ভারত এবং চীনের সংঘাতের কারণে গালওয়ান উপত্যকা এখন সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে খুবই পরিচিত এক নাম। তবে অনেকেই হয়তো জানেনা, এই উপত্যকার নামকরণ করা হয়েছিল লাদাখের এক কিংবদন্তী পর্বতারোহী এবং অভিযাত্রী, গুলাম রসুল গালওয়ানের নামে। প্রাকৃতিক ভাবে দারুন সুন্দর এই উপত্যকা পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
গালওয়ান উপত্যকা
গালওয়ান নদী কারাকোরামের গিরিকন্দর থেকে উৎপন্ন হয়েছে। লাদাখের ধূসর পাহাড় আর রুক্ষ ও প্রশস্ত পাথুরে ভূমির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিতি হয়ে অবশেষে শিয়ক নদীতে গিয়ে মিশেছে। শিয়ক নদী সিন্ধুর এক উপনদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ কিলোমিটার। এই নদীর এলাকাই বিখ্যাত গালওয়ান উপত্যকা।
গুলাম রসুল গালওয়ান
গুলাম রসুল গালওয়ানের পূর্ব পুরুষেরা ছিল মুসলিম এবং কাশ্মীরের বাসিন্দা। উনার দাদা কারা গালওয়ান ছিলেন কাশ্মীরের বিখ্যাত এক দস্যু, যে ধনীর সম্পদ লুটে গরিবের মধ্যে বিলিয়ে দিতো। পরে চুরির দায়ে উনার ফাঁসি হয়। আর পরিবারের বাকি সদস্যরা লাদাখে পালিয়ে যায়। কাশ্মীরি ভাষায় ‘গালওয়ান’ শব্দের অর্থ হল ডাকাত। আর এভাবেই তাদের বংশের সাথে গালওয়ান শব্দটি যুক্ত হয়ে যায়।
১৮৭৮ সালে লাদাখের রাজধানী লেহ-তে গুলাম রসুল গালওয়ান জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্রতার কারণে মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের সঙ্গে নানা অভিযানে সামিল হতে শুরু করেন।
গালওয়ান উপত্যকা নাম যেভাবে হলো
গুলাম রসুল ১৮৯২ সালে চার্লস মারে-র সঙ্গে পামীর ও কাশগার পর্বত অভিমুখে এক অভিযানে বের হন। কিন্তু দলটি লাদাখের এক দুর্গম অঞ্চলে উঁচু পর্বতমালা আর খাড়া গিরিখাতের মাঝখানে আটক যায়। গুলাম রসুল নিজের চেষ্টায় একটা সহজ রাস্তা খুঁজে বের করেন, যা দিয়ে সবাই সেখান থেকে বের হয়ে আসে। অভিযাত্রী দলের নেতা চার্লস মারে কিশোর গুলাম রসুলের প্রতিভায় খুব মুগ্ধ হয়ে যান। আর যে জলধারাটির পাশ দিয়ে নতুন রাস্তাটির সন্ধান মেলে তার নামকরণ করে ফেলেন ‘গালওয়ান নালা’। আর এভাবেই মাত্র ১৪ বছর বয়সের এক মুসলিম গুলাম রসুল গালওয়ান লাদাখের ভূগোলের অংশ হয়ে যান।
ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে পর্বতশৃঙ্গ, উপত্যকা, গিরিখাত সব কিছুই কোনো ব্রিটিশ অভিযাত্রীদের নামে নামকরণ করা হতো। সেখানে দেশীয় কোনো ব্যক্তির নামে নাম রাখার ঘটনা ছিল খুবই বিরল। গালওয়ান উপত্যকা ছাড়া আর কোথাও এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।