চট্টগ্রাম বিভাগের দর্শনীয় স্থান

নিঝুম দীপ

Loading

নিঝুম দীপ

নিঝুম দীপ (Nijhum Dwip) এ গেলে মনে হবে এটি আসলেই নিঝুম। যেন বাংলাদেশ ছেড়ে, পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো এক স্বপ্নভূমি অবলোকন করছেন। ম্যানগ্রোভ বন, বিস্তীর্ণ বালুরাশির, মানুষের জীবনযাত্রা ইত্যাদি সব মিলিয়ে এই দ্বীপ বৈচিত্র্যময়।

নিঝুম দীপ কোথায় অবস্থিত

নিঝুম দীপ বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত। ২০১৩ সালে এটি জাহাজমারা ইউনিয়ন হতে পৃথক হয়ে নিজেই আলাদা ইউনিয়ন পরিষদের মর্যাদা লাভ করে। এটি মেঘনা নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা এক চর। যা মূল ভূখণ্ড থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত।

নিঝুম দীপ এর ইতিহাস

১৯৪০ সালের দিকে এই দ্বীপটি বঙ্গোপসাগর হতে জেগে উঠা শুরু করে। একসময় মাছ ধরতে গিয়ে হাতিয়ার জেলেরা নিঝুম দীপ আবিস্কার করে। ১৯৫০ সালের দিকে এখানে জন বসতি গড়ে উঠে। নিঝুম দ্বীপের পূর্বের নাম ছিলো চর ওসমান। কেউ কেউ একে আবার ইছামতীর চর বলে। ১৯৭৯ সালে এই দ্বীপের নাম পরিবর্তন করে প্রশাসনিকভাবে নিঝুম দ্বীপ রাখা হয়।

নিঝুম দ্বীপ কখন যাবেন

অক্টোবর থেকে এপ্রিল নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার সব থেকে ভালো সময়। কেননা এসময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। অন্যসময় সাগর উত্তাল থাকে।

নিঝুম দীপ এর দর্শনীয় স্থান

নিঝুম দীপ এর দর্শনীয় স্থান গুলো হলো

ম্যানগ্রোভ বন

নিঝুম দ্বীপ বনায়ন প্রকল্প

নামার বাজার সমুদ্র সৈকত

নামার বাজার থেকে পায়ে হেঁটে যেতে ১০ মিনিট সময় লাগে। এখান থেকে সূর্য উদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এখানে বারবিকিউ করতে পারেন।

চোয়াখালি ও চোয়াখালি সমুদ্র সৈকত

খুব সকালে চোয়াখালিতে গেলে হরিণ দেখা যায়। মটর সাইকেল ওয়ালাকে বলে রাখুন। তাহলে সকালে নিয়ে হরিন দেখিয়ে আনবে।

দমার চর

এই চরের দক্ষিণ দিকে নতুন একটি সমুদ্র সৈকত আছে। লোকে একে বলে “কুমারী দ্বীপ”। খুব সকালে এখানে অনেক পাখির দেখা পাওয়া যায়।

চৌধুরী খাল ও কবিরাজের চর

এখানে যেতে হবে বিকেলে। মানে সন্ধ্যার আগে। খাল পারি দিয়ে ঘন্টা খানেক হাঁটলে বনের মধ্যে হরিণের পালের দেখা পেতে পারেন।

কমলার দ্বীপ

কমলার খালে অনেক ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। এছাড়াও আশে পাশের দ্বীপগুলো সুন্দর। পুরো দ্বীপটা হেঁটে ঘুরতে পারেন।

নিঝুম দীপ কিভাবে যাবেন

নিঝুম দীপ স্থল ও জলপথ, উভয় পথেই আসা যায়। সড়ক পথে সময় কিছুটা কম লাগে। কিন্তু বার বার ভেঙে ভেঙে যেতে হয় বলে অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে।

ট্রেন/বাসন

কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে নোয়াখালীর মাইজদিতে নামতে হবে। আর বাসে করে গেলে নোয়াখালীর সোনাপুর। এর পর সোনাপুর বা মাইজদি থেকে যেতে হবে চেয়ারম্যান ঘাট। মাইজদি বা সোনাপুর থেকে লোকাল বাস বা সিএনজি দিয়ে যাওয়া যায় চেয়ারম্যান ঘাট। এর পর চেয়ারম্যান ঘাট থেকে যেতে হবে হাতিয়া।

স্পিডবোট, ট্রলার বা সি-ট্রাকে করেই যাওয়া যায় হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। এর পর নলচিরা ঘাট থেকে সিএনজি বা বাইক নিয়ে যেতে হবে মোক্তারঘাট। মোক্তারঘাট থেকে লোকাল ট্রলারে উঠে পৌঁছে যাবেন নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে।

লঞ্চ

প্রতিদিন সদরঘাট থেকে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে যায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে। যে কোনো একটায় উঠে সরাসরি পৌঁছে যাবেন হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাটে। লঞ্চ সন্ধ্যায় ছেড়ে পরদিন সকাল ৮-৯টার মধ্যে হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাটে পৌঁছায়।

পৌঁছে সকালের নাস্তা করে করে নিবেন। তমুরুদ্দি ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার পথ দুটি। আসা যাওয়ার সময় আলাদা পথ ব্যবহার করতে পারেন। প্রথম পথে তমুরুদ্দি ঘাট থেকে সিএনজি/বাইক ভাড়া করে হাতিয়ার মোক্তার ঘাটে যাবেন। মোক্তার ঘাট থেকে লোকাল ট্রলারে সরাসরি নিঝুম দ্বীপ।

দ্বিতীয় পথে তমুরুদ্দি ঘাটের পাশের বাজার থেকে ট্রলারে করে সরাসরি নিঝুম দ্বীপ। ট্রলার রিজার্ভ করেও যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া বেশি পড়বে। এছাড়া ফিশিং ট্রলারে করেও যেতে পারেন নিঝুম দ্বীপ।

নিঝুম দ্বীপ এ কোথায় থাকবেন

নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল এবং রিসোর্ট আছে। হোটেল এবং রিসোর্ট গুলো মূলত নামার বাজার এবং বন্দরটিলা এলাকায়। বন্দরটিলা এলাকায় থাকতে চাইলে নিঝুম দ্বীপ ড্রিম ল্যান্ড রিসোর্ট, হোটেল সেরাটনে থাকতে পারেন।

এছাড়া বন্দরটিলা ঘাট থেকে বাইক বা রিক্সা নিয়ে যেতে পারেন নামার বাজারে এলাকায়। এখানে নিঝুম রিসোর্ট, হোটেল শাহীন, হোটেল সোহেল, হোটেল দ্বীপ সন্দ্বীপ, মসজিদ বোর্ডিং এ থাকতে পারেন। আরো থাকতে পারেন জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, বন বিভাগের ডাক বাংলোতে। এছাড়া চাইলে ক্যাম্পিং করেও থাকতে পারবেন।

নিঝুম দ্বীপ এ ক্যাম্পিং

নিঝুম দ্বীপ এ ক্যাম্পিং (Camping) করা যায়। যেকোনো জায়গায় তাবু টানতে পারেন। কোনো অসুবিধে নাই। তবে বুনো মহিষ থেকে একটু সাবধানে থাকতে হয়। ক্যাম্পিং এর জন্য সব থেকে ভালো জায়গা হলো নামা বাজার সাগর পারের বিশাল খোলা মাঠ। এছাড়া নিঝুম দ্বীপ এর জাতীয় উদ্যান এলাকায় ক্যাম্পিং এর জন্য তাবু ভাড়া পাওয়া যায়।

3.6 5 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx