নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা (Napittochara Waterfall) বর্তমানে এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। পাহাড়ি সবুজ অরণ্যে ঝর্ণার পানি আছড়ে পড়ার অনুভূতি এখানে আসলেই বুজতে পারবেন। এই ঝর্ণা ছাড়াও এখানে আরো তিনটি সুন্দর ঝর্ণা আছে। এগুলো হলো কুপিকাটাকুম ঝর্ণা, মিঠাছড়ি ঝর্ণা এবং বান্দরকুম বা বান্দরখুম বা বান্দরিছড়া ঝর্ণা। আর এই ঝর্ণায় যাওয়ার ঝিরিপথ কে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল বলে।
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা কোথায় অবস্থিত
নাপিত্তাছড়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারী বাজারের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশেই এর অবস্থান।
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা কখন যাবেন
এই ঝর্ণাতে সব সময়ই কম বেশি পানির প্রবাহ থাকে। সব থেকে বেশি থাকে বর্ষাকালে। তাই বর্ষাকালে যাওয়াই উত্তম। তবে বর্ষাকালে কিছু বিপদ থাকে। তাই সব থেকে ভালো হয় মাঝ বর্ষায় না গিয়ে বর্ষার আগে আগে বা পর পর যাওয়া। তখন আশেপাশের পরিবেশ মিলিয়ে একটু বেশি সুন্দর মনে হয় একে।
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা কিভাবে যাবেন
দেশের যেকোন জায়গায় থেকে বাস বা ট্রেন আসতে পারেন ফেনী। ঢাকা থেকে ফেনী বাস ভাড়া ২৮০ টাকা। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম গামী লোকাল বাসে উঠে যাবেন। মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে। ভাড়া ৩০/৪০ টাকা।
অথবা চট্টগ্রাম গামী যেকোন বাসে উঠে, মিরসরাই এর নয়দুয়ারী বাজারে নেমে যাবেন। তবে এর জন্য আগে থেকে অবশ্যই সুপারভাইজার কে বলে রাখবেন, আপনি নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যাবেন। ভাড়া নন এসি ৪৮০ টাকা, এসি ৮০০/১১০০ টাকা।
ঢাকা থেকে মিরসরাই আসতে বাসে যে ভাড়া নিবে, মিরসরাই থেকে ঢাকা যেতে তার থেকে কম ভাড়া নিবে। যদিও বাস একই কোম্পানির হয়। কিছু কোম্পানির বাস ঢাকার উত্তরা এবং গাবতলী পর্যন্ত আসে। তাই আপনার বাসার কাছাকাছি আসে এমন বাসের টিকেট কাটতে পারেন।
মিরসরাই থেকে নাপিত্তাছড়া
নয়দুয়ারী বাজারে নেমে সেখান থেকে স্থানীয় একজন গাইড নিতে পারেন। গাইড ভাড়া ২০০/৩০০ টাকা। অথবা নিজেই নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় চলে যেতে পারেন। নয়দুয়ারী থেকে হেঁটে যেতে ৩০/৪০ মিনিট সময় লাগবে। নাপিত্তাছড়া ট্রেইল ধরে সামনে এগিয়ে গেলে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ক্যাসকেড পাবেন। আর ঝিরির মাঝখানে প্রথমেই পাবেন নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। এই ঝর্ণা থেকে সামনে এগিয়ে গেলে আরো তিনটি ঝর্ণা পাবেন।
ট্রেকিং শুরু করার জায়গাতেই বেশ কিছু খাবারের হোটেল পাবেন। দুপুরের খাবার অর্ডার করলে হোটেল গুলোতে ফ্রিতে ব্যাগ রাখা যায়। আর খাবার না খেলে প্রতি ব্যাগ ২০ টাকার বিনিময়ে রাখতে পারবেন। মোবাইল, ক্যামেরা, টাকা পয়সা সাথে নিয়ে বাকি সব কিছু এখানে রেখে যেতে পারেন নিশ্চিন্তে। তাহলে হাটতে সুবিধা হবে।
হাঁটার বুবিধার্থে ট্রেকিং শুরুর জায়গা থেকে একটি বাঁশের লাঠি ভাড়া নিয়ে নিবেন। ২০ টাকা ভাড়া নিবে। ঝর্ণা দেখে এসে তা ফেরত দিলে ১০ টাকা রিটার্ন করে দিবে।
কোথায় খাবেন
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যাবার পথে বেশ কিছু খাবারের হোটেল পাবেন। সেখানে খেতে পারেন। এখানে খাবার বেশ সস্তা। আনলিমিটেড ভাত, ডাল সহ বিভিন্ন তরকারির প্যাকেজ আছে। ভাতের সাথে দেশি মুরগি ১৩০ টাকা, ফার্মের মুরগি ১০০ টাকা। সাথে আলুভর্তা, সালাদ নিলে ১৪০ টাকা।
তবে মনে রাখবেন বিকাল ৫ টার পর সব হোটেল বন্ধ হয়ে যায়। আর এখানে না খেতে চাইলে মিরসরাই ফিরে খেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
ঝর্ণার কাছে থাকার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নাই। তাই মিরসরাই এসে থাকতে হবে। অথবা সীতাকুন্ড এসেও থাকতে পারেন। এখানে মোটামোটি মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। তার মধ্যে সাইমুন, সৌদিয়া অন্যতম। এছাড়া চট্টগ্রাম এসেও থাকতে পারেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান আছে। সব গুলো মোটামোটি কাছাকাছি হওয়াতে এক দিনে বেশ কয়েকটা কভার করা যায়। তবে এক রাত দুই দিন সময় নিয়ে আসলে প্রায় সব গুলো কভার করতে পারবেন। আপনার সময় বিবেচনা করে ট্যুর প্ল্যান সেভাবেই করবেন। এখানকার জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট গুলো হলো:
- সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
- চন্দ্রনাথ পাহাড়
- নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা
- নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
- কমলদহ ঝর্ণা
- ঝরঝরি ঝর্ণা
- বাঁশবাড়িয়া বীচ
- গুলিয়াখালি বীচ
- কুমিরা সন্দ্বীপ ফেরী ঘাট
সতর্কতা এবং টিপস
- অতিরিক্ত খাবার, খাবারের প্যাকেট, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- ভালো মানের গ্রিপের জুতা পরে যাবেন।
- কাঁধের ব্যাগ নিবেন। আর ব্যাগের ওজন যাতে কম থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
- ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পিচ্ছিল। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন।
- জোকের প্রাদুর্ভাব আছে। তাই ঘাস এড়িয়ে চলুন।
- জোঁক ছাড়ানোর জন্য সাথে লবন বা গুল রাখুন।
- সাথে পাওয়ার ব্যাংক রাখুন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।