পারো (Paro) ভুটানের একটি শহর যা পারো উপত্যকায় অবস্থিত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ৭২০০ ফিট। পারো একটি ঐতিহাসিক শহর। এখানে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন পবিত্র স্থান এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। তবে পারোর সব থেকে বড় আকর্ষণ টাইগার নেস্ট। এই শহরেই ভূটানের একমাত্র বিমানবন্দর পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত।
পারো শহর এর দর্শনীয় স্থান
পারো শহর বেশ পুরানো এবং জনপ্রিয়। এর উল্লেখ যোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো: টাইগার নেস্ট, পারো এয়ারপোর্ট, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, আপেল বাগান ইত্যাদি।
টাইগার নেস্ট
টাইগার নেস্ট হলো পারো শহরের প্রধান আকর্ষণ। নামের সাথে টাইগার থাকলেও এখানে কিন্তু বাঘ নাই। এটি আসলে পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত, ৪০০ বছরের পুরানো এক মনেস্ট্রি। জায়গাটির নামকরণ নিয়ে নানান গল্প প্রচলিত আছে। এখানে উঠতে হলে আপনাকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হবে। পারো এসে টাইগার নেস্টে না গেলে ট্যুর অসমাপ্ত থেকে যায়। তাই সাহস করে উঠে পড়ুন।
পারো এয়ারপোর্ট
পারো এয়ারপোর্ট (Paro Airport) ভুটানের একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট। ভুটানে আরো চারটি এয়ারপোর্ট থাকলেও এটাই একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট। এটি পারো শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে পারো নদী বা পারো চো এর তীরে অবস্থিত। এর আশেপাশের পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ১৮০০০ ফুট।
এটিকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক এয়ারপোর্ট গুলোর মাঝে একটি। এর রানওয়ের দৈঘ্য মাত্র ১৯৮০ মিটার। উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে এসে কিছুটা হালকা বাঁকা হয়ে প্লেন গুলোকে এখানে ল্যান্ড করতে হয়। তাই খুব কম পাইলটের এখানে প্লেন চালানোর অনুমতি আছে।
এটিকে ১৯৮৩ সালে একটি সামরিক হেলিপ্যাড থেকে এয়ারপোর্টে পরিণত করা হয়েছে। এখানে দিনের আলো ছাড়া অন্য সময়, যে কোনো ধরনের উড্ডয়ন অবতরণ নিষিদ্ধ। ভুটানে এমনিতেই সমতল জায়গা খুব একটা নাই। পারো শহরই তুলামূলক ভাবে সমতল। তাই এখানেই তাদের একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট বানানো হয়েছে। দুর্গম হলেও এটাই ভুটানের আন্তর্জাতিক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এতকিছুর পরও এটি অ্যাডভেঞ্জার প্রিয়দের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ন্যাশনাল মিউজিয়াম
ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ভুটান (National Museum of Bhutan) ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি এক পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। এখানে এক সাথে ভুটানের সব সংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখা যায়। এটি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মিউজিয়ামে ঢুকতে হলে টিকেট কাটা লাগে। দাম ভুটানিজদের জন্য ১০ রুপী, সার্কভুক্ত দেশের লোকের জন্য ২৫ রুপী, অন্যদের দেশের লোকের জন্য ১৫০ রুপী। এর আসে পাশের সৌন্দর্য অনেক চমৎকার।
পারো শহর কিভাবে যাবেন
পারো আকাশ পথে এবং সড়ক পথে, দুই ভাবেই আসা যায়। যদি প্লেনে আসেন তাহলে, প্লেন আপনাকে পারো শহরেই নামিয়ে দিবে। আর যদি সড়ক পথে আসেন তাহলে, জয়গাঁ/ফুন্টশোলিং বর্ডার দিয়ে প্রথমে ফুন্টশোলিং শহরে আসবেন। পরে ফুন্টশোলিং থেকে ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাবেন পারো শহর।
পারো শহর এর কোথায় থাকবেন
পারো শহরে বিভিন্ন ধরণের, মানের হোটেল রয়েছে। আপনার বাজেট এবং চাহিদা অনুসারে দরদাম করে যে কোনো একটা ঠিক করে নিন। ৮০০/১৫০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের হোটেল পাবেন। তবে গিজার আর ইন্টারনেট আছে কিনা দেখে নিবেন। ইন্ডিয়ান মালিকানার ড্রাগন হোটেল নিতে পারেন। এদের হোটেলের নিচে রেস্টুরেন্টও আছে। আর খাবারের মান বেশ ভালো। মনে রাখবেন এখানে সব দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট রাত ৭:৩০ থেকে ৮:৩০ এর মধ্যে বন্ধ হয় যায়। তাই বন্ধ হবার আগেই হোটেল বা রুম ঠিক করে ডিনার না করে নিলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
পারো শহর এর কোথায় খাবেন, কি খাবেন?
এখানে যে হোটেলে উঠেছেন তাদের রেস্টুরেন্ট থাকলে সেখানে খাবার খেয়ে নিতে পারেন। অথবা বাহিরে গিয়ে অন্য রেস্টুরেন্ট এ ও খাবার খেতে পারেন। এখানকার লোকাল খাবার আপনার ভালো না লাগার সম্ভবনা অনেক বেশি। তাই ইন্ডিয়ান পরিচিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভুটানে সব জায়গায় প্রচুর ফ্রেস ফল পাওয়ায় যায়। চেষ্টা করবেন সেগুলা বেশি বেশি খেতে। ফল দামে সস্তা এবং টেস্টি। সকালে বেশ কয়েকটা ডিম খেয়ে নিন। এতে সারাদিন ভালো এনার্জি পাবেন।
লেখক
আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।