভেট কার নিয়েও যেতে পারেন মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি।
টিকেট
জমিদার বাড়িতে ঢুকতে হলে টিকেট কাটা লাগে। এছাড়া ডকুমেন্টারি বা রিপোর্টের কাজে গেলে আলাদা লিখিত অনুমতির দরকার হয়। জমিদার বাড়ির পুরো ইতিহাস বিস্তারিত জানতে গাইড নিতে পারেন। মূল ফটকেই থাকে অভিজ্ঞ গাইড। কিছু বকশিশ দিলেই চলে।
কোথায় থাকবেন
মুক্তাগাছায় বেশ কিছু আবাসিক হোটেল আছে। সেখানে থাকতে পারেন। অথবা ময়মনসিংহ শহরে এসেও থাকতে পারেন। ময়মনসিংহ শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল আছে। তাদের মধ্যে হোটেল মুস্তাফিজ, সিলভার ক্যাসল, আমির ইন্টারনেশনাল উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
মুক্তাগাছায় এলে এখানকার বিখ্যাত মন্ডা খেতে ভুলবেন না। এখানকার মণ্ডার সুনাম সারা দেশের মানুষের কাছে সুপরিচিত। রাজবাড়ীর সামনেই আছে ঐতিহ্যবাহী গোপাল পালের মণ্ডার দোকান। এখানেই পাবেন আসল এবং অকৃত্রিম মন্ডা। প্রতি পিস মণ্ডার দাম ২২ টাকা। প্রতি কেজির দাম ৪৪০ টাকা।
মুক্তাগাছার মণ্ডার ইতিহাস
১৮২৪ সালে শ্রী রাম গোপাল পাল এই মণ্ডা তৈরি করে তৎকালীন জমিদার মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরীকে পরিবেশন করেন। জমিদারের খাবারটি এতই পছন্দ হয় যে, তখন থেকে রাজপরিবারের অতিথিদের আপ্যায়নে মণ্ডা দেওয়া হতো। তখন থেকেই দোকানটি ‘গোপাল পালের মণ্ডার দোকান’ নামে পরিচিতি পেতে থাকে। এই মণ্ডা ব্যবসার সম্প্রসারণে রাজপরিবার টাকাপয়সা দিয়ে অনেক সহযোগিতা করেছিল।
মুক্তাগাছা বাজার বেশ কিছু হোটেল আছে। এখানে ভাত, মাংস, মাছ খেতে পারবেন। এছাড়া ময়মনসিংহ শহরে এসেও খেতে পারেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।