শ্রীমঙ্গলের সবুজে ঘেরা অপরূপ এক প্রান্তর নুরজাহান চা বাগান বা নুরজাহান টি গার্ডেন (noor jahan tea garden)। মোঘল সম্রাজ্ঞী নুরজাহান বেগমের নামানুসারে এই চা বাগানের নামকরণ করা হয়েছে। এ যেন ইতিহাস আর প্রকৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন। যতদূর চোখ যায়, কেবল সবুজে ঢাকা ঢেউ খেলানো চা গাছের সারি। নিরিবিলি পরিবেশ, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য—সব মিলিয়ে নুরজাহান চা বাগান নিঃসন্দেহে বর্তমানে শ্রীমঙ্গলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান।
নুরজাহান টি গার্ডেন কোথায় অবস্থিত
নুরজাহান টি গার্ডেন বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে নূরজাহান টি এস্টেট এর অবস্থান। এই টি এস্টে নূরজাহান টি গার্ডেন বা নূরজাহান চা বাগান নামে পরিচিত। এটি শ্রীমঙ্গলের অন্যতম বৃহত্তম চা বাগান। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান রয়েছে। এজন্যই শ্রীমঙ্গলকে সবাই বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী বলে। এখানে সারি সারি চা বাগান ছাড়াও ছোট একটি সুন্দর লেক এবং চা মিউজিয়াম আছে।
নুরজাহান টি গার্ডেন কিভাবে যাবেন
নুরজাহান টি গার্ডেন যেতে হলে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। ঢাকা থেকে বাস এবং ট্রেনে শ্রীমঙ্গল শহরে আসা যায়। ঢাকার সায়দাবাদ, ফকিরাপুল, আরামবাগ, পান্থপথ, উত্তরা থেকে হানিফ, শ্যামলী, এনা ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানীর এসি/নন এসি বাস আসে শ্রীমঙ্গল। ভাড়া ৫৭০ থেকে ৮০০ টাকা। সময় নিবে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা।
এছাড়াও, সিলেটগামী ট্রেনে চড়ে সহজেই শ্রীমঙ্গল আসা যায়। এতে সময় লাগে প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘণ্টা। ট্রেনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির টিকিট পাওয়া যায়, যার ভাড়া ২৭৫ থেকে ৯৩৫ টাকা পর্যন্ত। তবে ট্রেনের টিকিট অনেক সময় পাওয়া একটু কঠিন হতে পারে। তাই ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে অগ্রিম টিকিট কেটে নেওয়াই উত্তম। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে টিকিট কাটা যায়। যদি ফেরার পথেও ট্রেনে আসার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে সেই টিকিটটিও আগেভাগে কেটে রাখা ভালো।
টিকেটের মূল্য
নুরজাহান টি গার্ডেনে প্রবেশ করতে আপাদত কোনো টিকেট লাগে না। গাড়ি নিয়ে সহজেই ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন।
কোথায় খাবেন
নূরজাহান টি গার্ডেনের ভেতরে খাবারের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই প্রয়োজনে সঙ্গে হালকা খাবার—যেমন পানি, জুস, চিপস বা বিস্কিট নিয়ে যেতে পারেন। তবে ভারী খাবার খেতে চাইলে শ্রীমঙ্গল শহরে ফিরে আসতে হবে। এছাড়া শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন স্থানে আনারসের ফ্রেশ জুস পাওয়া যায়, যা খুবই সুস্বাদু। সম্ভব হলে অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।
কোথায় থাকবেন
শ্রীমঙ্গল শহরে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। প্রতিটির ভাড়া ও সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন। তাই নিজের বাজেট অনুযায়ী উপযুক্ত জায়গা বেছে নিতে পারেন। তবে চেষ্টা করবেন চা-বাগান সংলগ্ন ইকো রিসোর্টগুলোতে থাকতে। এসব রিসোর্টে রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই অসাধারণ। যদি পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে থাকেন, তাহলে নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই উত্তম। আপনার বাজেট বেশি হলে ফাইভ স্টার হোটেল গ্রান্ড সুলতানে থাকতে পারেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।