স্বচ্ছ নীল জলরাশির নিলাদ্রী লেক (Niladri Lake) এর এক পাশে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত ছোট ছোট টিলা, আর অন্য পাশে বিশাল পাহাড়ের দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে তুলবে। এই স্বতন্ত্র সৌন্দর্যের কারণেই নিলাদ্রী লেককে অনেকেই ‘বাংলার কাশ্মীর’ বলে অভিহিত করে, যেখানে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছে।
নীলাদ্রি লেক কোথায় অবস্থিত
নীলাদ্রি লেক বা শহীদ সিরাজ লেক বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় টেকেরঘাট গ্রামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। স্থানীয় লোকজন একে টেকেরঘাট পাথর কোয়ারি নামে চিনে। লেকের নীল পানি, ছোট ছোট সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ টিলা, আর পাহাড় মিলিয়ে অনেকে এই জায়গাকে বাংলাদেশের কাশ্মীর বলে থাকে।
নিলাদ্রী লেক এসে কি করবেন
নিলাদ্রী লেক দারুন সুন্দর। ছবি তুলার জন্য খুবই আদর্শ জায়গা। লেকের বিভিন্ন পয়েন্টে বসে ছবি তুলবেন। পায়ে হেটে পুরো লেক ঘুরে দেখবেন। লেকের পাশে ছোট ছোট সবুজ টিলা গুলো অসাধারণ সুন্দর। অনেকটা কাশ্মীর কাশ্মীর ভাব আছে। টিলার উপরে বসে ছবি তুলবেন। লেকে নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়, কায়াকিং করা যায়। উত্তর পাশের টিলার উপরে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যায়। ভারতের বর্ডারের দিকে বেশ বড় বড় পাথর আছে। পাথর গুলো বেশ সুন্দর এবং ছবি তোলার জন্য আদর্শ।
নীলাদ্রি লেক কিভাবে যাবেন
নীলাদ্রি লেক যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। প্রতিদিন রাজধানী ঢাকার গাবতলী, পান্থপথ, আরামবাগ, ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে এনা, শ্যামলী, হানিফ, মামুন ইত্যাদি পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস সুনামগঞ্জ শহরে যায়। এসি বাস হলে ভাড়া নিবে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর নন এসি বাস হলে ভাড়া নিবে ৮০০ টাকা। যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। সরাসরি কাউন্টারে গিয়ে অথবা অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে এইসব বাসের টিকেট কাটা যায়।
সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা ব্রিজের উপর থেকে বাইক ভাড়া করে চলে যাবেন নীলাদ্রি লেক। এক বাইকে ২ জন বসা যায়। ভাড়া নিবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ফিরার পথে ঐখান থেকে আবার বাইক নিয়ে নিবেন। তবে সব থেকে ভালো হয় সারাদিনের জন্য বাইক ভাড়া করে নেয়া। সেক্ষেত্রে খরচ পরবে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। নীলাদ্রি লেকের আসে পাশে বেশ কয়েকটা ট্যুরিস্ট স্পট আছে। ইচ্ছে করলে সব গুলো একসাথে ঘুরে দেখতে পারেন। বাইক ভাড়া করার সময় সেভাবে কথা বলে নিবেন।
সিলেট শহর থেকে সুনামগঞ্জ এসে সেখান থেকেও নীলাদ্রি লেক আসা যায়। অন্য দিকে নেত্রকোনা থেকে নীলাদ্রি লেক আসা যায়। সেক্ষেত্রে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে অটোরিকশা নিয়ে প্রথমে মধ্যনগর আসতে হবে। মধ্যনগর থেকে বর্ষাকালে টেকের ঘাট যাওয়ার নৌকা, ট্রলার এবং স্পিড বোট পাওয়া যায়। শুকনা মৌসুমে বাইক ভাড়া করে টেকের ঘাট আসা যায়। তবে এই রুটে সময় এবং খরচ একটু বেশি হয়। তাই সুনামগঞ্জ হয়ে নীলাদ্রি লেক আসা সব থেকে ভালো।
নীলাদ্রি লেক কখন যাবেন
নীলাদ্রি লেক যেকোনো সময় আসা যায়। তবে সব থেকে ভালো হয়ে বর্ষাকালে আসলে। কেননা বর্ষাকাল হচ্ছে হাওর ভ্রমণের সব থেকে উত্তম সময়। তাই জুলাই থেকে অক্টোবর যেকোনো দিন চলে আসতে পারেন এখানে। তবে পাখি প্রেমী হলে শীতকালে আসতে পারেন। তখন এই দিকে অনেক পাখি দেখা যায়।
কোথায় খাবেন
নীলাদ্রি লেকের পাশে কিছু ছোট ছোট দোকান আছে। দোকানে আইসক্রিম, পানি, সফ্ট ড্রিঙ্কস, বিস্কিট ইত্যাদি নানা খাবার পাওয়া যায়। বড়ছড়া বাজার এবং টেকেরঘাট বাজারে মোটামোটি মানের কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
বড়ছড়া বাজারে কিছু গেস্ট হাউজ আছে। সেখানে থাকতে পারেন। তাহিরপুর বাজারেও থাকার ব্যবস্থা আছে। নীলাদ্রি লেকের পাশে পুরাতন চুনা পাথরের কারখানার গেস্ট হাউজ আছে। এখানেও থাকতে পারেন। তবে এর জন্য আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো। কেননা এই গেস্ট হাউজ সব সময় ফাঁকা থাকে না।
পরামর্শ
- লেকের পানিতে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
- লেক ভালো গভীর। তাই সাঁতার না জানলে পানিতে নামবেন না।
- নৌকা দিয়ে ঘুরা বা কায়াকিং এর সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করুন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।