ভুটানের দর্শনীয় স্থান

পুনাখা শহর, ভুটান

Loading

পুনাখা শহর

পুনাখা ভূটানের একটি শহর এবং পুনাখা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ভুটানের রাজধানী ছিল। থিম্পু থেকে এর দুরুত্ব প্রায় ৭২ কিলোমিটার এবং গাড়ি দিয়ে আসতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টার মতো। এটি সমুদ্রতল থেকে ১৩১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। পুনাখা শহর এ তুলনামূলক ঠান্ডা কম। তাই একসময় শীত কালে নাকি দেশের অন্য জায়গা থেকে লোকজন এখানে চলে আসত। আবার শীত চলে গেলে চলে যেত। এখানে ধান চাষ করা হয়। ধান এখানকার প্রধান ফসল।

পুনাখার শহর এর দর্শনীয় স্থান

পুনাখায় দেখার মতো বেশ কিছু সুন্দর জিনিস রয়েছে, যেমন: পুনাখা জং, সাসপেনশন ব্রিজ, পাহাড়ী নদী, পাথর, প্রায় ১ হাজার ফুট উচ্চতায় খামসুওয়ালে মন্দির, স্থানীয় বাজার ইত্যাদি।

মো চু নদী এবং ফো চু নদী

পুনাখায় দুটি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। একটির নাম মো চু আর অন্যটির নাম ফো চু। ভুটানি ভাষায় চু মনে নদী। ভুটানিরা বলে মো চু হচ্ছে পুরুষ, যার পানি ঘোলা এবং উষ্ণ । আর ফো চু হচ্ছে মেয়ে, যার পানি পরিষ্কার এবং শীতল। পুনাখা জং এর কাছে এসে এরা একসাথে মিলিত হয়েছে। দূর থেকে দুই নদীর সঙ্গমস্থল আর পুনাখা জং এর প্যানারোমা দৃশ্য অসাধারণ।

নদীতে প্রচুর পাথর জমে থাকে। আসার সময় স্মৃতি হিসাবে পাথর নিয়ে আসতে পারেন। ফো চু নদীতে রাফটিং করা যায়। ৬০০০-৭০০০ রুপী নেয় ওরা। রাফটিং এর জন্য যা যা লাগে সব কিছুই তারা দেয়। সময় থাকলে রাফটিং করতে পারেন। অনেক মজার একটা জিনিস। মো চু আর ফো চু নদী কিন্তু শেষে এসে আমাদের বাংলাদেশে মিশেছে।

পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজ

পুনাখা সাসপেনশন ব্রিজ ভূটানের সব থেকে বড় সাসপেনশন ব্রিজ, যার দৈর্ঘ প্রায় ৩৫০ মিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১২২৩ মিটার বা ৪০১২ ফুট। এটি ফো চু নদীর উপর নির্মিত। পুনাখা জং থেকে ২০ মিনিট হাঁটলেই এই ব্রিজ। এই ব্রিজটি মূলত পুনাখা শহরবাসীর সহজে ও শর্টকার্টে পুনাখা জং এ আসার জন্য বানানো হয়েছিল। ব্রিজের উপর থেকে আশেপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দেখেত খুবই চমৎকার।

পুনাখা জং

পুনাখা জং বা পুনাখা ডিজং পুনাখা শহরের একটি প্রাচীন প্রাসাদ। এর আরেক নাম পরম সুখময় প্রাসাদ। প্রাসাদটি ১৬৩৭-১৬৩৮ সালে যাবদ্রারং রিনপোছে নির্মাণ করেন। এর স্থপতি ছিলেন নাগাওয়াং নামগিয়াল। এটি জং স্থাপত্যশিল্পের দ্বিতীয় পুরাণতম এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাসাদ। ইউনেস্কো এটাকে ভুটানের ঐতিহ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এখানে ১৯০৭ সালে ভুটানের প্রথম রাজা হিসেবে উগয়েন ওয়াংচুক এর অভিষেক হয়েছিল।

এটি ভূটানের দ্বিতীয় প্রাচীন, দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সবচেয়ে সুন্দর প্রাসাদ। ১৯৫৫ সালে রাজধানী থিম্পুতে স্হানান্তরিত হবার আগ পর্যন্ত এটাই ছিলো ভূটানের রাজধানী তথা প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র। এখানেই তারা তিব্বতীয়দের যুদ্ধে পরাজিত করে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এটি আগুনে ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে যাতায়াতের জন্য মো নদী উপরে রয়েছে একটি কাঠের সেতু। এখন অবশ্য এখানে রাজ্ পরিবারের সন্তানদের নাম রাখার অনুষ্ঠান হয়।

এতো বড় প্রশাসনিক কেন্দ্র হলেও এটি কিন্তু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। টিকেট কেটে যে কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। পুনাখা জং এ ঢুকতে ৩০০ রুপী লাগে। আর এটি দুপুর ১:৩০ থেকে ২:৩০ পর্যন্ত দুপুরের খাবারের জন্য বন্ধ থাকে। ভিতরটা অনেক সুন্দর। আপনারা কিন্তু অবশ্যই পুনাখা জং দেখে আসবেন।

পুনাখা শহর কিভাবে যাবেন?

পুনাখা যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে আসতে হবে ভুটানের রাজধানী থিম্পু। থিম্পু এসে পুনাখা যাবার পারমিশন নিতে হবে। কেননা ভুটানের বিভিন্ন শহরে প্রবেশ করার জন্য আলাদা করে পারমিশন নিতে হয়। তার পর থিম্পু থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে যাবেন পুনাখা। যাবার পথে দোচুলা পাস্ দেখে যাবেন।

পুনাখা শহর এ কোথায় থাকবেন

পুনাখা শহরে বিভিন্ন ধরণের, মানের হোটেল রয়েছে। আপনার বাজেট অনুসারে দরদাম করে একটা ঠিক করে নিন। ৮০০/১৫০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের হোটেল পাবেন। তবে এখানকার হোটেল গুলো একটু ছোট ছোট। গিজার আর ইন্টারনেট আছে কিনা দেখে নিবেন। অথবা থিম্পু ফেরত এসে থাকতে পারেন। মনে রাখবেন ভুটানে দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট সব কিছুই রাত ৭:৩০ থেকে ৮:৩০ এর মধ্যে বন্ধ হয় যায় । তাই হোটেল বা রুম ঠিক না করলে আর ডিনার না করে নিলে ঝামেলায় পড়তে পারেন।

পুনাখা শহর এ কোথায় খাবেন, কি খাবেন?

আপনে যে হোটেলে উঠেছেন তাদের রেস্টুরেন্ট থাকলে সেখানে খাবার খেয়ে নিতে পারেন। অথবা বাহিরে গিয়ে অন্য রেস্টুরেন্ট এ ও খেতে পারেন। ভুটানের স্থানীয় খাবার আপনার ভালো না লাগার সম্ভবনা বেশি। তাই ইন্ডিয়ান পরিচিত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভুটানে প্রচুর ফ্রেস ফল পাওয়ায় যায়। চেষ্টা করবেন সেগুলা বেশি বেশি খেতে। সকালে কয়েকটা করে ডিম খেয়ে নিন। এতে সারাদিনের জন্য ভালো এনার্জি পাবেন।

4.7 3 ভোট
রেটিং

লেখক

Rashedul Alam; Rasadul Alam; founder of cybarlab.com; founder of trippainter.com; trippainter.com; cybarlab.com; Bangladeshi travel blogger; Bangladeshi blogger; Bangladeshi software engineer

আমি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলেও ঘুরে বেড়াতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা কে এই ওয়েব সাইটে নিয়মিত শেয়ার করি।

Subscribe
Notify of
2 মন্তব্য
Inline Feedbacks
সব মন্তব্য দেখুন

''

2
0
আমরা আপনার অভিমত আশা করি, দয়াকরে মন্তব্য করুনx