ভুটান ভ্রমণ কাহিনী

পারো শহর ভ্রমণ কাহিনী -পর্ব ৬

Loading

পারো শহর ভ্রমণ
পারো এয়ারপোর্ট: নভেম্বর ২৫, দুপুর ২:২৩

পারো (Paro, Bhutan) পারো ভুটানের এক ঐতিহাসিক শহর। এখানে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন পবিত্র স্থান এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। তবে পারোর সব থেকে বড় আকর্ষণ টাইগার নেস্ট। এই শহরেই ভূটানের একমাত্র বিমানবন্দর পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত। চলুন শুনি আমার পারো শহর ভ্রমণ করার কাহিনী।

পারো শহর ভ্রমণ

নভেম্বর ২৫, ২০১৭ পারো, ভুটানে আজ আমাদের চতুর্থ দিন। আজ সকালেই আমরা থিম্পু থেকে পারো তে এসেছি। থিম্পু থেকে আমরা সরাসরি চলে যাই চেলে লা পাস। চেলে লা পাস এ ঘুরাঘুরি শেষ করে আমরা এখন পারো শহরের পথে। চেলে লা পাস যাবার সময় আমরা শুধু উপরের দিকে উঠেছি।

এখন আমরা সেই একই পাহাড়ি রাস্তা ধরে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামছি। একটু পর পর চোখে পড়ছে শিয়াল, হরিণ সহ বিভিন্ন জীবজন্তুর হটাৎ হটাৎ রাস্তা পারাপারের দৃশ্য। ঢাকায় গাড়ি দিয়ে যাবার সময় আচমকা মানুষ বা যানবাহন চলে আসার দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত হলেও জীবজন্তু এই প্রথম দেখলাম। আমরা চমৎকার এক বন্য পরিবেশের ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি । সত্যিই এ অপূর্ব অনুভূতি।

পারো শহর এর দর্শনীয় স্থান

পারো শহর বেশ পুরানো। এখানে আছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। টাইগার নেস্ট, পারো এয়ারপোর্ট, ন্যাশনাল মিউজিয়াম, আপেল বাগান তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

পারো বিমানবন্দর

পারো এয়ারপোর্ট (Paro Airport) ভুটানের একমাত্র আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট । ভুটানে আরো চারটি এয়ারপোর্ট থাকলেও এটাই একমাত্র আন্তর্জাতিক মানের। এখানে প্লেন উঠা নাম করা বেশ বিপদজনক। তাই এটি অ্যাডভেঞ্জার প্রিয় মানুষদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

চেলে লা থেকে আমরা সরাসরি চলে আসি পারো এয়ারপোর্ট এর কাছে। আমরা একটি উঁচু জায়গায় দাড়াই। আমাদের নিচেই এয়ারপোর্ট আর তার পাশে পারো নদী। সেখান থেকে পারো এয়ারপোর্ট দেখতে খবুই সুন্দর। আমরা একটা প্লেন কে দেখলাম সাই করে নেমে, দ্রুতই থেমে যেতে। আমরা কিছুক্ষন সেখানে সময় পার করে সরাসরি চলে যাই আমাদের হোটেলে। পেরোতে আমরা ড্রাগন হোটেলে উঠি। হোটেলে চেক ইন করে ফ্রেস হয়ে নেই।

টাইগার নেস্ট

টাইগার নেস্ট (Tiger’s Nest বা Taktsang) পারো শহরের মূল আকর্ষণ। এটি আসলে প্রায় ৪০০ বছরের পুরানো এক মনেস্ট্রি, যা প্রায় ৯০০ মিটার উচ্চতায় এক পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত। নামের আগে টাইগার থাকলেও সেখানে কিন্তু মোটেও টাইগার দেখা যাবেনা। জায়গাটির নাম কেন টাইগার নেস্ট হলো তা নিয়ে অবশ্য নানান গল্প প্রচলিত আছে।

পারো শহর ভ্রমণ
কালো পাহাড়ে বড় স্থাপনাটিই টাইগার নেস্ট: নভেম্বর ২৫, দুপুর ৩:৩০

টাইগার নেস্ট দেখতে চাইলে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ট্রেকিং করতে হবে। তাই সকাল সকাল রওনা দেয়াই ভাল। আমরাও তাড়াতাড়ি চলে গেলাম টাইগার নেস্ট এর জন্য যেখান থেকে ট্রেকিং শুরু করতে হয় সেখানে। সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে থেকে শুরু হলো পাইনের বন। অপূর্ব সুন্দর এই পাইনের বন।

সেখানে দেখি আরো কিছু লোক। সবাই হাতে লাঠিসোটা নিয়ে ট্রেকিংয়ের জন্য তৈরি। আমরাও লাঠি নিয়ে তৈরি হলাম ট্রেকিংয়ের জন্য। কিন্তু সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আমাদের আর উপরে উঠা হলোনা। কেননা টাইগার নেস্টে যেয়ে আবার সূর্যের আলো শেষ হবার আগেই ফেরত আসতে হয়।

টাইগার নেস্ট
পাইন গাছের ফাঁকে টাইগার নেস্ট: নভেম্বর ২৫, দুপুর ৩:৪৪

টাইগার নেস্ট এ উঠা খুবই জরুরী

ভুটান এসে টাইগার্স নেস্টে না উঠলে ভুটান ট্যুর অসমাপ্ত থেকে যায়। তাই সাহস করে উঠে পড়েন। আমি অনেক বয়ষ্ক পুরুষ এবং মহিলা কে দেখেছি যারা টাইগার্স নেস্ট উঠেছে। নামার পর তাদের অভিজ্ঞতা জিজ্ঞেস করেছিলাম। এক বাক্কে সবাই বলে দারুন। এই টাইগার্স নেস্টে উঠার জন্যই আরেকবার ভুটান যাবার ইচ্ছা আছে।

হাতে সময় না থাকায় আমরা অল্প একটু জায়গা উঠে আবার নেমে আসি। টাইগার্স নেস্টে উঠার জায়গাটাও অনেক সুন্দর। আমরা সেখানে কিছুণ সময় কাটাই, ছবি তুলি, আর যারা নেস্টে উঠে নেমে আসছিল তাদের সাথে কথা বলি। এখানে লোকাল হ্যান্ডিক্রাফট এর এক মার্কেট রয়েছে। সেখান থেকে আমরা কিছু জিনিষপত্র কিনি। এখানকার জিনিষগুলো তুলনামূলক ভাবে একটু সস্তা। তাই এখান থেকে কেনাকাটা করাই ভাল।

পারো শহর ভ্রমণ
ন্যাশনাল মিউজিয়াম: নভেম্বর ২৫, বিকাল ৫:২৩

ন্যাশনাল মিউজিয়াম

এর পর আমরা রওনা দিলাম পেরোতে অবস্থিত ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ভুটানের (National Museum of Bhutan) উদ্দেশে। পাহাড়ি পথে আমাদের গাড়ি চলতে থাকল। পাহাড় থেকে গাড়ি কখনো নিচে নামছে আবার ঘুরতে ঘুরতে ওপরে উঠে যাচ্ছে। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ওয়াংচু নদী।

ওয়াংচু নদীকে সমান্তরালে রেখে বেশ কিছুক্ষণ আমরা এগিয়ে চললাম। এর পরে ব্রীজ দিয়ে নদী অতিক্রম করে আবার ওপরে উঠে গেলাম। ব্রীজের নিচেই ওয়াংচু নদী পারো নদীর সাথে এসে মিশেছে। মিনিট পনেরোর মধ্যে আমরা চলে আসলাম পারোর ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ভুটানের সামনে। মিউজিয়ামটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত।

মিউজিয়ামটি দেখে মনে হলো আমরা কোনো জমিদার বাড়ির সামনে চলে এসেছি। মিউজিয়ামটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে ভুটানের সব সংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখা যাবে। এটি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মিউজিয়ামে ঢুকতে ভুটানিজদের জন্য ১০ রুপী, সার্কভুক্ত দেশের জন্য ২৫ রুপী, অন্যদের জন্য ১৫০ রুপীর টিকেট কাটা লাগে। এর আসে পাশের সৌন্দর্য অনেক সুন্দর।

কেন্ডেলাইট ডিনার

সন্ধ্যার পর আমরা আমাদের হোটেলে চলে আসি। হোটেলে এসে সবার মাথা নষ্ট। আশে পাশের সব ভবনে বিদ্যুৎ আছে, কেবল আমাদের ভবনেই নাই। হোটেল ম্যানেজার বললো মেইন লাইনে প্রব্লেম, সামনের আরো কিছু ভবনেও বিদ্যুৎ নাই। কতৃপক্ষ নাকি কাজ করছে, কিছুক্ষনের ভিতরেই বিদ্যুৎ চলে আসবে।

আমরা মোবাইলের আলোতে রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেই। কিছুক্ষন আর শেষ হয়না। রিয়াজ ভাই তো পারলে ম্যানেজারকে ২-১ টা বসায় দেয়। কি আর করা অন্ধকারের মাঝে আর ভালো লাগছেনা। তাই হোটেলের নিচ তলায় চলে আসি আর মোমবাতির আলোয় রাতের খাবার খেয়ে নেই। অনেকটা কেন্ডেলাইট ডিনারের মতো। আমরা ইন্ডিয়ানা খাবার খাই, দারুন টেস্টি।

রাতের পারো শহর দেখা

এর পর আমরা রাতের পারো শহর দেখার জন্য বের হয়ে যাই। রাতের পারো শহর অনেক সুন্দর। তবে মারাত্মক ঠান্ডা আর বাতাস। থিম্পু থেকে আজ তাপমাত্রা কম, মাইনাস ৩ থেকে ৪ ডিগ্রী হবে। ঠান্ডায় রীতিমতো সবাই কাঁপতেছিলাম।

কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে রুমে চলে আসি। এসে দেখি তখনো বিদ্যুৎ নাই। ওয়াইফাই না থাকায় সেদিন দেশে কারোর সাথে কেউ আর যোগাযোগ করতে পারিনাই। এতে কি ধরণের ঝামেলায় পড়েছিলাম তা পরের পর্বে বলবো। সবাই খবু ক্ষান্ত তাই ঘুমিয়ে পড়ি।

অন্য পর্ব গুলোও দেখে নিতে পারেন। আশাকরি ভালো লাগবে:

সময়ে নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আশা করি খুব উপভোগ করেছেন। আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনার কেমন লাগলো তা কমেন্টস করে জানালে ভালো হয়। আর ভালো লেগে থাকলে ওয়ালে শেয়ার করে বন্ধুদের জানার সুযোগ করে দিন।

4.7 3 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
3 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

3
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx