বাংলাদেশের ড্যান্ডি নামে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ মূলত একটি বাণিজ্যিক এবং শিল্প অঞ্চল। এই অঞ্চল এক সময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল। বাণিজ্যিক এলাকা হলেও এইখানে আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় সহজেই ঘুরে আসা যায় নারায়ণগঞ্জ। আসুন দেখে নেই একদিনের নারায়ণগঞ্জ ট্যুর প্ল্যান ।
নারায়ণগঞ্জ এর দর্শনীয় স্থান
নারায়ণগঞ্জ এ আছে বেশ কিছু প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক স্থান। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো: সোনারগাঁও যাদুঘর, পানাম সিটি, বাংলার তাজমহল , মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি, জিন্দা পার্ক, মেরী এন্ডারসন ভাসমান রেস্তোরাঁ, হাজিগঞ্জের ঈশা খাঁর কেল্লা, সোনাকান্দা দুর্গ, বিবি মরিয়মের মাযার ও মসজিদ ইত্যাদি
নারায়ণগঞ্জ ট্যুর প্ল্যান
নারায়ণগঞ্জ পরিবার, বন্ধুবান্দব নিয়ে সময় কাটানোর জন্য খুবই আদর্শ জায়গা। এখানকার প্রাচীন স্থাপনা গুলো আপনাকে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝিয়ে দিবে। ঢাকার কাছেই হওয়াতে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারেন। আসুন দেখে নেই ১ দিনের নারায়ণগঞ্জ ট্যুর প্ল্যান।
পানাম সিটি
গুলিস্থান থেকে বাসে চলে যান সোনারগাঁও। এর পর অটো বা রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন পানাম সিটি বা পানাম নগর। বাংলার বার ভূঁইয়াদের সর্দার ঈশা খাঁ ১৫ শতকে সোনারগাঁয়ে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। সোনারগাঁয়ের প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠে এই নগরী। পানাম নগরীর বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণশৈলীতে রয়েছে অপূর্ব কারুকার্য ও অভিজাত্যের ছোঁয়া।
সোনারগাঁ যাদুঘর
পানাম সিটিতে ১/২ ঘন্টা সময় সময় কাটিয়ে চলে যান পাশেই অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর বা সোনারগাঁ যাদুঘর। আপনি পায়ে হেটে অথবা রিক্সা নিয়ে নিতে পারেন। টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ করে জাদুঘরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করুন। প্রাচীন বাংলার রাজধানী দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। এখানে ১/২ ঘন্টা থেকে বাহিরে এসে লাঞ্চ করে নিন।
বাংলার তাজমহল
সোনারগাঁ জাদুঘরের গেট থেকে সিএনজি নিয়ে চলে যান বাংলার তাজমহল। বিশ্বের প্রাচীন সপ্তাশ্চর্য ভারতের আগ্রার তাজমহলের মডেল অনুসারে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর চার কোনায় চারটি বড় বড় মিনার, মাঝখানে মূল ভবন। সামনে পানির ফোয়ারা, চারদিকে ফুলের বাগান, দুই পাশে দর্শনার্থীদের বসার স্থান। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন এটি আগ্রার তাজমহল। এখানে ৩০ মিনিট থেকে বের হয়ে আসুন।
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
তাজমহল থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি চলে যান মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। অথবা প্রথমে বরপা বাসষ্টান্ড এসে সেখান থেকে বাসে চলে যাবেন রূপসী বা ভুলতা বাসষ্টান্ড। তারপর রিক্সা বা সিএনজি করে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। বাবু রামরতন ব্যানার্জী ১৮৮৯ সালে এই বাড়ি নির্মাণ করেন। এই জমিদার বাড়িটিতে আছে ৯৫টি কক্ষ, ২টি পুকুর, বেশকিছু নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভাণ্ডার, কাচারি ঘর, বিশাল বাগান। এখানে ঘন্টাখানেক সময়ে কাটিরে বের হয়ে আসুন।
জিন্দা পার্ক
জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে সিএনজি নিয়ে চলে যান জিন্দা পার্ক। প্রায় ১৫০ একর আয়তনের এই পার্কে আছে ১০,০০০ এর বেশি গাছপালা, ৫ টি জলধারা, ট্রি-হাউস, টিলা, ফুলের বাগান। পার্কের ৫০ ভাগ এলাকা জুড়ে আছে লেক। আর এই লেকের পানিতে নৌকায় চড়ে ঘুরেবেড়াতে দারুন মজা। বিকালের সময়টা এই প্রাকৃতিক পরিবেশে কাটাতে দারুন লাগবে। জিন্দা পার্ক থেকে ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে ঢাকা ফেরত চলে আসুন।
কোথায় থাকবেন
নারায়ণগঞ্জ ঢাকার খুব কাছেই। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে পারবেন। তাই সেখানে থাকার দরকার নাই।
নারায়ণগঞ্জ ট্যুর প্ল্যান নিয়ে শেষ কথা
সব কগুলো স্পট কভার করা একটু টাফ এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে খুব সকালে রওনা দিলে মোটামোটি ভাবে উপরের স্পট গুলো শেষ করা যাবে। আর সব থেকে ভালো হয় প্রাইভেট কার ভাড়া করে নিলে। আশা করি এই নারায়ণগঞ্জ ট্যুর প্ল্যান আপনার নারায়ণগঞ্জ ভ্রমণ কে আরো সহজ এবং সুন্দর করবে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।