![পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার](https://trippainter.com/wp-content/uploads/2020/10/paharpur-buddhist-vihara-1024x576.jpg)
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (Paharpur Buddhist Vihara) বা সোমপুর বিহার (Sompur Vihar) বা সোমপুর মহাবিহার, প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত এক প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৯ সালে এটি আবিষ্কার করেন। একে পৃথিবীর সব থেকে বড় বৌদ্ধবিহার মনে করা হয়। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। এটি সুন্দরবন এবং ষাট গম্বুজ মসজিদ এর পর ইউনেস্কো ঘোষিত বাংলাদেশের তিনটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মধ্যে একটি।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
এই বিহার পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট, উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট লম্বা। এখানকার ১৭৭ টি ঘরে বৌদ্ধ ভুক্ষুকেরা এক সময় বসবাস করতো। বিহারের ঠিক মাঝ খানে আছে একটি মন্দির। মন্দিরের দৈর্ঘ ৪০০ ফুট, প্রস্থ ৩৫০ ফুট, উচ্চতা ৭০ ফুট। মন্দিরের বাহিরের দেয়ালে বুদ্ধ ও হিন্দু দেবীদের মূর্তি এবং পোড়া মাটির বেশ কিছু ফলক আছে। এই বিহারে মূল বেস্টনী প্রায় ২০ ফুট চওড়া। বেষ্টনীর ভিতরে আরেকটি মন্দির আছে।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এর ইতিহাস
প্রাচীন বঙ্গ জনপদে পাল বংশ সুদীর্ঘ চার শতক রাজত্ব করেছেন। তারা বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছিলেন। পাল রাজ্য বাংলা, বিহার সহ পাকিস্তানের খায়বার-পাখতুনখওয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ধারণা করা হয় পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার নির্মাণ করেন। তবে বিখ্যাত তিব্বতীয় ইতিহাস গ্রন্থ “পাগ সাম জোন ঝাং” এর বর্ণনা অনুযায়ী ধর্মপালের পুত্র দেবপাল (৮১০-৮৫০) এটি নির্মাণ করেন।
এই বিহার প্রায় ৩০০ বছর বৌদ্ধদের বিখ্যাত ধর্ম শিক্ষাদান কেন্দ্র ছিল। উপমহাদেশ ছাড়াও চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের বৌদ্ধরা এখানে ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন।
এই মন্দিরের চূড়া যুগের আবর্তনে ভেঙ্গে পড়ে। তার উপরে ঘাস জন্মে ক্রমে ক্রমে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে শেষে তার উপরে একটি বিরাট বটগাছ জন্মে। ফলে মানুষ মনে করতো এটা পাহাড়। আর তাই এককালে মানুষ এই স্থানের নাম দিয়েছিল পাহাড়পুর। তবে এখানে কোনো পাহাড় নেই।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কোথায় অবস্থিত
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ০.১০ বর্গ কিলোমিটার (১০ হেক্টর) অঞ্চল জুড়ে এর অবস্থান। ঢাকা থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব প্রায় ২৮২ কিলোমিটার।
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কিভাবে যাবেন
বৌদ্ধ বিহার বিভিন্ন ভাবে যাওয়া যায়। দেশের যেকোন জায়গা থেকে প্রথমে নওগাঁ জেলা শহরে এসে, বালুডাংগা বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে চলে আসতে পারেন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। এই পথের দূরত্ব প্রায় ৩২কিলোমিটার।
অথবা জয়পুরহাট জেলা শহরে এসে বাস অথবা অটোরিক্সা নিয়ে চলে আসতে বৌদ্ধ বিহার। এই পথের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। চাইলে ট্রেনে এসে জয়পুরহাটের জামালঞ্জ ষ্টেশনে নেমে সহজেই চলে আসতে পারেন পাহাড়পুর। এই পথের দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন
পাহাড়পুর বিহারের কাছেই প্রত্নতাত্ত্বিক রেস্ট হাউস আছে। এখানে থাকতে পারেন। অথবা নওগাঁ শহরে এসে থাকতে পারেন। তবে সারাদিন ঘুরে রাতের গাড়িতে আবার চলে আসতে পারেন। নিচে কিছু হোটেলের নাম দেয়া হলো।
- পাহাড়পুর প্রত্নতত্ত্ব রেস্ট হাউস, পাহাড়পুর। ফোন নাম্বার +৮৮০৫৭১ ৮৯১১৯
- আফসার রেস্ট হাউস সদর হাসপাতাল রোড, নওগাঁ
- হোটেল আগমনী অবস্থান: মুক্তির মোড়, নওগাঁ
- হোটেল অবকাশ অবস্থান: শান্তাহার রোড নওগাঁ
সময় সূচি
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের পাশেই গড়ে উঠেছে প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর। পাহাড়পুর এবং আসে পাশের আর্কিওলজিকাল সাইট থেকে সংগ্রহ করা পুরাকীর্তি এখানে রাখা আছে। শনি ও রবিবার মিউজিয়ামের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এছাড়া সরকার ঘোষিত যেকোন ছুটির দিনে এটি বন্ধ থাকে।
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর
সোম থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০:০০ থেকে বিকেল ৬:০০ পর্যন্ত। মাঝখানে দুপুরের খাবাবের বিরতি (দুপুর ১:০০ থেকে দুপুর ২:০০ পর্যন্ত)। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। দুপুরের খাবার ও জুম্মার নামাজের বিরতি (দুপুর ১২:৩০ থেকে দুপুর ২:৩০)।
অক্টোবর থেকে মার্চ
সোম থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। মাঝখানে দুপুরের খাবাবের বিরতি (দুপুর ১:০০ থেকে দুপুর ২:০০ পর্যন্ত)। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা। দুপুরের খাবার ও জুম্মার নামাজের বিরতি (দুপুর ১২:৩০ থেকে দুপুর ২:৩০)।
রমজানে সময়সুচি
এটি শুক্রবার ব্যতীত বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০:০০ থেকে বিকেল ৪:০০ পর্যন্ত খোলা থাকবে।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।